উদ্ধার হওয়া চোরাই পাইপ। গোপালনগরে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
মাথায় হলুদ হেলমেট। গায়ে জ্যাকেট। সাজগোজ অবিকল জল প্রকল্পে পাইপ লাইন বসানোর কাজে যুক্ত শ্রমিকদের মতো।
কিন্তু সবটাই ভাঁওতা! এই ছদ্মবেশের আড়ালে দীর্ঘ দিন ধরে পাইপ চুরি করছিল একটি চক্র। গোপালনগর থানার পুলিশের হাতে পড়েছে চক্রের এক পান্ডা-সহ ৯ জন। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে ১৬ নম্বর রেলগেট এলাকায় পাইপ চুরি করতে এসেছিল কয়েক জন। একটি দশ চাকার ট্রাকে চলছিল পাইপ পাচার। রাতে পুলিশের টহলদারি চলছিল এলাকায়। চোরেদের দেখে সন্দেহ হয়নি পুলিশেরও। কিন্তুপুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যায় চোরেরাই। তারা পালানোর চেষ্টা করতেই সন্দেহ হয় পুলিশের। পাকড়াও করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই চুরির বিষয়টি খোলসা হয়। ধৃতদের কাছ থেকে একটি ১০ চাকার ট্রাক ও একটি গাড়ি উদ্ধার হয়েছে।
সোমবার ধৃতদের বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ৪ জনকে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি ৫ জনকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ হেফাজতে থাকা ৪ জনের নাম শাহরুখ আহমেদ মণ্ডল, সুব্রত সরকার, অনুপম বিশ্বাস ও বিধান মুন্ডা। শাহরুখ ওই চক্রের পান্ডা। তার বাড়ি নদিয়া জেলার চাকদহ এলাকায়।
বনগাঁর এসডিপিও অর্ক পাঁজা মঙ্গলবার সকালে গোপালনগর থানায় সাংবাদিক বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে গোপালনগর থানার কামদেবপুর এলাকা থেকে ৮০টি পাইপ চুরি হয়েছিল। ধৃতদের জেরা করে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩০টি পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, পাথরপ্রতিমা, মাটিয়া, হাওড়া, হুগলি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন থানা এলাকায় একই কায়দায় চলছিল পাইপ চুরি। চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে সক্রিয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, চক্রের আরও কয়েক জন মাথা আছে। ধৃতদের জেরা করে তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে।
কী ভাবে কাজ করে চক্রটি?
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চক্রের পান্ডারা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাদের বলা হত, সরকারি জল প্রকল্পে কাজ করতে হবে। কাজ বলতে, পাইপ ট্রাকে তোলা। এই কাজের জন্য মাথা পিছু ৫০০ টাকা দেওয়া হত। শ্রমিকদের হেলমেট ও জ্যাকেট দেওয়া হত। ওঁরা বুঝতেও পারতেন না তাঁদের দিয়ে পাইপ চুরি করানো হচ্ছে। গোপালনগরে গ্রেফতার হওয়া ৯ জনের মধ্যে ৫ জনই শ্রমিক। তাঁরা চুরির বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছেন। পুলিশ সে দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কামদেবপুর এলাকায় জল প্রকল্পের জন্য রাস্তার পাশে বড় বড় পাইপ রাখা হয়েছিল। সেখানে শ্রমিকেরা হেলমেট ও জ্যাকেট পরে কাজ করছিলেন। গ্রামবাসীরা জানান, এক দিন রাতে একটি বড় ট্রাক আসে। সঙ্গে একটি গাড়ি। ভিতরে ছিলেন ধোপদুরস্ত পোশাক পরা লোকজন। তাঁরা নিজেদের অফিসার বলে পরিচয় দেন। এলাকার মানুষ শ্রমিকদের বড় ট্রাকে পাইপ তুলতে দেখেন। প্রকল্পের কাজ চলছে ভেবে তাঁদের কোনও সন্দেহও হয়নি। পরে জানা যায়, ওই পাইপগুলি চুরি হয়ে গিয়েছে।