ফাইল চিত্র।
এক-আধজন নয়, পঞ্চায়েত প্রধানের ২৬ জন আত্মীয় আমপানে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে। প্রধান তৃণমূলের। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। বিষয়টি অস্বীকারও করছেন না প্রধান। তাঁর সাফাই, ‘‘আত্মীয়-পরিজন হলেও তাঁরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তা হলে ক্ষতিপূরণ তো পাবেনই।’’
মগরাহাট ২ পঞ্চায়েতে সমিতির সভাপতি প্রদীপ হালদার বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ বিডিও রথীন বিশ্বাস বলেন, লিখিত অভিযোগ এখনও হাতে আসেনি। বিস্তারিত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আজ, বুধবার পঞ্চায়েত ঘেরাও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজেপি।
মগরাহাট ২ ব্লকের মোহনপুর পঞ্চায়েতে আমপানে যাঁদের বাড়ির সম্পূর্ণ এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছিল, এমন ২৬০০ জন প্রথম পর্যায়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছিলেন পঞ্চায়েতের কাছে। ব্লক অফিসে সরাসরি আবেদন করেছিলেন আরও ১৪০০ জন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এঁদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে হাজারখানেক পরিবার। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই তালিকায় আছেন পঞ্চায়েত প্রধান আলমগির মোল্লার দাদা, ভাই, ভাইপো, বোন এবং আরও কয়েকজন আত্মীয়। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ২৬। এঁদের অধিকাংশেরই বাড়ি-ঘর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে দাবি বিরোধীদের। কারও কারও দোতলা বাড়ি। কেউ সরকারি চাকরি, বড় ব্যবসা করেন বলেও দাবি বিজেপির। জয়েনখাঁ গ্রামের বাসিন্দা সমর দলুই, অমর দলুইদের ঘর ভেঙেছিল আমপানে। জল ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দীননাথ কাঁড়া, রামকৃষ্ণ কাঁরাদের এক চিলতে মাটির বাড়ি। আশ্রয় নিতে হয়েছিল ত্রাণ শিবিরে।
তাঁদের কথায়, ‘‘বার বার পঞ্চায়েতের কাছে দরবার করেও ক্ষতিপূরণ মেলেনি। কোনও রকমে ত্রিপল জোগাড় করে মাথা গুঁজে আছি। লকডাউনে কাজকর্ম নেই। নতুন করে ঘর তৈরির ক্ষমতা নেই আমাদের মতো আরও অনেকেরই। অথচ, জানতে পারছি পাশাপাশি এলাকার অনেক পাকা বাড়ির মালিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।’’
প্রধান ইচ্ছে মতো তালিকায় নাম ঢুকিয়ে এই দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ পঞ্চায়েতের বিরোধী নেতা, বিজেপির অভিষেক ঘোষের। ব্লক প্রশাসনের কাছে সম্প্রতি অনলাইনে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য পার্থ হালদার বলেন, ‘‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকে টাকা পাননি। অথচ প্রধান নিজের পরিবার-পরিজনের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।’’
বিরোধীদের অভিযোগকে অবশ্য আমল দিচ্ছেন না আলমগির। তাঁর কথায়, ‘‘মিথ্যা অভিয়োগ করা হচ্ছে। আত্মীয়-পরিজন হলেও যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরাই টাকা পেয়েছেন।’’ তাঁর আরও যুক্তি, ‘‘বিরোধী নেতা তো ক্ষতিপূরণের আবেদনপত্রে সই করেছিলেন। তখন কেন আপত্তি করেননি!’’
অভিষেকের পাল্টা দাবি, ‘‘আমি কোনও আবেদনপত্রে সই করিনি। ব্লক প্রশাসন থেকে আমাকে জানিয়েছিল, ২৬০০ জন ক্ষতিগ্রস্তের আবেদন জমা পড়েছে। সেই সম্পূর্ণ তালিকায় আমি সই করেছিলাম।’’