আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।
গণনা শেষের পরও অশান্তি জারি ভাঙড়ে। বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের চালতাবেড়িয়ায় বোমা ফেটে আহত হলেন চার জন। এঁদের মধ্যে দু’জন নাবালক। একজনের বয়স ১৯ এবং একজন ৩৩ বছর বয়সি যুবক। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রত্যেকেই আইএসএফ সমর্থক।
ভাঙড়ে আইএসএফের শক্ত ঘাঁটি চালতাবেড়িয়া। পঞ্চায়েত ভোটে ওই এলাকায় সামান্য ব্যবধানে আইএসএফকে পিছনে ফেলে জিতেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার বিকেলেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ফলাফল। তার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে নতুন করে অশান্তি শুরু হয় ভাঙড়ে। গণনা কেন্দ্রের সামনে বোমাবাজি এবং গুলির লড়াই হয়। মৃত্যু হয় তিন জনের। শেষ পর্যন্ত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়। কিন্তু তার পরও অশান্তি এড়ানো গেল না।
বৃহস্পতিবার চালতাবেড়িয়ার খাস আইএসএফের ঘাঁটিতেই দিন দুপুরে বোমা ফেটে আহত হলেন আইএসএফের চার সমর্থক। এঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে।
আহতদের নাম ইমরান মোল্লা (১৬), ইনজামুল মোল্লা (১৭), সাকির হোসেন মোল্লা (১৯) এবং রাফিক মোল্লা (৩৩)। এঁরা প্রত্যেকেই একই পরিবারের সদস্য। বাড়ি চালতাবেড়িয়ার চকমরিচা গ্রামে। চার জনই টাকার ব্যাগ তৈরির কাজ করতেন বলে পারিবারিক সূত্রে খবর।
বৃহস্পতিবার ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন আহতদের পরিবারের তরফেই ফোন করা হয় স্থানীয় এক গাড়ির চালককে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল তাঁকে। পরে ওই গাড়ির চালক জানান, তাঁকে বলা হয়েছিল গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আহত হয়েছেন। বোমা ফেটে তাঁরা আহত হয়েছেন কি না, তা জানা ছিল না তাঁর। কিন্তু আহতদের নিয়ে যখন তিনি বাসন্তীর হাইওয়েতে ওঠেন, তখন পুলিশ এসে তাঁদের গাড়ি থামায়। এর পর পুলিশের নিরাপত্তাতেই ওই চার জনকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পর বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে আহতরা পালানোর চেষ্টা করছিলেন। সেই সময়েই কাঁটাতলা এলাকা থেকে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ তাঁদের ধরে ফেলে ৷ নির্বাচন পরবর্তী হিংসা এবং অশান্তি এড়াতে ভাঙড় জুড়ে মোতায়েন করা আছে অতিরিক্ত পুলিশ৷ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে পুলিশ পিকেট৷ পালানোর সময়েই পুলিশের চেকিংয়ে ধরা পড়েন চার জন। আহত হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। পরে ভাঙড়ে বিস্ফোরণ স্থলে জেলার পুলিশ সুপার মিস পুষ্পার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনীও পৌঁছয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তাঁরা।
এর আগে মঙ্গলবার এই চালতাবেড়িয়ারই কাঁঠালিয়ায় গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছিল তিন জনের। তার মধ্যে দু’জন ছিলেন আইএসএফ কর্মী। আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকি সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন। যদিও বৃহস্পতিবারের ঘটনায় এলাকার তৃণমূলের এক নেতা বলেছেন, ‘‘এটা কোনও অশান্তির ঘটনা নয়। আইএসএফের সমর্থকেরা আসলে নিজেরাই বোমা বাঁধার কাজ করছিলেন। সেই বোমা দুর্ঘটনাবশত ফেটে আহত হন তাঁরা।’’
তবে তৃণমূল আইএসএফকে দোষারোপ করলেও তার পাল্টা কোনও কোনও বক্তব্য আইএসএফের তরফে মেলেনি। ফোন করলে বেজে গিয়েছে এলাকার আইএসএফ নেতাদের ফোন। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় সভা আছে আইএসএফ নেতা নওশাদের। তিনি সেই সভা থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলেন কি না সেটা সময়ই বলবে।