১৩ একরের ক্যাম্পাস। একপাশে ১০০ বেডের চোখের হাসপাতাল। অন্য প্রান্তে স্কুল। লকডাউনে স্কুল বন্ধ। কিন্তু হাসপাতাল চালু পুরোদস্তুর। পুরুলিয়ার বরণডাঙ্গার লোকেশ্বরানন্দ আই ফাউন্ডেশনে কোভিডকালে বন্ধ হয়নি পরিষেবা। বাইরের জগতের সঙ্গে পুরোদস্তুর যোগাযোগ রেখেও ক্যাম্পাসবাসী ৭০ জনের কেউ কোভিড আক্রান্ত হননি। মন্ত্র একটাই। কড়া নিয়ম।
স্বামী লোকেশ্বরানন্দের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত সমমনস্ক একদল মানুষ গড়ে তোলেন ‘নানৃতম’। ‘নানৃতম’-এর ছাতার তলায় গড়ে ওঠে লোকেশ্বরানন্দ আই ফাউন্ডেশন। এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসার জন্য আসেন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিছিয়ে থাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। তাঁরা চিকিৎসা পান বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে। চোখের চিকিৎসার পাশাপাশি গত এক বছর ধরে ত্রাণের কাজও চলছে। এঁদের উদ্যোগে ৪২ টি অক্সিজেন ক্লাব চলছে ৬টি জেলায়। অতিমারির কঠিন সময়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছে খাবার, এঁদের উদ্যোগে।
হাসপাতালে রোগীরা আসছেন। মাস্ক, স্যানিটাইজারের ঘেরাটোপ তো আছেই। তাছাড়াও আছে শারীরিক দূরত্ববিধি। রোগীরা অপেক্ষা করেন যেখানে, ডাক্তাররা বসেন তার অন্তত একতলা ওপরে বা নীচে। ক্যাম্পাসের প্রায় ১০০ জন আবাসিকের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা কমিউনিটি কিচেনে। সেখানেও কড়া নিয়ম। নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী, আনাজপাতি বাইরে থেকে আসা সবকিছু পাঁচদিন নির্দিষ্ট সেলফে রেখে জীবাণুমুক্ত করে তবেই ব্যবহার করা হয়।
খাওয়ার সময় দূরত্ব বজায় রেখে খেতে বসেন এর দল কর্মী, অপেক্ষমান আর এক দল তখন মাস্ক পরেই থাকেন। এক দলের খাওয়া শেষ হলে আর এক দলের শুরু। আবাসিক কর্মী আর অনাবাসিক কর্মীরা কাজ করেন আলাদা আলাদা তলে।
ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা দল। ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসার দল, রিপ্যাকেজিং সেন্টারে নেওয়ার দল, রিপ্যাকেজিং এর দল— সব আলাদা। যে যার নির্দিষ্ট ঘেরাটোপে, সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে কাজ করে চলেছেন। কাজের ফাঁকে চলছে আড্ডাও। কিন্তু সেও মাস্ক পরেই। মানসিক নয় শারীরিক দূরত্বে থেকে। ক্যাম্পাসের খোলা মাঠে।