বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
শীঘ্রই একশো দিনের কাজের বকেয়া বরাদ্দ পেতে চলেছে রাজ্য। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ আশ্বস্ত করার পরেই ‘নড়েচড়ে বসল’ রাজ্য বিজেপি। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের সঙ্গে গিরিরাজের ফোনে কথোপকথনের কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই দিল্লির কাছে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে হাজির হতে চাইছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির বক্তব্য, তারাও চায় একশো দিনের কাজের শ্রমিকেরা যাতে তাঁদের প্রাপ্য অর্থ পান। কিন্তু ‘চোরেদের’ টাকা মেটানো নিয়ে দলের ঘোর আপত্তি রয়েছে। এ বিষয়ে গিরিরাজের সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
একশো দিনের প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে অভিযোগ তুলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, এক বছর হতে চলল, প্রকল্পের টাকা দিতে শুরু করেনি কেন্দ্র। প্রায় সাড়ে ছ’হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। এ নিয়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার করেন প্রদীপ। তাতেই জট কাটে। কেন্দ্রও জানায়, তারা বকেয়া বরাদ্দ মিটিয়ে দেবে। কিন্তু বিজেপি চাইছে, একশো দিনের প্রকল্পে রাজ্যের খরচের অঙ্ক যাতে কোনও ভাবেই না মেটানো হয়।
বিজেপি সূত্রে খবর, এ ব্যাপারে কথা বলতে আগামী ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজের সঙ্গে দেখা করবেন সুকান্ত। রাজ্য সভাপতিও বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছি। একশো দিনের প্রকল্পে খরচের হিসাব দিতে পারেনি রাজ্য। সেই টাকা রাজ্যকে দেওয়া হবে কি না, তা অবশ্যই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। তবে, বিজেপি মনে করে, ওই টাকা রাজ্যকে দেওয়া উচিত নয়।’’
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, একশো দিনের প্রকল্পে খরচের হিসাব দু’ভাবে হয়েছে। এক, মজুরি বাবদ। দুই, সরঞ্জাম কেনার খরচ। রাজ্যও তাতে খরচ করে থাকে। প্রকল্পের টাকা কী ভাবে খরচ হল, তা অডিট করিয়ে কেন্দ্রকে পাঠানো হয়। বিজেপির দাবি, একশো দিনের প্রকল্পের টাকা হাতে পেয়ে ‘চোরেদের সরকার’ যাতে ফুলেফেঁপে না ওঠে। আবার প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের টাকা আটকে থাকুক, সেটাও তারা মোটেই চায় না। সুকান্ত বলেন, ‘‘আমাদের দাবি, চোরেরা চুরি করেছে বলে শ্রমিকদের টাকা যেন আটকে না থাকে। আমরা চাই, শ্রমিকেরা তাঁদের টাকা পেয়ে যাক। কিন্তু চোরেদের টাকা আটকে দেওয়া হোক।’’ দলীয় সূত্রেই দাবি, সুকান্তের সঙ্গে দিল্লি যেতে পারেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হাজির থাকতে পারেন। যদিও এ ব্যাপারে বিজেপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
আগামী বছর রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। বিজেপি সূত্রের দাবি, রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল নেতৃত্ব প্রবল ভাবে চাইছিলেন, ভোটের আগেই যাতে গ্রামোন্নয়নের তিনটি প্রকল্পে কেন্দ্রের অর্থ আসতে শুরু করে। তার মধ্যে একশো দিনের প্রকল্পও রয়েছে। ‘নাম বদল’ নিয়ে রাজ্যও সুর নরম করে। ভুল শোধরানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। তার পরেই বরাদ্দ টাকা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু ভোটের আগে তৃণমূল সরকার বকেয়া টাকা পেয়ে গেলে তাদের সুবিধা হবে। যা কোনও ভাবেই চাইছে গেরুয়া শিবির। আবার উল্টো দিকে, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা টাকা না পেলে তৃণমূল বড় ‘অস্ত্র’ পেয়ে যাবে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার গ্রামের মানুষের টাকা আটকে রেখেছে বলে শাসকদল প্রচার করলে তাতে বিজেপির বিপদ হতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকেই নতুন দাবি নিয়ে কেন্দ্রের দরবার করতে চাইছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব।