বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
হাজরা মোড়ের কাছে সুপ্রিম কোর্টের প্রয়াত বিচারপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দুর্গোৎসবের কথা কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ উকিল, আইনজ্ঞদের কারও কারও ভালই মনে রয়েছে। উমেশচন্দ্রের ভ্রাতুষ্পুত্র বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বাড়ির ছেলে। তাঁর পিতামহ প্রসিদ্ধ আইনজীবী নলিনীচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও ব্যারিস্টার-বাড়ির সন্তান। তাঁর পিতা আইনজীবী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্ট পরিমণ্ডলে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। দেওদার স্ট্রিটে বাড়িতেও বিশিষ্টদের যাতায়াত লেগেই থাকত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি-র পরে তিনি বিলেতে ব্যারিস্টারি পাশ করেন।
সংক্রমণ এড়াতে এ বার মণ্ডপে ঢুকে পুজো দেখা নিষিদ্ধ করার রায়ের সূত্রে এই দুই বিচারপতির কথাও এখন বাঙালির শারদীয় আলোচনার অঙ্গ। তবে একটা ব্যাপারে দুজনের অসম্ভব মিল। দুই বিচারপতিই তাঁদের পেশাগত ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিচিতি সত্ত্বেও ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবন কার্যত ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাঁদের স্ব-আরোপিত বর্ম ভেদ করে দুই বিচারপতির কাছে পৌঁছন দুঃসাধ্য বলেই জানে আইনজীবী-মহল। ক্যালকাটা ক্লাবের অন্তরঙ্গতম পরিসরে কখনও দু’জনকে দেখা গিয়েছে। তবে দুজনের মেলামেশাই একেবারে নিচুতারে বাঁধা।
আরও পড়ুন: আজ নজর আদালতে, মণ্ডপে বাড়তি বাহিনী, ড্রোনও
আরও পড়ুন: রাজ্যে এক দিনে করোনা সংক্রমণ ৪ হাজার ছাড়াল, এই প্রথম
৫৯ বছরের সঞ্জীববাবু হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন ২০০৬-এ। ৫৩ বছরের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় স্থায়ী বিচারপতি হন ২০১৬ নাগাদ। দু’জনেই আইনজীবী হিসেবে চূড়ান্ত সফল। দেওয়ানি মামলা, কর্পোরেট মামলা থেকে সাংবিধানিক বিষয়েও তাঁদের স্বচ্ছন্দ বিচরণ। হাইকোর্টের পোড়খাওয়া উকিলদের অভিজ্ঞতায় দু’জন জজসাহেবের ভঙ্গিতে ফারাকও রয়েছে। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ধীর, স্থির, শান্ত। আর সাধারণত হাইকোর্টের ১৬ নম্বর ঘরে কাজে মগ্ন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মামলা উঠলে অনেক বাঘা উকিলও ভয়ে থাকেন। বিশেষত, দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি অত্যন্ত কঠোর। অনেক উকিলই ওই বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শান্ত কিন্তু দৃঢ় ভঙ্গিতে রায় দেওয়ার জন্যই পরিচিত। আইন বিষয়ে দুই বিচারপতির প্রগাঢ় পাণ্ডিত্যই প্রশ্নাতীত।
জনৈক প্রবীণ আইনজীবীর কথায়, ‘‘এই দুই বিচারপতিকে সমীহ করে চললেও সুবিচারের জন্য বেশির ভাগ আইনজীবীই ওঁদের বিশেষ ভরসাও করেন। তাঁরা মনে করেন, ভুলচুকের জন্য বকলেও যে কোনও বিষয় নিরপেক্ষ চোখে দেখে তাঁরা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আবেগকে বুঝেই সবার ভালর কথা ভেবে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেন।’’