—প্রতীকী চিত্র।
প্রকাশ্য রাস্তায় এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তান ও এক আত্মীয়া। সোমবার সকালে নৈহাটির সাহেব কলোনি মোড়ে এই ঘটনায় হতবাক স্থানীয় লোকজন।
পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহতের নাম সুপ্রভাত দাস ওরফে বাপি (৪৪)। তাঁর বাড়ি নৈহাটির চার নম্বর বিজয়নগরে। সুপ্রভাত স্থানীয় একটি চটকলে কাজ করার পাশাপাশি টোটো চালাতেন। বনিবনা না হওয়ায় তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা আলাদা থাকছিলেন বছরকয়েক ধরে। বাপি থাকতেন ছেলে রোহন ওরফে বাবন এবং মেয়ে রিনিকে নিয়ে। কিন্তু সন্তানদের সঙ্গেও বিশেষ বনিবনা ছিল না তাঁর। প্রতিবেশীরা জানান, রবিবার বাড়ি ফিরে ঘরের মধ্যে মেয়ের সঙ্গে কয়েক জন যুবককে দেখতে পেয়ে বিরক্ত হন বাপি। এ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি বেধে যায় তাঁর। অভিযোগ, এরই মধ্যে মেয়ে বাবার উপরে চড়াও হন। সেই সময়ে ছেলে রোহন ঘরে ঢুকলে তাঁর সঙ্গেও বচসা বাধে বাপির। রোহনও টোটো চালান। বাবার সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন ভাই-বোন। অল্পবিস্তর জখমও হন তাঁরা। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাঁদের থামান।
বাপি রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে রাতেই দুই ভাই-বোন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে যান। অশান্তির কথা জানতে পেরে সোমবার ভোরে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান সন্ধ্যা। বাপির ধারণা হয়, তাঁর উপরে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করবেন স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে। টোটো নিয়ে বেরিয়ে সাহেব কলোনি মোড়ের স্ট্যান্ডে যান তিনি। সেখানে রোহনও তাঁর টোটো নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দু’পক্ষের মধ্যে ফের বচসা বাধে। হাতাহাতি শুরু হলে ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে এক আত্মীয়াও বাপির উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। দুর্গাপুজোর তোরণ তৈরির জন্য রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বাঁশ দিয়ে বাপির মাথায় মারা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বাপি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে গেলে অভিযুক্তেরা তাঁকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকেন বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, টোটোচালক রাজু সাহা বলেন, ‘‘বাপি দিনে টোটো চালাতেন। বিকেলে চটকলে কাজ করতেন। সোমবার বাপি টোটো নিয়ে স্ট্যান্ডে এসে চিৎকার শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর উদ্দেশে। তখন স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং আর এক জন মহিলা মিলে ওঁকে মারতে শুরু করেন। বাঁশ দিয়ে মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়। স্ট্যান্ডে আমি তখন একা। ওঁদের ঠেকাতে গিয়ে আমিও মার খাই। তার পরে সবাইকে ডাকি।’’ ওই স্ট্যান্ডের অন্য টোটোচালকেরা এবং স্থানীয় কয়েক জন মিলে গুরুতর জখম বাপিকে প্রথমে নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা বাপিকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাপির প্রতিবেশী তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি মাত্রা ছাড়িয়েছিল। বাপি স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও ছেলে-মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ওঁর স্ত্রীর।’’ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নিহতের বোনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে। দেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে।’’