Travel

গ্রামে ঘেরা অযোধ্যা পাহাড়

শুধু পাহাড় নয়, পুরুলিয়ার এই পাহাড় লাগোয়া গ্রামগুলিও পর্যটকদের আকর্ষণ, সৌন্দর্যের সম্পদএ জায়গা যেতে হলে মোটা টাকা খরচের দরকার নেই। নেই আগাম বড় পরিকল্পনারও। সপ্তাহান্তেই ঘুরে আসা যায়।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৫৪
Share:

চোখজুড়োনো: অযোধ্যা পাহাড়ের উপরে মার্বেল ফলস

বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে/ বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে/ দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু/ দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/ একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু...

Advertisement

এ জায়গা যেতে হলে মোটা টাকা খরচের দরকার নেই। নেই আগাম বড় পরিকল্পনারও। সপ্তাহান্তেই ঘুরে আসা যায়। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের নাম সকলের জানা। কিন্তু পাহাড় লাগোয়া গ্রাম বেগুনকোদরের অপরূপ সৌন্দর্য অনেকেরই অজানা। বেগুনকোদর নামটা শুনলেই গায়ের রোম খাড়া হয়ে যায়। সন্ধের পরে গা ছমছমে অন্ধকারে আজও একাকী দাঁড়িয়ে থাকে বেগুনকোদর। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে যা ‘ভূতের স্টেশন’ বলেই পরিচিত। তবে এখানকার অপরূপ সৌন্দর্যের পরশ পেতে হলে যেতে হবে স্টেশন থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে বেগুনকোদর গ্রামে। এই গ্রামেই রয়েছে প্রায় চল্লিশ বিঘা বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে থাকা রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের অধীনস্থ সামগ্রিক এলাকা উন্নয়ন পর্ষদের (সিএডিসি) বিশাল খামার। একই ছাদের তলায় জৈবপদ্ধতিতে আনাজ, মৎস্যচাষ থেকে শুরু করে পশু, পাখি পালনের বিশাল কর্মক্ষেত্র। পাহাড়ের সামনে ঘৃতকুমারী বা অ্যালো ভেরা ও ড্রাগন ফলের চাষ দেখে মন ভরে যায়। খামারের মধ্যেই রয়েছে ন্যায্যমূল্যে আকর্ষক থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা।

হাওড়া থেকে রাতের ট্রেনে সপ্তাহের শেষে সপরিবার বেরিয়ে পড়েছিলাম পুরুলিয়া। পুরুলিয়া থেকে গাড়িতে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে পৌঁছে গেলাম বেগুনকোদর গ্রামে। পাহাড়ি রাস্তার গায়ে লেগে থাকা ছোট ছোট গ্রাম। বেগুনকোদর গ্রামের লাগোয়া অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে মুরগুমা গ্রাম। এই গ্রামের পাশে সাহারজোড় নদীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক সুন্দর জলাধার বা ড্যাম। শান্ত লেকের জলে ছায়া ফেলে পাহাড়ের ছবি। চারপাশে শাল, পিয়ালের জঙ্গল। শহরের কোলাহল এড়িয়ে নিস্তব্ধ, নির্জন মুরগুমা ড্যামের ধারে বসে থাকলে যাবতীয় অবসাদ যেন ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায়।

Advertisement

সর্পিল: পথ গিয়েছে বেঁকে

মুরগুমা ড্যাম থেকে অযোধ্যা হিলটপের দূরত্ব সতেরো কিলোমিটার। ড্যামের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে রাস্তা এঁকেবেঁকে উঠে গিয়েছে অযোধ্যা হিলটপে। গাড়িতে যেতে যেতে পাহাড়ের কোলে থাকা গ্রামের ছবি দেখে অজানা সৌন্দর্যের শরিক হবেন। বামনি ফলস, সুইসাইডাল পয়েন্ট, পাখিপাহাড়, আপার-লোয়ার ড্যাম, তুর্গা ড্যাম দেখার পরে আর ফিরে আসতে ইচ্ছে করছিল না। এক রাত বেগুনকোদরে কাটিয়ে সারা দিন অযোধ্যা পাহাড়ের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে সন্ধেয় পৌঁছলাম অযোধ্যা হিলটপে পঞ্চায়েত দফতরের অধীনস্থ সিএডিসি-র মনভোলানো অতিথিশালায়। তার চারপাশ জুড়ে রয়েছে বেগুনকোদরের মতোই বিস্তীর্ণ খামারে জৈবচাষ। কড়কনাথ, বনরাজা মুরগি, টার্কি, এমু পাখি, রাজহাঁসের দল ক্যামেরাবন্দি করতে ভিড় দেখার মতো।

বেগুনকোদর বা অযোধ্যা টপ হিল, দু’টি ক্ষেত্রেই অতিথিশালায় দু’বেলা থাকে লোভনীয় খাবারের পদ। জৈবচাষের আনাজের রান্নার স্বাদ ভোলার নয়। আগাম অর্ডার দিলে মেনুতে মিলবে কড়কনাথ, বনরাজা, কোয়েল, টার্কি বা এমু পাখির মাংস। পরের দিন কলকাতা ফেরার পথে সকালে অযোধ্যা পাহাড়ের বুকে ‘কুমারিকানন’ গ্রাম না দেখলে বেড়ানো অপূর্ণ থেকে যাবে। এখানেও থাকার জন্য রয়েছে সুন্দর তাঁবুর ব্যবস্থা। বসন্তকালে গোটা এলাকা জুড়ে পলাশফুলে লাল হয়ে যায়। তবে শুধু বসন্তে নয়, সারা বছরেই অযোধ্যা পাহাড় ঘুরে আসা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement