সন্দীপ সাহা। —নিজস্ব চিত্র।
ঘনঘন বেজে উঠছে ফোন। ফোনের ও প্রান্ত থেকে একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে একটাই প্রশ্ন, “বাবু কেমন আছে?” সময় যত গড়াচ্ছে আক্রান্ত পুলিশকর্মীর সংখ্যাও তত বাড়ছে সন্দেশখালিতে। তার সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্ত পুলিশকর্মীর পরিবারদের আতঙ্ক। সোমবার রাত ১১টার পরে শীতলিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। সেখানে পুলিশকর্মীদের মারধর করা হয়। সন্দীপ সাহা নামে এক পুলিশকর্মীকে লাঠি এবং রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই কনস্টেবলকে প্রথমে সন্দেশখালির খুলনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে খবর, সেখানে কনস্টেবলের অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছিল। তাই ঝুঁকি না নিয়ে তড়িঘড়ি আহত কনস্টেবল সন্দীপকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় জড়িত তিন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।
সন্দীপের বাড়ি তেহট্ট থানার বেতাই গ্রামে। তাঁর গুরুতর জখমের খবর পেয়ে তাঁর স্ত্রী রুমকি সাহা কলকাতায় চলে আসেন। সন্দীপের মা গৌরী সাহা একা বাড়িতেই ছিলেন। ছেলের জখমের খবর শুনে তিনিও ভেঙে পড়েছেন বলে খবর। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তেহট্ট থানার বেতাই গ্রামের সন্দীপ বছর বারো আগে পুলিশে চাকরি পান। তার পর বিভিন্ন থানা ঘুরে সন্দেশখালিতে তাঁর পোস্টিং হয়। সেখানে ক্যাম্পে তাঁর ডিউটি ছিল সোমবার। সেখানেই রাতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। সন্দীপ বছর পাঁচেক আগে বিয়ে করেন। তাঁর একটি তিন বছরের বাচ্চা আছে।
সন্দীপের মা গৌরী বলেন, “খবর পাওয়ার পর বৌমা কলকাতায় ছুটে গিয়েছে। আমি প্রতি মুহূর্তে ফোন করে খবর নিচ্ছি। তবুও দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাবুর জন্য। ওর অপারেশন হবে মাথায়।” জানা গিয়েছে, দুই রাজনৈতিক দলের ঝামেলা থামাতে গিয়ে রোষের মুখে পড়েন সন্দীপ। রাতে যখন সন্দীপ ঘুমোচ্ছিলেন সেই সময় কয়েক জন দুষ্কৃতী এসে তাঁকে আক্রমণ করে। তাঁর মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়। ওই অবস্থায় তাঁর সহকর্মী পবিত্রকে ফোন করেন সন্দীপ। এর পর আর তাঁর জ্ঞান ছিল না। সন্দীপের মায়ের সংযোজন, “পবিত্র থানায় ফোন করে গাড়ি আনিয়ে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সবার কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করব, এই রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ হোক। এতে কারও লাভ হয় না।”