ট্রেনের টিকিট ছাড়াই পুজোয় ঘুরে আসতে পারেন, কিন্তু কী ভাবে? ছবি: সংগৃহীত।
পুজোর ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার শখ। কিন্তু ছুটি পাবেন কি পাবেন না ভেবে আগে থেকে কোনও পরিকল্পনা করে রাখতে পারেননি। অনেকেই হয়তো জানেন পুজোর সময় ঘুরতে যাওয়ার আলাদা একটা হিড়িক থাকে। তাই তৎকালে টিকিট কাটার বাড়তি খরচ করতে না চাইলে মাস তিনেক আগে থেকেই ট্রেন কিংবা বিমানের টিকিট কেটে রাখতে হয়। বুকিং করে রাখতে হয় সেখানে গিয়ে থাকার হোটেলও। সাত-পাঁচ না ভেবে তাই হিল্লি-দিল্লি নয়, বাঙালির ‘দিপুদা’র কথাই প্রথম মাথায় এসেছে। ছোট থেকে শুনে এসেছেন দিঘা, পুরী, দার্জিলিং না কি বাঙালির কাছে হাতের তালুর মতো। পৌঁছতে পারলে ঠিক একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই জুটে যায়। এখন গুপী-বাঘার মতো হাতে হাতে তালি দিলেই তো মন যেখানে চায় সেখানে পৌঁছে যাওয়া যাবে না। তা হলে উপায়টা কী?
পিঠে চড়িয়ে দিঘার সমুদ্রের ধারে ছবি তোলার অপেক্ষায় ঘোড়া। ছবি: সংগৃহীত।
দিঘা
দিঘার নাম শুনে অনেকেই হয়তো নাক সিঁটকোন। তবে পুজোর ক’টা দিন কোথাও ঘুরতে না গিয়ে মন খারাপ করে বাড়িতে বসে থাকার চেয়ে দিঘা যাওয়া অনেক ভাল। এমনিতেই অফিস যাওয়ার সময়ে নিত্য দিনই ধর্মতলার কাছে গেলে ‘দিঘা-তাজপুর-মন্দারমণি’ যাওয়ার জন্য হাঁক পাড়েন বাসের মালিক থেকে কন্ডাক্টরেরা। আর কিছু না হলে লোটা-কম্বল গুছিয়ে নিয়ে সেই সব বাসে কিন্তু উঠে পড়াই যায়। সংরক্ষিত আসন না পেলেও ট্রেনে করে গেলে বাসের মতো কষ্ট পেতে হয় না। সাধারণত কলকাতা থেকে দিঘা যেতে হলে হাওড়া থেকে স্লিপার ক্লাসে রিজার্ভেশন ভাড়া লাগে ১২০ টাকা। সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা। অন্য দিকে, ধর্মতলা থেকে দিঘা যাওয়ার বাসও পাওয়া যায়। বাস ভাড়া ১৫০ টাকা। সময় লাগে খানিক ট্রেনেরই মতো, ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। এই ট্রেন বা বাসে চেপে সরাসরি দিঘা পৌঁছতেই পারেন। কিন্তু যখন ট্রেনে রিজ়ার্ভেশন পাবেন না, বা বাসের টিকিটও মিলবে না, তখন কী করবেন? উপায় একমাত্র লোকাল ট্রেন। এ ক্ষেত্রে প্রথমে হাওড়া স্টেশন থেকে মেদিনীপুর, খড়্গপুর বা পাঁশকুড়াগামী কোনও লোকাল ট্রেন ধরতে হবে। এতে টিকিট ভাড়া পিছু লাগবে ১৫ টাকা। ট্রেনে হাওড়া থেকে পাঁশকুড়া জংশন পৌঁছতে সময় লাগবে মোটামুটি দেড় ঘণ্টা। এর পর পাঁশকুড়া থেকে দিঘাগামী যে কোনও লোকাল ট্রেন ধরলেই হবে। ট্রেনগুলি মোটামুটি ফাঁকাই থাকে।
ট্রেন ছাড়াও বাসে করে পৌঁছে যেতে পারেন পুরীর সমুদ্রতটে। ছবি: সংগৃহীত।
পুরী
উঠল বাই তো কটক যাই। এই কথাটা এমনি এমনি প্রচলিত হয়নি। বাঙালির কাছে কটক, ভুবনেশ্বর বা পুরী এতটাই সহজলভ্য। ধর্মতলা চত্বর থেকে নিয়মিত কটক, ভুবনেশ্বর বা পুরী যাওয়ার বাস ছাড়ে। চাঁদনি চক, ধর্মতলা, শিয়ালদহ বা পার্ক স্ট্রিট চত্বরে যদি অফিস হয়, তা হলে আলাদা করে ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। পঞ্চমী কিংবা ষষ্ঠীর দিন কাজ সেরে, রাতের খাবার খেয়ে বাসে উঠে পড়তেই পারেন। আরামদায়ক, এসি স্লিপার বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। রাত ১০-১১টায় বাসে উঠলে পরের দিন ভোরবেলাতেই সমুদ্রের গর্জন কানে আসবে। তবে বাসে করে বেশি ক্ষণের যাত্রা করার অসুবিধা হল শৌচাগার না থাকা। মাঝরাতে দু’বার গাড়ি পেট্রোল পাম্পে গিয়ে দাঁড়ালে তখন নেমে কাজ সেরে নেওয়া যায়। তবে তা সকলের পক্ষে সুবিধাজনক নয়।
‘বন্দে ভারত’ চেপে ৬ ঘণ্টায় পুরী পৌঁছনোর ইচ্ছে থাকলেও শেষ মুহূর্তে কিছু করার উপায় থাকে না। আগে থেকে টিকিট কাটা না থাকলে একটু বুদ্ধি খরচ করলে লোকাল ট্রেনেও পুরী পৌঁছতে পারেন। তাতে সময় একটু বেশি লাগে। সকালবেলা হাওড়া থেকে খড়্গপুরগামী যে কোনও লোকাল ট্রেনে উঠে পড়ুন। এ বার সেখান থেকে প্রায় প্রতি দিনই দুপুর আড়াইটে নাগাদ খড়্গপুর-পুরী প্যাসেঞ্জার ট্রেন ছাড়ে। এ ছাড়া, হাওড়া থেকে ভুবনেশ্বর পৌঁছে, সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে পুরী পৌঁছতে পারেন। সময় লাগবে ঘণ্টা দুয়েকের মতো।
সুযোগ থাকলে দার্জিলিঙে টয় ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই ফিরবেন। ছবি: সংগৃহীত।
দার্জিলিং
ছোটবেলায় শুনেছিলেন, রকেট বাসে চেপে বাবার বন্ধুরা সকলে মিলে দার্জিলিং গিয়েছিলেন। রকেটে চেপে তো মহাকাশচারীরা পৃথিবী ছেড়ে অন্য গ্রহে পাড়ি দেয়। কিন্তু স্বপ্নে দেখেছিলেন সেই রকেটে চেপেই আপনি সোজা গিয়ে ল্যান্ড করছেন টাইগার হিলের চূড়োয় গিয়ে। যাক সে কথা! কিন্তু এখন তো পদাতিক, কাঞ্চনকন্যা, দার্জিলিং মেল— সবই হাতের নাগালের বাইরে। তা হলে কি ছোটবেলার স্বপ্ন এই বয়সে এসে পূর্ণ হতে চলেছে? ধর্মতলা চত্বর থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রকেট বাস আছে তবে তা সাধারণ দূরপাল্লার বাসের মতোই দেখতে। এসি বাসগুলিতে শুয়ে শুয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। ভাড়া মোটামুটি ১২০০ টাকা থেকে শুরু। তবে নামতে হবে শিলিগুড়িতে। সেখান থেকে গাড়ি, বাস, জিপে করে দার্জিলিং পৌঁছনো যায়। সময় এবং খরচ দুই-ই ট্রেনের তুলনায় কিছু বেশি। এ ছাড়া, হাওড়া থেকে ভোরবেলা মালদহগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন। সেখান থেকে আবার অন্য একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছনো যায়। সময় লাগবে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টার মতো। মালদহ থেকে বাসে বা গাড়িতে দার্জিলিং পৌঁছতে পারেন। সময় একটু বেশি লাগতেই পারে। ভাড়া লাগবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।