কালনার ১০৮ শিব মন্দির।
শীত পড়তেই মন বাঙালির মন বেড়াতে যাওয়ার জন্য ছটফট করে। লম্বা সফরে যেতে না চাইলে রাজ্যের মধ্যেই অনেক বেড়ানোর জায়গা রয়েছে। এ বার শীতে গন্তব্য হতে পারে পূর্ব বর্ধমান। শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমান জেলায় ধান,আলুর পাশাপাশি আছে ঐতিহাসিক স্থান। আছে বেড়ানো বা পিকনিক করার মনোরম স্থান। কলকাতা থেকে ট্রেন কিংবা বাসে সহজেই বর্ধমান যাওয়া যাবে। জেনে নিন কোন কোন জায়গা বে়ড়ানোর তালিকায় রাখবেন।
১। বিজয়তোরন
শ্রী বিজয় চাঁদ মহাতাবের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে, বর্ধমানের মহারাজা ১৯০৩ সালে জিটি রোড এবং বিসি রোডের সংযোগস্থলে এই বিশাল তোরণটি তৈরি করেছিলেন। ১৯০৪ সালে তৎকালীন ভিসরয় লর্ড কার্জনের সফরের সময় তোরণটি ‘কার্জন গেট’ নামকরণ হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী যুগে, এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘বিজয় তোরণ’।
২। সর্বমঙ্গলা মন্দির
১৭০২ সালে মহারাজা কীর্তিচাঁদ সর্বমঙ্গলা মন্দির নির্মাণ করেন। সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি প্রায় ১০০০ বছর পুরনো। এটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবরত্ন মন্দির।
৩। শের আফগানের সমাধি
শের আফগানের সমাধিটি রাজবাটির কাছে পীর বাহারমের পাশে অবস্থিত। ১৬১০ সালে বর্ধমান রেলওয়ে স্টেশনের কাছে যুদ্ধে কুতুবউদ্দিন খান এবং শের আফগান নিহত হয়েছিলেন। সমাধিগুলি বর্ধমান রাজা তৈরী করেন।
রমনার বাগান।
৪। রমনার বাগান
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের কাছে অবস্থিত। পার্কের হরিণের সংখ্যা এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। এলাকাটি প্রায় ১৪ হেক্টর। চিতাবাঘ, ভাল্লুক, কুমির, দাগযুক্ত হরিণ, নানা রকম পাখিও রয়েছে।
৫। টাউন হল
১৮৯০ এবং ১৮৯৪ এর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল এবং সেই ভগ্নাংশের সংরক্ষণের ভার রয়েছে পুরসভার হাতে। ১৯৯০ সালে পুরসভা বোর্ড হলটি পুনরুদ্ধার করে।
৬। কৃষ্ণসায়র উদ্যান
১৬৯১ সালে, তৎকালীন বর্ধমান রাজা, কৃষ্ণসায়রে প্রায় ৩৩ একর জমিতে একটি বিশাল কৃত্রিম হ্রদ নির্মাণ করিয়ে ছিলেন। প্রাকৃতিক দৃশ্য সহ এটি জনপ্রিয় উদ্যান। পার্কের কেন্দ্রে একটি বিশাল দিঘি আছে।
কৃষ্ণসায়র উদ্যানের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
৭। খাজা আনোয়ার বেড় (নবাব বাড়ি)
বর্ধমান শহরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত এবং প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। এই নির্মাণটি চার দিকে উঁচু দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত এবং এই ভবনের স্থাপত্য শৈলী ইন্দো-সিরিয়ান স্থাপত্যের নিখুঁত মিশ্রণ। এর ভিতরে একটি উইন্ড-হলের বা হাওয়াঘরের মাঝখানে একটি গভীর পুকুর রয়েছে।
৮। গোলাপবাগ ক্যাম্পাস
গোলাপের বাগান, একটি প্রিয় পর্যটন স্থান। ১৮৮৩ সালে রাজা বিজয় চাঁদ মাহাতাব প্রতিষ্ঠিত বোটানিকাল এবং প্রাণীবিদ্যা সম্পর্কিত উদ্যান। বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডালটন হুকার এখানে এসে ১২৮ ধরনের গাছ তালিকাভুক্ত করেছিলেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লেক্সে ক্লাসও নেওয়া হয়।
বর্ধমান শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আউশগ্রামেও ঘুরে আসতে পারেন। সেখানেও রয়েছে বেশ কিছু দ্রষ্টব্য স্থান। তালিকায় রাখতে পারেন চাঁদনী পার্ক (জলটুঙ্গি) এবং ভাল্কি মাচান। চাঁদনী পার্ক একটি ছোট হ্রদের মাঝখানে দিকনগর গ্রামে অবস্থিত । ১৭১০সালের মহারাজা কীর্তিচাঁদ নির্মাণ করেন। প্রকৃতির মধ্যে নিরিবিলি অঞ্চল ভাল্কি মাচান। এটি ভাল্কি গ্রাম থেকে ২ কিলোমিটার দূরে প্রতাপপুর বন সংলগ্ন। এখানে প্রাচীন প্রহরী দুর্গের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। জায়গাটি বনভোজন করার জন্য আদর্শ।