১৬ ঘণ্টা লঞ্চ চালানো অসম্ভব, ক্ষোভ কর্মীদের

কেন দিনে ১৬ ঘণ্টা লঞ্চ চালাতে আপত্তি?

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share:

অবহেলা: রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পড়ে রয়েছে কয়েকটি লঞ্চ।সোমবার, হাওড়া জেটিতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

রাজ্য পরিবহণ দফতর সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, গঙ্গাবক্ষে লঞ্চ পরিষেবা চালু রাখতে হবে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। কিন্তু সেই নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে পিছু হটলেন খোদ হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতির প্রশাসক! কর্মীদের বক্তব্য, ১৬ ঘণ্টা লঞ্চ চালানোর মতো পরিকাঠামো সমিতির নেই। তা ছাড়া, অর্থাভাবে ধুঁকছে সমিতি। রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়ও কর্মীদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকারি ভাব‌ে ওঁদের প্রস্তাব আমাদের কাছে আসেনি। আসার পরে আমরা আলোচনা করব। তবে এটা বাস্তবায়িত করা খুবই কঠিন।’’

Advertisement

হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রাজ্য পরিবহণ দফতর নির্দেশিকা জারি করে জানায়, ২৮ জুন থেকে ভূতল পরিবহণ-সহ বিভিন্ন লঞ্চ পরিষেবাকারী সংস্থাগুলিকে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পরিষেবা দিতে হবে। ওই নির্দেশ ভূতল পরিবহণ সংস্থার পক্ষ থেকে টেলিফোনে জানানো হয় সমবায় সমিতির প্রশাসক অমিয় চক্রবর্তীকে। তার পরেই গত রবিবার দুপুরে অমিয়বাবু তড়িঘড়ি সমিতির কয়েক জনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। এমনিতে গঙ্গার বিভিন্ন রুটে ভূতল পরিবহণ ও হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায়ের লঞ্চ চলে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। কিন্তু সেই সময়সীমা সকালে দু’ঘণ্টা এবং রাতে দু’ঘণ্টা, অর্থাৎ চার ঘণ্টা বাড়ানোর প্রস্তাব রবিবারের বৈঠক থেকে কোনও ভাবে কর্মী-মহলে জানাজানি হয়ে যায়।

এর পরেই হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতির কর্মীরা দল বেঁধে ঢুকে পড়েন প্রশাসকের ঘরে। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই মানা সম্ভব নয়। কারণ, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে অর্থাভাবে ধুঁকতে থাকা সংস্থাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কর্মীদের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত প্রশাসকের ডাকা বৈঠক ভেস্তে যায়। তিনি অফিস ছেড়ে চলে যান বলে সমবায় সমিতি সূত্রের খবর।

Advertisement

কিন্তু কেন দিনে ১৬ ঘণ্টা লঞ্চ চালাতে আপত্তি?

কর্মীদের অভিযোগ, প্রশাসক বসার আগে সমবায় সমিতিতে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হওয়ায় সংস্থা রুগ্‌ণ হয়ে পড়েছিল। সেই ক্ষত আজও দগদগে। অথচ, নির্বাচিত বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের যে সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল, তাঁর বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর উপরে দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির অভাবে পাঁচটি বড় লঞ্চ সম্পূর্ণ অচল হয়ে গঙ্গার পাড়ে পড়ে রয়েছে। বাকি যে ১৫টি লঞ্চ এখন চলে, সেগুলির বয়স ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে। ফলে দিনে ১৬ ঘণ্টা চলার ধকল ইঞ্জিন নিতে পারবে না। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো রয়েছে কর্মীর অভাব। গত এক বছরে প্রায় ৫০ জন কর্মী অবসর নিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের পরিবর্তে এক জনকেও চাকরিতে নিয়োগ করা হয়নি।

সোমবার এ ব্যাপারে অমিয়বাবুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘দিনে ১৬ ঘণ্টা লঞ্চ চালানোর ব্যাপারে পরিবহণ দফতর আমাদের লিখিত ভাবে জানাতে বলছিল। কিন্তু কর্মীরা আপত্তি করেছেন। বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। আপাতত ঠিক হয়েছে, সমবায়ের কর্মীরা একটি লিখিত প্রস্তাব দেবেন। তা দেখে, জয়েন্ট রেজিস্ট্রারের সঙ্গে গোটা বিষয়টি আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

সমবায় সমিতির তৃণমূল কর্মী-সংগঠন ‘স্টাফ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই নির্দেশ মানা অসম্ভব। ইতিমধ্যেই লঞ্চের পাঁচ জন চালক রবিবারের বৈঠকে ঢুকে প্রতিবাদ করেছেন। কারণ তাঁদের আশঙ্কা, এই নির্দেশ মানতে হলে ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকার যে ক্ষতি গত আর্থিক বছরে হয়েছিল, তার বহর আরও বেড়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত সংস্থা বন্ধও হয়ে যেতে পারে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement