হুড়মুড়িয়ে: ভেঙে পড়ল শালিমার স্টেশনের নির্মীয়মাণ প্ল্যাটফর্ম শেল্টারের ছাদ। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
বছর বারো আগের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে এল শালিমার স্টেশনে। সোমবার বেলা ৩টেয় হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে শালিমারের নির্মীয়মাণ প্ল্যাটফর্ম শেল্টারের প্রায় তিন হাজার বর্গফুটের ছাদ। মৃত্যু হয় এক কর্মীর। অন্য এক জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার পরে ক্ষিপ্ত জনতার বেধড়ক মারধরে গুরুতর আহত হয়েছেন ওই স্টেশনের চিফ ইয়ার্ডমাস্টার।
প্রায় এক যুগ আগে ওই স্টেশনেই একটি ভবন তৈরির সময় ছাদ ভেঙে পড়ায় এক জনের মৃত্যু হয়। সেই দুর্ঘটনার পরে রেল যে যথেষ্ট সতর্ক হয়নি, এ দিনের দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ বলে সংশ্লিষ্ট শিবিরের অভিমত।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খবর, বেলা ৩টে নাগাদ শালিমার স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে প্ল্যাটফর্ম শেল্টারের জন্য সদ্য ঢালাই হওয়া ছাতা-আকৃতির কংক্রিটের ছাদ বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে। নির্মাণকাজ করছিল রেলেরই সংস্থা ইরকন। তাদেরই চার-পাঁচ জন ঠিকা শ্রমিক ও কর্মী তখন ছাদ তৈরির জন্য লাগানো লোহার পাইপের কাঠামো খুলছিলেন। আচমকা বিকট শব্দ শুনে তাঁদের তিন জন কোনও রকমে বেরিয়ে আসেন।
চলছে উদ্ধারকাজ। সোমবার শালিমার স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
পালানোর চেষ্টা করছিলেন দুঃখা চৌপাল এবং আলমগির মল্লিক নামে অন্য দুই কর্মীও। কিন্তু ভেঙে পড়া ছাদের ধাক্কায় ছিঁড়ে যাওয়া হাইটেনশন তারের ক্যান্টিলিভার মাথায় আছড়ে পড়ায় লুটিয়ে পড়েন দুঃখা। প্রায় এক ঘণ্টা পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আলমগিরকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
উদ্ধারকাজে দেরি হওয়ায় জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। স্টেশনের চিফ ইয়ার্ডমাস্টার দুলাল বিশ্বাসকে চড়, ঘুষি, লাথি মারা হয়। বস্তা তোলার বাঁকানো লোহার হুক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয় তাঁকে। পরে রক্তাক্ত ইয়ার্ডমাস্টারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় আরপিএফ। হাওড়ার পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা-সহ সিটি পুলিশের কর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় ঘটনাস্থলে আসেন। এক ঘণ্টা পরে আরপিএফ-কর্মীরা জনতাকে সরিয়ে দেন।
এ দিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজো মণ্ডপের উদ্বোধনের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে বেরনোর সময় শুনি শালিমারে নির্মাণকাজ চলছিল। সেখান থেকে পড়ে গিয়ে এক জন মারা গিয়েছেন। রেলের উচিত এখনি ওঁদের সাহায্য করা। ঘটনার পরেই ওখানে কর্মীদের বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে মন্ত্রী অরূপ রায়কে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। বলেছি, যারা আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আগে হোক। মানুষগুলো আগে বাঁচুক, সুস্থ হোক। পরে রেলের সঙ্গে আমি বুঝে নেব।’’
ভাঙননামা
• স্টেশনের পূর্ব প্রান্তে তৈরি হচ্ছিল প্ল্যাটফর্ম শেল্টার।
• তারই প্রায় ৩ হাজার বর্গফুট ছাদ ভেঙে পড়ে।
• নির্মাতা রেলের ‘ইরকন’।
• তিন মাস আগে কাজ শুরু।
• বৃষ্টির সময় ছাদের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে জল পড়ছিল।
• একটি পিলারের উপরে এত বড় ছাদ! উঠেছে প্রশ্ন।
• ১২ বছর আগে এই স্টেশনেই নির্মীয়মাণ ছাদ ভেঙে মারা যান ১।
• গত বছর সাঁতরাগাছি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ২, আহত ১৪।
কৌশন সিংহ নামে এলাকার এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘তিন মাস আগে ছাদটা ঢালাই করার পরে বৃষ্টির সময় দেখেছি, জল চুইয়ে পড়ছে। মাত্র একটা পিলারের উপরে এত বড় ছাদটা তৈরি করা হয়েছিল। সেই পিলারটাই বসে গিয়েছে মাটিতে।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় শুনি, শালিমারে নির্মাণকাজ চলছিল। এক জন মারা গিয়েছেন। রেলের উচিত এখনই আহতদের সাহায্য করা। মানুষগুলো আগে বাঁচুক, সুস্থ হোক। পরে রেলের সঙ্গে আমি বুঝে নেব।’’
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ অফিসার সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছেন। এই ধরনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’