প্রতিবেদন: প্রিয়ঙ্কর, সম্পাদনা: বিজন
মনোরোগ থেকে সেরে উঠেও এখনও নিজের বাড়িতে পরিবার-পরিজনের কাছে ফেরা হয়নি। সমাজের ‘মূলস্রোত’-এ ফেরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অসম্ভব এক মনোবলকে পুঁজি করে। খুঁজে পেয়েছেন এক নতুন ঘর— ‘প্রত্যয়’। পোশাকি নাম ‘মনোরোগীদের জীবন সহায়তা কেন্দ্র’ বা ‘হাফওয়ে হোম’। আবার নতুন করে গড়ে উঠেছে সখ্য, অভ্যেস হয়েছে নতুন এক যৌথ যাপনের। শুক্রবার সেই প্রত্যয়েরই এক বছর পূর্ণ হল। আর এক বছরের পথ চলাকে উদ্যাপন করতে প্রত্যয়ের আবাসিকেরা আয়োজন করেছিলেন এক সান্ধ্য মজলিশের, যেখানে মুছে গেল ঘর-বাইরের বিভেদ। ‘এলেম নতুন দেশে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আবাসিক ভাস্কর মিত্রের গানে গিটার ধরলেন শিল্পী স্যমন্তক সিংহ। গান গাইলেন চিত্রপরিচালক ও চন্দ্রবিন্দু-খ্যাত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ও। আবাসিকদের নিয়ে নাচের অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন স্মৃতিপর্ণা সেনগুপ্ত। শুক্রবারের প্রধান অতিথি ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব মলয়কুমার দে। তিনি বলেন, “আমি যখন স্বাস্থ্য দফতরে এসেছিলাম, তখন জানা ছিল না যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা এত বড়। সে সময় আর এ সময়ের মধ্যে অনেকটা তফাত। এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। পুরনো অবস্থা যে কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে, সেটাই অনেক বড় ব্যাপার। তাই আজ এখানে এসে সবটা দেখে খুব ভাল লাগছে।” নিজেদের নতুন সংসারের বর্ষপূর্তির উদ্যাপনে ‘প্রত্যয়’ সেজে উঠেছে আবাসিকদের তৈরি ইনস্টলেশনে। ফেলে দেওয়া জিনিস ব্যবহার করে তৈরি ভাস্কর্যে নিজেদের গল্প, চাওয়া-পাওয়ার খতিয়ান এঁকেছেন আবাসিকেরা। আর তাঁদের নেতৃত্বে শিল্পী শ্রীকান্ত পাল, সঙ্গে জুটিয়েছেন অনিতেশ চক্রবর্তী আর অলক হালদারকেও। প্রদর্শনী চলবে এ মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত, রোজ সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।
রাজ্য সরকারের সহায়তায় ও ‘অঞ্জলি’-র চেষ্টায় মনোরোগ থেকে সেরে ওঠা মানুষদের সমাজে পুনর্বাসনে উদ্যোগী ‘প্রত্যয়’। সারা বছরই নানান কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আবাসিকদের জন্য। মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বললেন, “বর্ষপূর্তির এই অনুষ্ঠানে আমরা আমাদের এই এক বছরের পরিক্রমাকে ধরতে চেয়েছি। ক্রমাগত অপরায়ন থেকে একটা প্রান্তিক পরিচিতির মানুষ কী ভাবে মূলধারার সমাজের মুখোমুখি হন, সেটাই মূল বিষয়।”