ছেলে প্রসেনজিতের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় মা। —নিজস্ব চিত্র।
সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের জলসীমানা অতিক্রম করার অভিযোগে সম্প্রতি কয়েক দফায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৯৫ জন মৎস্যজীবীকে গ্রেফতার করেছে সে দেশের প্রশাসন। বর্তমানে সেখানেই জেলবন্দি সকলে। এ দিকে, উদ্বেগে দিন কাটছে পরিবারের। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ধৃত মৎস্যজীবীদের কী ভাবে রাখা হয়েছে, তা ভেবে আতঙ্কিত অনেকেই।
বাংলাদেশের জেলে রয়েছেন কাকদ্বীপ অক্ষয়নগর এলাকার বাসিন্দা অভিজিৎ দাস। সাত বছর ধরে মাছ ধরতে যান তিনি। সম্প্রতি ‘এফবি-ঝড়’ নামে একটি ট্রলার ১৬ জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে কাকদ্বীপ থেকে রওনা দিয়েছিল। ওই দলে ছিলেন অভিজিৎ। ধরা পড়েছেন বাংলাদেশ উপকূল রক্ষীদের হাতে। তাঁর জন্য চিন্তিত পরিবারের লোকজন। অভিজিতের বাবা সুমন্ত বলেন, “ছেলে কেমন আছে জানি না। যোগাযোগের চেষ্টা করেও পারিনি। ছেলে যেন সুস্থ ভাবে বাড়ি ফেরে, সরকারের কাছে এই অনুরোধ করছি।”
অন্য একটি ট্রলারে মাছ ধরতে গিয়ে বন্দি হন কাকদ্বীপের ত্রিলোকচন্দ্রপুরের বাসিন্দা সাগর যাদব। বাড়িতে বিধবা মা। বছরখানেক আগে বাবা মারা গিয়েছেন। তারপরে সাগরই সংসারের তুলে নেন। মা অনিমা বলেন, “অভাবের সংসারে ঠিক মতো খাবার জোটে না। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্যই মাছ ধরার কাজে দিয়েছিল। শুনেছি, বাংলাদেশের জেলে আছে। কেমন আছে, কবে ফিরবে— কিছুই জানি না। এ দিকে, সংসার চলে না। প্রতিবেশীরা মাঝে মধ্যে খেতে দেন। তাতেই কোনও রকমে চলছে।”
একই অবস্থা সুরজিৎ দাস, কার্তিক দাস, প্রসেনজিৎ দাসের পরিবারের। তাঁদের দাবি, সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখুক। দ্রুত বাংলাদেশ থেকে সকলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুক।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “জেলবন্দি মৎস্যজীবী পরিবারগুলিকে ট্রলার মালিকেরা সাহায্য করছেন। ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি প্রতিনিয়ত।”
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে মৎস্যজীবীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য। পরিবারগুলিকে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করার উদ্যোগ করা হচ্ছে।”