ধৃত তাজমিন বিবিকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, (ইনসেটে আতিফ। নিজস্ব চিত্র
দু’বছরের শিশুকে খুন করে আলমারিতে ভরে রাখার অভিযোগ উঠল জেঠিমার বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটে বোলপুর থানার কাশীপুর গ্রামের পূর্বপাড়ায়। অভিযুক্ত মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শিশুটি শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই খুন বলে পুলিশের অনুমান।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত শিশুর নাম আতিফ খান। পরিবার সূত্রের খবর, মুর্শেদ খান ও শম্পা বিবির দু’বছরের ছেলে আতিফ শুক্রবার বিকেলে তার জেঠিমা তাজমিন বিবির বাড়ির সামনে খেলা করছিল। তার পর থেকেই শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবার গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে। বাড়ির পাশে থাকা পুকুরেও খোঁজাখুঁজি চলে। কিন্তু, রাত হয়ে গেলেও আতিফের খোঁজ না মেলায় খবর দেওয়া হয় বোলপুর থানায়। পুলিশও এসে শিশুটির খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায়। তল্লাশি চালানো হয় তাজমিন বিবির বাড়িতেও। প্রথমে কিছু না পাওয়া যায়নি। পুলিশের দাবি, তাজমিনর কথায় অসঙ্গতি থাকায় এবং আতিফের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার পরে আর এক দফা তল্লাশি চলে ওই বাড়িতে। তখনই আলমারির একেবারের নীচের তাক থেকে কাপড় জড়ানো আতিফের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই তাকটি ‘লক’ করা ছিল। ঘটনাস্থল থেকে তাজমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর স্বামী, আতিফের জেঠু পিয়ার খানকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছে। শিশুটিকে খুন করার পরে যে কাপড় জড়িয়ে রাখা হয়েছিল এবং যে আলমারির ভিতরে দেহ ভরে রাখা হয়েছিল, সেগুলিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘এই খুনের পিছনে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুন এবং ২০১ ধারায় প্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু করা হয়েছে। শনিবার বোলপুর আদালতে তোলা হয় ওই মহিলাকে। সরকারি আইনজীবী শ্যামসুন্দর কোনার বলেন, ‘‘বিচারক সবদিক বিবেচনা করে ধৃতের জামিনের আবেদন খারিজ করে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।’’
কী কারণে এই ঘটনা? আতিফেরা মা শম্পা নিজেই দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাসুরের কোনও সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করতেন তাজমিনা। এই নিয়ে দুই জায়ের অশান্তি লেগেই থাকত। প্রতিবেশীরাও সে কথা জানিয়েছেন। শম্পা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে জায়ের কাটাকাটি ঝগড়া হয়েছিল বৃহস্পতিবার। তাই বলে তাজমিন আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে, কখনও ভাবতে পারিনি। আমি চাই দোষীর কঠোর সাজা।’’
সেই আলমারি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
পুলিশের দাবি, জেরায় তাজমিন খুনের কথা কবুল করেছে। যদিও এ দিন আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই মহিলা দাবি করেন, তিনি আতিফকে খুন করেননি।