Tapan

বাবা-মা নেই, দুই অভুক্ত ভাইবোনের জন্য খাবার আর কাজ খুঁজছে ১৩ বছরের ‘অভিভাবক’

পড়শিরাই জানালেন, দিনমজুর বাবা মারা গিয়েছেন বছর সাতেক আগে। মা তিন জনকে নিয়ে সংসার করছিলেন। তিনিও তিন মাস আগে ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

Advertisement

নীহার বিশ্বাস 

তপন শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫১
Share:

দীপাবলির রাতে ঝুপড়ির সামনে তিন ভাইবোন। —নিজস্ব চিত্র।

হন্যে হয়ে ঘুরছে তেরো বছরের সঞ্জীব। চারদিকে আলোর উৎসব। তার মধ্যে সে খুঁজছে একটু খাবার। বাড়িতে দুই ভাইবোন, সন্ধ্যা ও অভি, অভুক্ত। বাবা-মা কেউ নেই তাদের। তাই দুই বালক-বালিকার দায়িত্ব বড় দাদা সঞ্জীব ওরাওঁয়ের। একটু খাবার চাই তার। একটা কাজ।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নিমতলা এলাকায় রাজ্য সড়কের ঠিক পাশে পিডব্লিউডি-র এলাকার উপরে বাড়ি সঞ্জীবদের। বাড়ি? আদতে পাটকাঠির বেড়া দেওয়া একটা ঝুপড়ি। ভাঙা বেড়ার ফাঁকফোকর ঢাকতে যে পলিথিন দিয়ে ঘেরা হয়েছে, তা-ও শতচ্ছিন্ন। বৃষ্টি এলে জল পড়ে, শীত এলে কনকনে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার দাখিল। এতেও শান্তি নেই। ঘরে সাপ আর মশার উৎপাত লেগে রয়েছে নিত্য।

Advertisement

পড়শিরাই জানালেন, দিনমজুর বাবা মারা গিয়েছেন বছর সাতেক আগে। মা এত দিন তিন জনকে নিয়ে সংসার করছিলেন। তিনিও তিন মাস আগে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। সহায়, সম্বলহীন অবস্থায় সঞ্জীব এই ক’মাসেই বুঝতে পেরেছে, বেঁচে থাকতে গেলে কাজের খোঁজ করতে হবে। অনেক চেষ্টায় শেষে কয়েক দিন আগে তপনের একটি মিষ্টির দোকানে কাজ পায় সে। আপাতত সেখান থেকেই সামান্য কিছু জুটছে তিন জনের মুখে তোলার মতো।

ছোট ভাইটা অপুষ্টিতে ভুগছে, আক্ষেপ করছিল সঞ্জীব। তার কিশোর কণ্ঠে ঝরে পড়ল চরম হতাশা, ‘‘আমাদের কেউ নেই।’’ এতটুকু ছেলে, তার নিজেকে সামলানোরই বয়স হয়নি, বলছিলেন পড়শিরা। তাঁরাও এতটা স্বচ্ছল নন যে এই তিন শিশুর দায়িত্ব নেবেন। বাচ্চারাও জানে না, কী ভাবে কোথায় গেলে রেশন মিলবে। সঞ্জীব আর এগারো বছরের সন্ধ্যা ভর্তি হয়েছিল স্কুলে। সাত বছরের অভির তো সে সুযোগও হয়নি। স্কুল থেকে মাসে একবার মিড-ডে মিল দেয় এখন। কিন্তু মা থাকতেই আর সে মুখো হওয়া হত না তাদের। তাই মা চলে যেতেও এ সব কথা মাথায় আসেনি। তেরো বছরের সঞ্জীব তাই সব দিক থেকে দিশাহারা। সে বলে, ‘‘কী ভাবে সব চলবে, আমি কিছুই জানি না।’’

Advertisement

প্রশাসনও তাদের খোঁজ রাখেনি, নালিশ করছেন পড়শিরা। তা যে সত্যি রাখেনি, সেটা সরাসরি মেনে না নিলেও প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন তপন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজু দাস। বলেন, ‘‘খোঁজ নিচ্ছি।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) বিবেক কুমারেরও আশ্বাস, ‘‘খোঁজ নিয়ে ওদের সব রকম সাহায্য করব।’’

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক অলোক সরকার খবর পেয়ে গিয়েছিলেন তিন ভাইবোনকে দেখতে। কিছু সাহায্য দিয়ে এসেছেন তাঁদের। তিনি বলেন, ‘‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে ওরা। ঘর নেই, খাবার-ওষুধ কিছুই নেই। কে দেখবে ওদের?’’ পড়শিরা বলছেন, যদি অন্তত সরকারি হোমে পাঠানো হয়, বেঁচে যাবে বাচ্চাগুলো।

সন্ধ্যের পর থেকে আকাশে মাঝে মাঝেই হাউয়ের মতো হুশ করে উড়ছে আতশবাজি। রোশনাই ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। অন্ধকার ঝুপড়ির ধারে বসে সে সব দেখছিল তিন ভাইবোন। তার মধ্যেই বলল সঞ্জীব, ‘‘সরকারি হোমে পাঠালে চলে যাব।’’ শুনে অভি বলে উঠল, ‘‘সেটা কি আমাদের নতুন বাড়ি রে দাদা?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement