বাঙালি বিয়েতে বছরের পর বছর ধরে রীতি মেনেই কনেদের কাছে গয়না এক আলাদাই ঐতিহ্য ও আবেগ বহন করে আসছে। বিয়েতে কনের গলার যে কোনও গয়নার মতোই হাতের যে কোনও গয়না নির্বাচনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই হাতেই কনে পরেন শাঁখা ও পলা। তার সঙ্গে অবশ্যই থাকবে লোহা বাঁধানো।
তবে বেশিরভাগ বাঙালি বাড়িতেই শাশুড়ি বা শাশুড়ির মা এক জোড়া বালা দিয়ে কনের মুখ দেখেন। এক সময় বাঙালি কনের হাতে অমৃতপাকের বালা, মকরমুখী বালা ও অন্যান্য সাবেকি গয়নাও দেখা যেত। তবে এখনকার কনেরা হালকা গয়নাই বেশি পছন্দ করেন। তাই জেনে নিন বিয়ের জন্যে হাতের কোন কোন গয়নাগুলি আপনার তালিকায় রাখতে পারেন।
মানতাসা: মানতাসা হল অনেকটা রিসলেটের মতো। কিন্তু এই গয়না বেশ ভারী এবং চওড়া। এটি বেশ পুরনো দিনের গয়না। এটি পরা হয় একেবারে কব্জির কাছে। এটি চওড়া ও চৌকো আকৃতির হয় এবং সঙ্গে চেন লাগানো থাকে। চেন দিয়েই এটি আটকানো হয়।
রতনচূড়: নাম যেমন সুন্দর, দেখতেও ঠিক ততটাই সুন্দর এই গয়না। হাতের উপরিভাগ অর্থাৎ তালুর উল্টো দিকে এটি পরা হয়। কব্জির কাছে এটি চুড়ির মতো আটকানো থাকে এবং বাকি অংশ ছড়িয়ে হাতের আঙুলের সঙ্গে লাগানো থাকে। রতনচূড় ছাড়াও একে হাতফুলও বলা হয়।
অমৃত পাকের বালা: খুব সুন্দর দেখতে হয় এই বালা। এই বালা জোড়া পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে নকশা করা হয়। সেই কারণেই একে অমৃতপাকের বালা বলা হয়। অনেক সময় দু’টি মকরের মাধ্যমে বালার মুখ জোড়া থাকে। তাই একে অনেক সময় মকরমুখী বালাও বলা হয়।
অনন্ত বালা বা অনন্ত বাজুবন্ধ: এই গয়না অনেকটা মানতাসার মতো দেখতে। এটি বাজুতে বা হাতের উপরিভাগে পরা হয়। তাই একে বাজুবন্ধও বলা হয়। তবে মানতাসার মতো এটি অত ভারী হয় না।
কঙ্কন: কঙ্কন আসলে এক ধরনের বালা। কিন্তু এই বাঙালি বিয়েতে এই গয়নার নকশা একটু অন্য রকমের হয়। ফিলিগিরি কায়দায় অর্থাৎ উপরের অংশে নকশা খোদাই করে এটি তৈরি হয়।
হাতপদ্ম: কনের হাতের পাতা সাজাতে পারে এই হাতপদ্ম। এই হাতপদ্মর নকশা বেশ অনেকটা ছড়ানো হয়।
সোনার চুড়ি: বিয়েতে বাঙালি কনের সাজে হাতে চুড়ি ছাড়া কিন্তু একেবারেই মানায় না। তাই বালা, চূড়, মানতাসার সঙ্গে কয়েক গাছা সোনার চুড়ি কিন্তু বেশ মানাবে।
চূড়: শুধু চুড়ি দিয়ে তো আর দু’হাত ভর্তি করা যায় না। তার জন্য বাঙালির সম্ভারে যে আরেকটি গয়না রয়েছে। এই গয়নাটি প্রায় সব বাঙালি কনেদেরই একটি অত্যন্ত পছন্দের। হাত ভর্তি এই গয়নার নাম চূড়।
গোলাপ বালা: ফুলের মতো পুরোটা জুড়ে কারুকাজ করা থাকে এই ধরনের বালায়। বতর্মানে এই বালার চল বেশ জনপ্রিয়।
কাঁকন বালা: বাইরের অংশে কিছুটা কোণাকৃতি নকশার এই বালাটিও রয়েছে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে।
দু'মুখো বালা: এই ধরনের বালার সাধারণত দু’টি মুখ থাকে। সিংহের মতো মুখ থাকে যে সব বালায় থাকে সেগুলিকে বলে মকরমুখো বালা। আর ময়ূরের মতো মুখ থাকলে সেগুলিকে বলে ময়ূরমুখী বালা।
পত্র বালা: এই বালা সাধারণত কিছুটা চ্যাপ্টা আকৃতির হয়। বালার দু'পাশ কিছুটা চোখা হয়। তবে অন্যান্য বালার তুলনায় এটি কিন্তু বেশ পাতলা ও হালকা।
বাউটি: সোনায় তৈরি বাউটির নকশা অর্ধেক করা বালার মতো দেখতে হয়। বিয়ে ছাড়া নিত্য ব্যবহারের জন্যও এই বালা আদর্শ।
বেলোয়ারি চুড়ি: এটি এমন এক ধরনের সোনার বালা যেটি ‘বেলোয়ারি’ নামেও পরিচিত। এই বালার আকর্ষণীয় বিষয় হল বিশেষ ধরনের কাটা অংশ।
গালা ভরা বালা: সোনার বালার দৃঢ়তা এবং স্থায়িত্ব বাড়াতে এটিকে গালা দিয়ে পূর্ণ করা হয়৷ এই ধরনের বালা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্যেও উপযুক্ত বিকল্প হতে পারে।