প্রতিবেদন ও চিত্রগ্রহণ: সৌরভ, সম্পাদনা: সৈকত
‘স্মর-গরল-খণ্ডনং মম শিরসিমণ্ডনম্ দেহি পদপল্লবমুদারম্’
— কথিত আছে, ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্যে রাধার মানভঞ্জন পর্বে যখন কবি জয়দেব গোস্বামী ‘স্মর-গরল-খণ্ডনং মম শিরসিমণ্ডনম্’— পর্যন্ত এসে থেমে গিয়েছিলেন, যখন তাঁর হাত আর সরছিল না, তখন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণই নাকি এই ধরাধামে এসে লেখনীর শেষাংশ রচনা করেছিলেন। ভক্তকুল মনে করে, কবি জয়দেবের ভক্তিরসের কাছেই নিজেকে সমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। কবি জয়দেবকে নিয়ে আরও যে সব জনশ্রুতি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি ‘মকরসংক্রান্তির স্নান’। প্রাচীন নথিপত্রে যে তথ্য পাওয়া যায়, সেখানে উল্লেখ রয়েছে— ‘মা গঙ্গার স্বপ্নাদেশেই অজয় নদে মকরস্নান করেন কবি জয়দেব’। আর সেই থেকেই পৌষে অজয়ের তীরেই শুরু হয় মকরসংক্রান্তির মেলা, যা বিশ্ব পরিচিত পেয়েছে জয়দেবের মেলা নামে।
কবি জয়দেব নিজে ছিলেন গীতিকার এবং গায়ক। রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেব গাইতে পারতেন ‘পটমঞ্জরী’ রাগ। তাঁর শিষ্য ছিলেন বাউল দাস।
একাদশ শতকের কবি জয়দেবকে উৎসর্গিত এই মেলা এখন ‘আন্তর্জাতিক বাউলক্ষেত্র’। গ্রামীণ মেলায় শহর এসে ভিড় করে মূলত মাটির টানেই। বাউলের মেলায় এখনও রসিকজনের রসনাতৃপ্তি ঘটে মনের মানুষ আখড়ায়। ‘সহজ হও/সরল হও/মানুষ ধরে/মানুষ হও’— সাধন দাস বৈরাগ্যের এই আদর্শই বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সাধনসঙ্গিনী মাকি কাজুমি।