তুষারধবল: সিকসিন থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা
উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলার অন্তর্ভুক্ত ‘সিকসিন’ একটি ছোট্ট গ্রাম। জায়গাটি মংপু থেকে ছ’কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এখানে সকালের ঘুম ভাঙে পাখির মিষ্টি ডাকে। প্রকৃতি ও পাখির ছবি তোলার জন্য আদর্শ জায়গা।
সকালের গরম চায়ের পেয়ালা হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালে চোখের সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য মন ভরিয়ে তোলে। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে মনে হয়, আকাশ যেন কালো চাদরে চার দিক থেকে আমাদের জড়িয়ে আছে। আর নীচের ছোট ছোট গ্রামগুলির আলো দেখে মনে হয় আকাশের তারাগুলো পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে। এই দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না!
এখানকার মানুষের আতিথেয়তা এতটাই মনকে ছুঁয়ে যায় যে, বারবার আসতে ইচ্ছে করে। এখান থেকে দার্জিলিং নয়তো লামাহাটা তিনচুলের দিক থেকেও সারা দিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। সিকসিন জায়গাটি সেঞ্চল ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির অন্তর্ভুক্ত। এখানে একটি জাঙ্গল ট্রেকও আছে।
সকালে এনজেপিতে নেমে গাড়ি করে গেলাম সিকসিনের উদ্দেশে, যাওয়ার পথে সেবক মায়ের দর্শন করে নিলাম। সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে সিকসিন পৌঁছতে। মংপু থেকে যত উপরে উঠছি, ঘন মেঘ ততই যেন আমাদের ঘিরে ধরতে লাগল। গাড়ি থেকে আমরা যখন নামলাম, চারদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ। তার সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। ওখানে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সেঞ্চল ওয়াইল্ড লাইফের সফরে। প্রায় দেড় ঘণ্টা মতো এই ট্রেকিং -পথ। এক দিকে পাহাড়ের জঙ্গল, অন্য দিকে খাদ আর মাঝখানে সরু মাটির রাস্তা ধরে আমরা এগিয়ে চললাম। বেশ গা ছমছমে ভাব আর রোমাঞ্চকর অনুভূতি হতে লাগল। আমরা যখন জঙ্গলের মাঝামাঝি, তখন মনে হল, মেঘ যেন পুরো রাস্তাটা আমাদের ঘিরে আটকে রেখেছে। সামনে-পিছনে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না, তবুও আমরা না থেমে গাইডের সঙ্গে এগিয়ে চললাম। এই জঙ্গলে রয়েছে চিতা বাঘ, ভল্লুক, বন্য শূকর ইত্যাদি। আমাদের ট্রেকিং যখন শেষ হল, ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি বিকেল পাঁচটা বেজে গিয়েছে। হেঁটে আমাদের হোমস্টেতে ফিরতে আরও প্রায় ১৫-২০ মিনিট মতো লাগবে। পুরো রাস্তা মেঘে ঢাকা। কোনও রকমে ধীরে ধীরে রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে আমরা বাড়ি ফিরলাম।
উঁকিঝুঁকি: এমন অনেক পাখির দেখা মেলে
পরের দিন সকালে জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম লামাহাটা পার্কের উদ্দেশে। সুন্দর সাজানো এই পার্কটি। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম পরের গন্তব্য লাভার্স পয়েন্ট এবং তার সঙ্গে তিস্তা ও রঙ্গিত নদীর সঙ্গমস্থল দেখতে। এর পর পেশক চা বাগান এবং তিনচুলে দেখে বিকেলের মধ্যে আমরা ফিরে এলাম। ফিরে আসার দিন বেরোনোর আগে বাড়ির মালকিন আমাদের সকলকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানালেন। এই সফরে এটা আমাদের কাছে সব চেয়ে বড় পাওনা। ওখান থেকে বেরিয়ে গেলাম মংপুতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি। খুব সুন্দর ছোট বাড়িটি, অজানা ইতিহাসের যেন পাতা উল্টে দেখলাম। এর পর যোগীঘাট হয়ে গেলাম সিটং-এর কমলালেবুর বাগানে। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ অবধি সিটং-এ গাছভর্তি কমলালেবু বাহার।
দার্জিলিং তো কত বার যাওয়া হয়! ঝটিকা সফরে সিকসিন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কিন্তু একেবারে আলাদা...