Kultali

কুলতলিতে তাণ্ডব, যুব তৃণমূল-এসইউসি সংঘর্ষ, মৃত্যু দু’জনের

এলাকার বহু বাড়ি, দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। দু’দলের বহু কর্মী-সমর্থক জখম। বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

কুলতলি শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ০৪:১৫
Share:

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপিঠে পুড়ে যাওয়া বাড়ি দেখাচ্ছেন এক বাসিন্দা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

ধারালো অস্ত্রের কোপে খুন হলেন এক যুব তৃণমূল নেতা। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুড়িয়ে দেওয়া হল এসইউসি-র একাধিক নেতা-কর্মীর বাড়ি। পোড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হল এসইউসি নেতার ঝুলন্ত দেহ। ঘটনাটি আত্মহত্যা না খুন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির মৈপিঠে যুব তৃণমূল এবং এসইউসি-র মধ্যে দফায় দফায় যে তাণ্ডব চলেছে, তারই প্রমাণ দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা। এলাকার বহু বাড়ি, দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। দু’দলের বহু কর্মী-সমর্থক জখম। বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন। এখনও অনেকের খোঁজ মিলছে না বলে দাবি দু’পক্ষেরই।

Advertisement

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলছে দু’পক্ষই। সে কথা অবশ্য মানেননি জেলা পুলিশ কর্তারা। শনিবার সকালে বারুইপুর পুলিশ জেলার বিশাল বাহিনী এলাকায় যায়। দু’পক্ষের ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোলমালে জড়িত বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই স্থানীয় পুলিশ সক্রিয় আছে। শনিবার অতিরিক্ত বাহিনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার উত্তর বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে এসইউসি নেতা সুধাংশু জানার (৫০) বাড়ির কাছে একটি রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তির সূত্রপাত। যুব তৃণমূল কর্মীরা একাধিক দোকানে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। মারধর করা হয় এসইউসি কর্মী-সমর্থকদের।

Advertisement

এসইউসির অভিযোগ, রাতে বিনোদপুর সাহেবেরঘেরি এলাকায় ফের হামলা চালায় যুব তৃণমূল। সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট বেধে যায় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। যুব তৃণমূল নেতা অশ্বিনী মান্না (৫৫)-সহ কয়েক জন আহত হন। অশ্বিনীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অশ্বিনীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন: ৬৪ সপ্তাহ চেয়েছিল টিকা সংস্থা, ব্যাখ্যা দিচ্ছে আইসিএমআর

আরও পড়ুন: হাসপাতাল সফর: ‘ধন্দ’ কাটাতে সেনার বিবৃতি

তাঁর ছেলে পঙ্কজ, হারাধনদের অবশ্য দাবি, “আমরা কিশোরীমোহনপুরে দলীয় সভায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে এসইউসির গুন্ডাবাহিনী ঘিরে ধরে আক্রমণ করে।”

শনিবার সকাল থেকে এলাকায় যুব তৃণমূলের তাণ্ডব শুরু হয় বলে অভিযোগ। এসইউসি কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি, দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। মারধরও করা হয়। বৈকুন্ঠপুরে এসইউসি নেতা সুধাংশু জানার বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এর কিছু ক্ষণ পরেই সুধাংশুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ওই পোড়া বাড়িরই একাংশ থেকে।

এসইউসির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জয়কৃষ্ণ হালদার বলেন, “পঞ্চায়েত হাতছাড়া হবে জেনেই আমাদের কর্মী-সমর্থদের উপরে হামলা চালাচ্ছে যুব তৃণমূল। ওরাই খুন করেছে আমাদের দলের নেতা সুধাংশুকে।’’

সুধাংশুর স্ত্রী, এসইউসির পঞ্চায়েত সদস্য গীতা অবশ্য বলেন, “আমাদের বাড়ি-সহ আশেপাশের বহু কর্মীর বাড়িতে ওরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। আমরা বাড়িতে আটকে পড়েছিলাম। উনি বারবার থানায় ফোন করেন। পুলিশ আসেনি। কিছু ক্ষণ পরেই পাশের ঘরে ওঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাই। নিজের বাড়ি
এবং কর্মীদের না বাঁচাতে পারার হতাশাতেই হয় তো উনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।’’

কুলতলি ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি গণেশ মণ্ডলের কথায়, “এসইউসি বরাবরই খুন-জখমের রাজনীতি করে এসেছে। এলাকায় জনভিত্তি হারিয়ে আবার সেই পথে ফিরে গিয়েছে।” জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সওকত মোল্লা বলেন, ‘‘মৈপিঠে এসইউসি আমাদের কর্মীদের উপর আক্রমণ করেছে। আমাদের এক কর্মী মারা গিয়েছেন। আরও এক কর্মী গুরুতর আহত।’’

এ দিন নগেনাবাদ এলাকায় সুধাংশুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির বেশির ভাগ অংশই পুড়ে গিয়েছে। আশেপাশের বেশ কিছু বাড়ি, দোকানও ভেঙেচুরে পড়ে আছে। বিধ্বস্ত চেহারা গোটা এলাকার। গ্রামের মানুষ জানালেন, প্রায় শ’খানেক লোক লাঠিসোঁটা, বোমা-বন্দুক নিয়ে বাইকে চেপে ঢুকে ঘণ্টাখানেক ধরে তাণ্ডব চালায়। সাহেবের‌ঘেরি এলাকায় যেখানে অশ্বিনী খুন হন বলে অভিযোগ, সেখানে থমথমে পরিবেশ। বাড়ির পুরুষেরা বেশির ভাগই ঘরছাড়া। ঘরের দরজা-জানলা এঁটে বাড়িতে আছেন বয়স্ক মানুষ, মহিলা-শিশুরা। পুলিশের টহল চলছে।

কিন্তু কেন এই গোলমাল?

গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই অবশ্য উত্তেজনার সলতে পাকাতে শুরু করেছিল। ১১টি আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেও বোর্ড গড়তে পারেনি এসইউসি। দলীয় প্রতীকে মাত্র একটি আসনে জয়ী হয়েও ঘাসফুল শিবির ক্ষমতায় আসে। পরে নানা বিষয়ে সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়। সম্প্রতি এসইউসি পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনার তোড়জোড় করছিল। তাতে উত্তেজনা বাড়ে। প্রধান নমিতা জানার বিরুদ্ধে আমপানের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিল এসইউসি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement