Wedding Special 2023

সিঁদুর দান — নিছক প্রথা নাকি বর্বরতার ইতিহাস?

Advertisement

এবিপি ডিজিটাল কনটেন্ট স্টুডিয়ো

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ২২:১২
Share:

খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে অর্থাৎ মহাভারতের যুগে শাঁখার ব্যবহার শুরু হয়।

যে কোনও হিন্দু বিবাহের ক্ষেত্রেই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপচার হল শাঁখা ও সিঁদুর। শাস্ত্রে এর বিধানও লেখা রয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের পাতা বলছে অন্য কথা। আসুন দেখে নেওয়া যাক, এই প্রথার নেপথ্যে জড়িয়ে রয়েছে কোন ইতিহাস?

Advertisement

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী ব্রহ্মপুরাণে শাঁখা সিঁদুরের উল্লেখ রয়েছে। পুরাণের পাতা থেকে জানা যায়, শঙ্খাসুরের স্ত্রী তুলসী দেবী ভগবান নারায়ণের আরাধনা করতেন। অন্য দিকে শঙ্খাসুর ছিলেন ভগবানবিমুখ। স্বেচ্ছাচারী শঙ্খাসুরের পাপের শাস্তি হিসাবে তাকে বধ করা হয় এবং ভারত মহাসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পতিব্রতা তুলসী দেবী তা সহ্য করতে না পেরে স্বামী ও নিজের অমরত্বের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা শুরু করেন।

সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান তুলসী দেবীর প্রার্থনা মঞ্জুর করে, তাঁর দেহ থেকে তুলসী গাছ এবং সমুদ্রে মৃত স্বামীর অস্থি থেকে শঙ্খ বা শাঁখা তৈরি করেন। এর পরে, তুলসী দেবীর ধর্মপরায়ণতা দেখে ভগবান দু’জনকেই ধর্মীয় কাজে নিযুক্ত করে দেন। সেই থেকে পতিব্রতা তুলসীকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তুলসী ও শাঁখা ব্যবহারের প্রচলন হয়।

Advertisement

অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে অর্থাৎ মহাভারতের যুগে শুরু হয় শাঁখার ব্যবহার। দাক্ষিণাত্যে প্রায় দু’হাজার বছর আগে থেকেই এই শিল্পের প্রচলন ছিল।

এই পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত হলেও নেপথ্যে রয়েছে আরও অনেক ইতিহাস। যা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ, লিঙ্গ বৈষম্যের বৈশিষ্ট্য বহন করে। ইতিহাসের নানা তথ্য ঘাঁটলে জানা যায়, সিন্ধু সভ্যতারও আগে শাঁখা সিঁদুরের ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়। একটা সময় সমাজে অন্যান্য পণ্যের মতোই নারীদেরও পুরুষের ‘সম্পত্তি’ হিসাবে গণ্য করা হত। আর সেই অধিকারের চিহ্ন স্বরূপ নারীর কপালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করা হত।

আবার এও শোনা যায় পাথর দিয়ে স্ত্রীদের কপালে আঘাত করে রক্তাক্ত, ক্ষত বিক্ষত করা হত। লোহার বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হত হাতে। আর কোমরে শেকল। আর এই সব কিছুই ছিল ‘অধিকৃত’ হওয়ার প্রতীক। পরবর্তীকালে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই সূচকগুলি পরিবর্তিত হয়ে শাঁখা সিঁদুরের প্রথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যেমন ‘লোহা’ থেকেই ‘নোয়া’ কথাটির উৎপত্তি। লোহার বেড়ির আবার আরও একটি অর্থ রয়েছে, ‘আয়স্ত’। এই আয়স্ত থেকেই বিবর্তিত হয়ে এসেছে ‘এয়োস্ত্রী’ শব্দটি। যার অর্থ বিবাহিত মহিলা।

অন্য আরেকটি তথ্য জানান দেয়, প্রাচীনকালে কন্যা হরণের যুদ্ধের সময় জয়লাভকারী যুবক নিজের আঙুল কেটে রক্ত বের করে পরিয়ে দিত কন্যার সিঁথিতে। উদ্দেশ্য, কন্যার উপর নিজের অধিকার স্থাপন। পরবর্তীকালে সেই রক্তফোঁটাই বদলে যায় সিঁদুরে।

এই সিঁদুর মঙ্গলচিহ্ন, পবিত্রতা, স্বামীর আয়ুবর্ধকের প্রতীক নাকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অধিকারবোধ তা নিয়ে বিস্তর মত পার্থক্য রয়েছে। তবে ইদানীং আধুনিক প্রজন্ম নিজেদের মতো করেই বদল এনেছে বিয়ের আসরে। যে প্রথা তাঁদের নৈতিকতায় আঘাত হানছে সেই প্রথা বাতিলের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে ক্রমশ। কোনও রকম ধর্মীয় আঘাত নয়, বরং সংস্কৃতি আর নতুন প্রজন্মের মেলবন্ধনে জন্ম নিচ্ছে এক সামাজিক বিবর্তন।

এই প্রতিবেদনটি ‘সাত পাকে বাঁধা’ ফিচারের অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement