বহুরূপে: ঝাড়গ্রাম শহরে কালীবেশী সৌম্যদীপ। —নিজস্ব চিত্র।
জ়েন ওয়াই যুগে ‘ছিনাথ বহুরূপী’রা অতীত। কালীপুজো উপলক্ষে সেই হারানো স্মৃতিই উস্কে দিল ঝাড়গ্রাম শহরের কিশোর সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য। কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সৌম্যদীপের কালীর বেশ দেখে বুধবার ভূতচতুর্দশীর রাতে চমকে গেলেন অরণ্যশহরবাসী।
কালী সেজে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াল সতেরা বছরের সৌম্যদীপ। ঝাড়গ্রামের ‘নৃত্যগুরু’ গোপাল মাহাতোর কাছে ছ’বছর ধরে ধ্রুপদী নাচের তালিম নিচ্ছে সে। সৌম্যদীপ ঝাড়গ্রামের একটি নাটকের দলে অভিনয়ও করে। সৌম্যদীপের বাবা টোটোচালক। মা দৃষ্টিহীন। এক দাদা শহরের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। অভিনয় ও নাচের পাশাপাশি চলছে সৌম্যদীপের পড়াশোনা। সৌম্যদীপ জানায়, বইয়ে বহুরূপীর কথা পড়ে সাজার ইচ্ছেটা অনেকদিনেরই। গোপাল নিজে মেকআপ শিল্পী। বুধবার গোপালই সৌম্যদীপকে সাজিয়ে দেন। কালীর রূপদানে একঘন্টা সময় লেগেছিল।
রাত দশটা নাগাদ শহরের শিবমন্দির মোড়, ডিএম হল কালীমন্দিরের মতো বিভিন্ন এলাকায় হাতে খড়্গ নিয়ে কালীর বেশে ঘুরে বেড়ায় সৌম্যদীপ। সৌম্যদীপ বলে, ‘‘আমি যে ছেলে সেটা প্রথমে কেউই বুঝতে পারেননি। আমার সঙ্গে কথা বলার পরে সকলেই ভুল ভাঙে। শিবমন্দিরের কাছে একজন প্রবীণ তো পাঁচশো টাকা প্রণামীও দিয়ে বসেন। তিনি জানান, গত ছ’দশকে তিনি ঝাড়গ্রাম শহরে বহুরূপী দেখেননি।’’ সৌম্যদীপের কথায়, ‘‘বইয়ে ছিনাথ বহুরূপীর কথা পড়েছি। সিনেমাতেও বহুরূপী দেখেছি। বাস্তবে কখনও দেখিনি। তাই বিষয়টা উতরোতে পারব কি-না চিন্তায় ছিলাম।’’ আর গোপাল বলছেন, ‘‘আগে কখনও কাউকে কালীর মেকআপ করিনি। ওকে সাজানোর পরে নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনি। সৌম্যদীপের হাত ধরে ‘বহুরূপী’কে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা সফল হল।’’
ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ সঞ্জীব মিত্র মনে করিয়ে দিলেন, বহুরূপী হল গ্রামবাংলার একটি বহু প্রচলিত চলমান গ্রামীণ লোকশিল্পের ধারা। পারফর্মিং আর্টও বলা চলে। মানুষজনকে আনন্দ দানের পাশাপাশি, হাটেবাজারে লোকালয়ে ঘুরে উপার্জনও করতেন বহুরূপীরা। কিন্তু এখন এই পারফর্মিং আর্টের ধারা ক্ষয়িষ্ণু। বীরভূমের প্রবীণ সুবল দাস বৈরাগ্যের মতো এক-দু’জন প্রবীণ শিল্পী এখনও বহুরূপী সাজেন। তাঁর মতে, ‘‘সৌম্যদীপ বহুরূপী সেজে গ্রামীণ লোকশিল্পের ধারাটিকে নতুন করে ঝাড়গ্রামবাসীকে চিনিয়ে দিল।’’