বর্ষার কেওনঝড়, চোখ ফেরানো কঠিন। ছবি: সংগৃহীত।
মেঘলা দিন ঘরে একলা মন না টিকলে বেরিয়ে পড়তেই পারেন কোথাও। হাতে ছুটি কম থাকলেও কোনও অসুবিধা নেই। ছোট্ট ছুটিতে দিব্যি ঘুরে নেওয়া যাবে ওড়িশার কেওনঝড় জেলার আনাচ-কানাচে।
সবুজ পাহাড়, ছোট-বড় জলপ্রপাত, চড়াই-উতরাই পথে ভরা এই এলাকায় বর্ষায় ভ্রমণের আনন্দটাই আলাদা। চওড়া রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পড়বে নানা আকারের সব পাহাড়। মেঘলা দিনে সেই পথে সঙ্গী হতে পারে রিমঝিম বৃষ্টিও। কেওনঝড় থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল। সেই পথে মন্দির যেমন পাবেন, তেমনই আছে জলপ্রপাত। কোনওটাই কিন্তু রাস্তার উপরে নয়। রাস্তা ছেড়ে হেঁটে যেতে যেতে হবে জঙ্গলের পথে। রাস্তায় পড়বে হাতির করিডর-ও। কী কী দেখবেন?
খণ্ডধর জলপ্রপাত
চারপাশে সবুজ পাহাড়। তার গায়ে উঠে গিয়েছে লম্বা সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে গেলেও অসুবিধা নেই। বিশ্রাম নেওয়ার সময় দেখা মিলবে উঁচু থেকে নামছে খণ্ডধরের জলপাশি। এই সমস্ত জলপ্রপাত বর্ষার জলে পুষ্ট। ফলে, বেশ কিছু দিন প্রবল বৃষ্টির পর যদি কেওনঝড়ের এই সমস্ত জায়গায় ঘোরা যায়, তা হলে জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে সবচেয়ে বেশি।
হান্ডিভাঙা জলপ্রপাত
খণ্ডধর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে এই জলপ্রপাত। এটি দেখতে গেলেও জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বেশ অনেকটা পথ যেতে হবে। যাওয়ার পথেই পড়বে পাথুরে জমির উপর বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদী। ইতিউতি জলস্রোত। জলপ্রপাতটি বিশাল বড় না হলেও বর্ষায় ধোয়া প্রকৃতির মাঝে এটি দেখতে বেশ মনোরম। এখানকার মজা হল, শান্ত নিরিবিলি জঙ্গলপথের মধ্যে থেকে একটা একটা করে জলপ্রপাত খুঁজে নেওয়া।
বড়াঘাগরা ও সানঘাঘরা
জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ের কোলে বড়াঘাঘরা। রয়েছে একটি জলাধারও। বর্ষায় বড়াঘাগরা জলপ্রপাতের কাছে যেতে হলে হেঁটেই পার হতে হবে ছোট্ট একটি নদী। চার পাশ ঘন সবুজ, পাখির ডাক, তার মধ্যেই নিজের মতো ছন্দে পাহাড় থেকে নামছে বড়াঘাগরা। ঘুরে নেওয়া যায় সানঘাঘরাও। কেওনঝড় থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এই জলপ্রপাতটি।
গুন্ডিচাঘাঘি জলপ্রপাত
কেওনঝড়ের গুন্ডিচাঘাঘি জলপ্রপাত। ছবি: সংগৃহীত।
এই জলপ্রপাতকে অনেকে ‘ওড়িশার নায়াগ্রা’-ও বলে থাকেন। ঘাঁটাগাও তারিণী মন্দির থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে গুন্ডিচাঘাঘি। মুসালা নদীর ওপর এই জলপ্রপাত। ধাপে ধাপে জল পড়তে থাকায় এই জলপ্রপাত দেখতে বড্ড ভাল লাগে। কেওনঝড় থেকে গুন্ডিচাঘাগি জলপ্রপাতের দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার।
ভীমকুণ্ড
কেওনঝড় থেকে ঘুরে নিতে পারেন ভীমকুণ্ড। ছবি: সংগৃহীত।
বর্ষায় ভীমকুণ্ডের রূপ এতটাই সুন্দর যে, চোখ ফেরানো মুশকিল। বিস্তৃত জায়গার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে জলস্রোত। দূর থেকে ভেসে আসে জলের প্রবল শব্দ। এক পাথর থেকে অন্য পাথরে ধাক্কা খেয়ে ফেনিল জলরাশি বয়ে চলেছে। জলস্রোত পাহাড় থেকে নামছে। বয়ে চলেছে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে। কেওনঝড় থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে ভীমকুণ্ড। ভরা বর্ষায় এর রূপ না দেখলে কেওনঝড় ভ্রমণই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। লোককথা বলে, পাণ্ডবরা এই স্থানে কোনও সময় ছিলে। তার থেকেই এর নাম হয়েছে ভীমকুণ্ড। এখানে রয়েছে বিশাল একটি ভীমের মূর্তিও।
যেতে হলে বর্ষার কোন সময়টি বাছবেন
খাতায়কলমে জুন থেকে বর্ষা শুরু হলেও, বৃষ্টি না পড়লে কিন্তু এই সমস্ত জলপ্রপাতের অসাধারণ সৌন্দর্য সম্পূর্ণ ভাবে উপভোগ করা যায় না। তাই বেশ কিছু দিন প্রবল বৃষ্টি হওয়ার পরই এখানে যাওয়া ভাল। বর্ষায় জলপ্রপাত যতটা সুন্দর, ঠিক ততটাই সুন্দর যাত্রাপথের দৃশ্যও।
কী ভাবে যাবেন
কেওনঝড় নানা ভাবে যাওয়া যায়। ট্রেনে বারবিল স্টেশনে নেমে সেখান থেকে কেওনঝড় পৌঁছে যাওয়া যায়। বারবিল থেকে কেওনঝড়ের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। আবার খুরদা রোড স্টেশনে নেমে সেখান থেকে কেওনঝড়ের ট্রেনও পাওয়া যায়। সড়কপথেও কলকাতা থেকে কেওনঝড় যাওয়া যায়। দূরত্ব ৩৪৫ কিলোমিটারের কাছাকাছি। ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগবে যেতে।
কেওনঝড়ে থাকার জায়গা
নানা মানের হোটেলের পাশাপাশি ওড়িশা সরকারের ‘পান্থ নিবাস’ রয়েছে থাকার জন্য।