21July Rally

21st July TMC Rally: মঞ্চে ছিলেন তারকারা, তবে কোনও ছটা নেই, এলেন-দেখলেন-শুনলেন, চলে গেলেন সভা শেষে

অন্যান্য বারের মতো এ বারও ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে ছিল তারকাদের ভিড়। তবে তাঁরা আলো হয়ে ছিলেন না। বরং নেতা-নেত্রীদের ছায়ায় ঢাকা ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ১৭:৫৫
Share:

মঞ্চে তারকাদের সঙ্গে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

সভামঞ্চে টলিউড তারকাদের আলো ছিল। তবে ছটা ছিল না। অন্যান্য বারের মতোই এ বারেও ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে এসেছিলেন তাঁরা। তৃণমূলের নেতানেত্রী, দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ও হয়েছে। কিন্তু মঞ্চে থাকলেও কোনও তারকার হাতে ওঠেনি মাইক্রোফোন। ভাষণ দেননি কেউই। ব্যতিক্রম একমাত্র গায়ক নচিকেতা। মমতার বক্তৃতার আগে তিনি খালি গলায় গেয়েছেন, ‘‘তুমি আসবে বলেই...’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় সমাবেশ মঞ্চে ছিলেন অভিনেতা-সাংসদ দেব, অভিনেত্রী-সাংসদ মিমি চক্রবর্তী, অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত জাহান, অভিনেতা-বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী, পরিচালক-বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, অভিনেত্রী-বিধায়ক জুন মালিয়া, সায়নী ঘোষেরা। ছিলেন অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়, ভরত কল, পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল, সুদেষ্ণা রায়, অভিনেত্রী অনামিকা সাহা, সোহিনী সেনগুপ্ত, দোলন রায়েরা।

মঞ্চে উঠে তাঁদের কারও নাম নেননি মমতা। সকলকেই এক সঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। মাঝে শুধু রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবাদের সময় এক বার ডেকে নেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেতা দেবকে। তাঁর হাতে তুলে দেন গ্যাস সিলিন্ডারের একটি কাট আউট। হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাস্থল।

Advertisement

এ বারের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে টালিগঞ্জের গ্ল্যামার জগতের কেউ বক্তৃতা করেননি। তবে ১১ জন বক্তার তালিকা একেবারেই সিনে-গ্ল্যামার বর্জিত ছিল এমন নয়। বিরবাহা হাঁসদা বক্তৃতা করেন মঞ্চে। রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা সাঁওতালি সিনেমার একেবারে সামনের সারির মুখ ছিলেন একটা সময়ে। তবে তাঁর উঠে-আসা রাজনৈতিক পরিবার থেকেই। তিনি প্রয়াত নরেন হাঁসদা এবং চুনিবালা হাঁসদার মেয়ে। নরেন ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের বড় মুখ ছিলেন। পরে বিধায়ক হন। তাঁর স্ত্রী চুনিবালাও ঝাড়খণ্ড পার্টির বিধায়ক ছিলেন।

সমাবেশ শেষে নেত্রী মমতার সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলান নেতা-নেত্রী-তারকারা। গলা মেলান রাজ্যের মন্ত্রী তথা গায়ক ইন্দ্রনীল সেন আরও এক গায়ক তথা বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়।

মঞ্চে উঠে তাঁদের কারও নাম নেননি মমতা। — নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘ বামশাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। তার পর থেকে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তারকার জৌলুস ক্রমেই বেড়েছে। সাদা-কালোর জমানা থেকে থেকে রঙিন— প্রতি বছর দীর্ঘ হয়েছে তারকার তালিকা। ক্রমে সেই তারকাদের অনেকেই জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। দীর্ঘতর হয়েছে তালিকা।

২০১১ সাল থেকেই ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা যেতে শুরু করে দেব, সন্ধ্যা রায়, রুদ্রনীল ঘোষ, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, হিরণ চট্টোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল, রাজ চক্রবর্তী, তনুশ্রী চক্রবর্তী, পায়েল সরকার, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়দের। তত দিনে জনপ্রতিনিধি হয়ে গিয়েছিলেন শতাব্দী রায়, তাপস পাল, দেবশ্রী রায়েরা।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে টিকিট পেয়েছিলেন দেব, সন্ধ্যা, মুনমুন সেন। জিতেওছিলেন তাঁরা।

সে বছর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে চেয়ারের সংখ্যা আরও বেড়েছিল। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তারকাদের টিকিট দেওয়ার ধারা এতটুকু বদলায়নি। নতুন করে টলিউডের আরও কিছু তারকা টিকিট পেয়েছিলেন। আরও আলো পড়েছিল ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ সালের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে।

কিন্তু পরের বছর, ২০১৯ সালেই সেই গ্ল্যামার সম্ভবত একটু ফিকে হয়ে গিয়েছিল। তার মাস দু‌য়েক আগেই লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরিয়েছিল। সেখানে রাজ্যে ৪২টির মধ্যে ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। ফলে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে নিয়মিত রুদ্রনীল, পায়েল, শ্রাবন্তী, তনুশ্রী, অঙ্কুশ, হিরণ, ইন্দ্রাণী হালদার, অপরাজিত আঢ্য, জুন মালিয়াদের আর দেখা যায়নি। দেখা যায়নি শ্রীকান্ত মোহতাকেও। অনুপস্থিত তারকাদের কেউ বলেছিলেন, ‘অসুস্থ’। কেউ জানিয়েছিলেন, ‘কাজ রয়েছে’। কালক্রমে বিজেপিতে যোগ দেন রুদ্রনীল-সহ কয়েক জন। কেউ কেউ আবার পরিস্থিতি বুঝে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন। ২০২১ সালের ‘নীলবাড়ির লড়াই’-এ জুন অবশ্য মেদিনীপুর থেকে টিকিট পান। এবং জেতেন।

পরের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে কোভিডের কারণে ধর্মতলায় সমাবেশ হয়নি। তার পরেই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ঐতিহাসিক ‘‌কামব্যাক’‌ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছরও কোভিডের কারণে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই আটকে ছিল ২১ জুলাইয়ের সভা। এর মধ্যে একে একে ‘ঘর ওয়াপসি’ হয়েছে নেতা-বিধায়ক-তারকার। আবারও ক্রমে আড়ে-বহরে বেড়েছে শাসকদল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement