—ফাইল চিত্র।
গত শুক্রবার এসে দু’দিন নাগাড়ে বৈঠকের পরে শনিবারই কলকাতা ছেড়েছেন ইডির ডিরেক্টর সঞ্জয় মিশ্র। তার পরে মঙ্গলবারই শহরে এলেন এনআইএ-র শীর্ষ কর্তা দিনকর গুপ্ত। ইডি সূত্রে খবর, শনিবার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে মূলত দিল্লি থেকে এসেছেন কয়েক জন ডেপুটি ডিরেক্টর-সহ ২০ জন অফিসারের দল। সব মিলিয়ে, মাঝে খানিকটা ‘চুপচাপ থাকার পরে’ রাজ্যে হঠাৎই যেন চোখে পড়ার মতো বেড়েছে ইডি-সহ কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলির তৎপরতা। ফলে দানা বাঁধছে জল্পনা, তবে কি ‘বড়সড়’ কোনও ‘অপারেশন’-এর জন্য ঘুঁটি সাজানো শুরু করেছে তারা?
এই জল্পনার আগুনে ঘি ঢেলেছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের সাম্প্রতিক তলবও। সোমবার দুবাই যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে আটকে ৮ জুন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। কয়লা কেলেঙ্কারির মামলার সূত্রে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে ১৯ জুন। সূত্রের মতে, এগুলিও তৎপরতা বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সম্প্রতি দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের শুনানিতেও ইডির আইনজীবী জানান, আগামী দিনে গরু পাচারের মামলায় তৎপরতা বাড়বে। ওই মামলায় আরও গ্রেফতার হবে।
ইডির ডিরেক্টর সঞ্জয় যে দিন (শুক্রবার) কলকাতায় এসে অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন, সে দিনই সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার মুখে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। তার পরে যাবতীয় নজর গিয়ে পড়ে ওই দুর্ঘটনার দিকে। কিন্তু এখন চলতি সপ্তাহের বাকি দিনগুলি প্রচারের আলো ফের কয়লা ও গরু পাচার মামলার দিকেই ঘুরে যাবে কি না, ইডির তৎপরতায় সেই প্রশ্ন উঠছে। ইডি সূত্রের খবর, শুধু তাদের অফিসার-আইনজীবীদের সঙ্গে নয়, আয়কর দফতর ও শুল্ক দফতরের অফিসারদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন সঞ্জয়। ইডি কর্তাদের ইঙ্গিত, এই ‘চুপিসারে’ প্রস্তুতি অকারণে নয়। সূত্রের খবর, আরও অফিসার আসার পরে শীঘ্রই রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হতে পারে।
তদন্তকারী সংস্থাটি সূত্রে ইঙ্গিত, বৃহস্পতিবার কয়লা পাচার মামলায় রুজিরাকে সিজিও কমপ্লেক্সে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে মামলাটির তদন্তকারী অফিসার-সহ পাঁচ জনের একটি দল। মলয়কে ওই একই মামলায় দিল্লিতে ডেকে পাঠানোর পাশাপাশি মঙ্গলবার তাঁর আপ্ত সহায়ক বলে পরিচিত শঙ্কর চক্রবর্তীকে দিল্লিতে তলব করা হয়েছে। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে কয়লা পাচার মামলার চুলচেরা বিশ্লেষণও।
কয়লা ও গরু পাচারের মামলা মূলত দিল্লির সদর দফতর থেকে পরিচালিত হয়। ওই দু’টি মামলাই দিল্লিতে দায়ের করা হয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছেন ওই দুই মামলার তদন্তকারী অফিসার। কলকাতার অফিসারদের সঙ্গে হয়েছে সমন্বয় বৈঠকও। ইডির দাবি, কয়লা ও গরু পাচারের কালো টাকার মোটা অংশ বিভিন্ন ব্যবসা ও সম্পত্তিতে ঢালা হয়েছে। বছর খানেক ধরে রাজ্য জুড়ে অভিযান চালিয়েছে আয়কর ও শুল্ক দফতর। তাতেও একাধিক প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে। সূত্রের দাবি, সেই সব নথিপত্র নিয়েও তদন্ত জোরদার করতে চলেছে ইডি।