ঘুম ভাঙতেই সামনে ‘সোনার পাহাড়’, যাবেন নাকি ঝান্ডি? ছবি: সংগৃহীত।
পুজোর সময় শহরের কোলাহল, ভিড়, জমায়েত থেকে অনেক দূরে যেতে মন চাইছে? মন ভাল নেই শহরবাসীর। আর মন ভাল করার দাওয়াই হতে পারে ভ্রমণ। এ দিকে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা মানেই তো এখন অন্তত তিন-চার মাস আগে থেকে তোড়জোড়। পুজোর সময় হলে তো আরও চাপ। অফিসের শত কাজ, ব্যবসা সামলে অত আগে অনেকেই ভেবেই উঠতে পারেন না, কী করবেন, কোথায় যাবেন। শেষ মুহূর্তে ট্রেন বা প্লেনের টিকিট পাওয়াটাও বড় ব্যাপার। সেই ঝক্কি না নিয়ে নিজের গাড়ি বা ভাড়াগাড়িতে চড়েই ঘুরে আসতে পারেন স্বল্পচেনা নিরালা আশ্রয়ে।
গন্তব্য হতে পারে ঝান্ডি। ডুয়ার্সের অন্তর্গত স্বল্পচেনা এই গ্রামে এখনও পর্যটকদের তেমন ভিড় চোখে পড়ে না। উত্তরবঙ্গের সমতলের শেষ আর পাহাড়ের শুরু যেখানে, ঝান্ডির অবস্থান সেখানেই। গরুবাথান হয়ে লাভা যাওয়ার পথে পড়ে ঝান্ডি। শান্ত, নিরিবিলি ঝান্ডির প্রধান আকর্ষণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০০ ফুট উঁচু এই পর্যটন স্থান থেকে দেখতে পাওয়া অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং একই সঙ্গে সমতলে বিস্তৃত ডুয়ার্সের ঘন সবুজ জঙ্গল ও তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা নদীর আঁকাবাঁকা গতিরেখা। পাহাড়-নদী-জঙ্গলের এক অদ্ভুত সমাগম। সূর্যের আলো যখন সাদা বরফের চাদরে ঘেরা কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরে এসে পড়ে, তখন মনে হয় ঠিক যেন সোনার পাহাড়। নদীর স্রোতের সঙ্গে সূর্যরশ্মির লুকোচুরি, সে-ও এক দেখার মতো দৃশ্য।
রাতের বেলা ঝান্ডি থেকে বিস্তৃত সমতল জুড়ে জ্বলে ওঠা আলোর রাশি দেখলে মনে হবে, দীপাবলি। ঝান্ডির আর এক আকর্ষণ চেনা-অচেনা বিদেশি পাখি। যাঁরা পাখি দেখতে ভালবাসেন, এই স্থান তাঁদের নজর কাড়বেই।
মেঘলা দিনেও অন্য রূপে সেজে ওঠে ঝান্ডি। মেঘ-কুয়াশার জাল, বৃষ্টিফোঁটার শব্দ, গাঢ় সবুজ গাছপালা, সোঁদা গন্ধওয়ালা ভিজে ঠান্ডা বাতাস— এই সব নিয়েই বর্ষার ঝান্ডি অপরূপ। বর্ষার সময় চা-বাগানের ভেজা মাটির গন্ধও মনমাতানো। বৃষ্টির দিনে পাহাড়ের কোলে দু’দণ্ড নিজের মতো সময় কাটানোর আদর্শ গন্তব্য ঝান্ডি।
পাহাড়-নদী-জঙ্গলের এক অদ্ভুত সহাবস্থানের ছবি চোখে পড়ে ঝান্ডিতে। ছবি: সংগৃহীত।
ঝান্ডির সর্বোচ্চ ‘ভিউ পয়েন্ট’ ঝান্ডিদারায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের চমৎকার রূপ উপভোগ করা যায়। লাভা থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে ঝান্ডি। ফলে এখান থেকে সহজেই লাভা-লোলেগাঁও-রিশপ বেড়িয়ে আসতে পারেন। ঘুরে দেখতে পারেন গরুবাথান পিকনিক স্পট ও সামাবিয়ং চা-বাগান। ঝান্ডি থেকে ঘুরে আসতে পারেন প্রাচীন ভোট রাজার দুর্গ ডালিম ফোর্ট, কিংবা গিঁটখোলা থ্রি সিস্টার ওয়াটার ফলস্।এখানে একই জায়গায় তিনটে আলাদা আলাদা জলপ্রপাত আছে। সাধারণত যা বিরল। খুব বেশি বেড়ানোর ইচ্ছে না হলেও হোমস্টের জানলা থেকেই উপভোগ করতে পারেন কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ শোভা।
কী ভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?
কলকাতা থেকে বাস কিংবা গাড়িতে চেপে নিউ জলপাইগুড়ি পৌছে যেতে পারেন। সেখান থেকে ঝান্ডির দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া ২,০০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা। ঝান্ডি গেলে বেশির ভাগ মানুষ ইকো হাটেই দিন কাটান। এ ছাড়াও এখানে কটেজ, হোমস্টে, কাঠের কটেজ রয়েছে। সেখানেও আপনি রাত্রিবাস করতে পারেন। এই সব জায়গায় থাকা-খাওয়ার খরচ জনপ্রতি দৈনিক ১,৫০০ টাকা থেকে শুরু।