Frankfurt

করোনা আবহে ফ্রাঙ্কফুর্ট

প্রথম পর্বের ঝড় কাটিয়ে উঠলেও, দ্বিতীয় ওয়েভে জার্মানির এই শহরে কড়াকড়ি বিস্তর ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে হঠাৎ বদলাতে থাকল চেনা দৃশ্যপট। করোনার দাপটের খবর তত দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন শহর থেকে আসতে শুরু করেছে।

Advertisement

সোহিনী মাইতি

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:০০
Share:

নদীপথ: মাইন নদীর তীরে

দেখতে দেখতে কর্মসূত্রে এক বছর কাটিয়ে ফেললাম জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে। মাইন নদীর ধারে সবুজে ভরা সুন্দর শহর ফ্রাঙ্কফুর্ট। পুরনো ইউরোপীয় ধাঁচের বাড়ি আর নতুন আকাশচুম্বী বহুতলের সহাবস্থান এখানে। মাইন নদীতট, অসংখ্য মিউজ়িয়াম, আল্টস্টাড (পুরনো শহর), শপিং স্ট্রিট, ফার্মার্স মার্কেট, অনেক পার্ক ও রেস্তরাঁ মিলিয়ে জমজমাট জায়গা। সন্ধেবেলায় বিশেষত ছুটির দিনে ফাঁকা রেস্তরাঁ বা নদীর ধার খুঁজে পাওয়া ভার। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই রাস্তার আশপাশ থেকে ভেসে আসা কাচের গ্লাসের ঠুনঠুন আওয়াজ জানিয়ে দেয় যে, উইকেন্ড আসন্ন।

Advertisement

ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে হঠাৎ বদলাতে থাকল চেনা দৃশ্যপট। করোনার দাপটের খবর তত দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন শহর থেকে আসতে শুরু করেছে। ২২ মার্চের মধ্যে এই দেশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছ’টি রাজ্য ঘোষণা করল লকডাউন। ফ্রাঙ্কফুর্ট তার মধ্যে ছিল না। তবুও এখানে ধার্য হল বাকি জায়গার মতো বেশ কিছু নিয়ম। খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহকারী সুপারমার্কেটগুলি ছাড়া বাকি সব দোকান, শপিং মল ও রেস্তরাঁ প্রথমেই বন্ধ হল। স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে শুরু হল অনলাইন ক্লাস। অফিস চলে এল বাড়িতে, ওয়র্ক ফ্রম হোমের বেশে। এক বাড়িতে থাকেন না এমন মাত্র দু’জন মানুষের সঙ্গে বাইরে দেখা করা ছিল অনুমোদিত। বাইরে বেরোলে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানতেই হবে। মিউজ়িয়াম, চার্চ, চিড়িয়াখানা... এই জনসমাগমের জায়গাগুলিও বন্ধ হয়েছিল প্রথম থেকেই। করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে বেশ কিছু উপায় নিয়েছিল সরকার। যাঁরা সদ্য চাকরি খুইয়েছেন বা যাঁরা চাকরিতে বহাল সকলের পাশেই দাঁড়িয়েছে জার্মান সরকার। বাড়ি ভাড়া দিতে যাঁদের সমস্যা হয়েছে তাঁরাও সরকারি অনুদান পেয়েছেন।

ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং নিয়মনীতির সুষ্ঠু রূপায়ণের জন্যে উন্নতি হচ্ছিল জার্মানির করোনা পরিস্থিতির। এপ্রিলের শেষ ও মে মাসের প্রথম দিক থেকে ধীরে ধীরে খুলতে থাকে বেশির ভাগ দোকানপাট, স্কুল ইত্যাদি। দূরত্ব বজায় রেখে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা চালু হয় অনেক রেস্তরাঁয়। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং-এর জন্য সেখানে দিতে হত প্রয়োজনীয় তথ্য। নিয়মের ঘেরাটোপ সামান্য শিথিল হওয়ায় মহামারির সময়েও গরমকাল মন্দ কাটেনি।

Advertisement

আকাশপানে: ফ্রাঙ্কফুর্টের স্কাইলাইন

সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ইউরোপের অবস্থা প্রায় স্বাভাবিক বলে মনে হলেও, অক্টোবর থেকে এসে গিয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। বর্তমানে জার্মানির দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ‘ফার্স্ট ওয়েভ’-এর সর্বোচ্চ সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। সৌভাগ্যবশত মৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেকটাই কম। নভেম্বর মাস থেকে জার্মানিতে শুরু হয়েছে ‘লকডাউন লাইট’। স্কুল-কলেজ চালু রয়েছে তবে সমস্ত বিনোদনমূলক কার্যকলাপ এখন বন্ধ। দু’টি পরিবার মিলিয়ে দেখা করতে পারেন সর্বোচ্চ পাঁচ জন। গণপরিবহণ, দোকান বাজার-সহ শহরের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় মাস্ক পরা এখন অবশ্যকর্তব্য। ইউরোপের মধ্যে অথবা বাইরে যে কোনও ‘রিস্ক-এরিয়া’ থেকে জার্মানিতে এলেই করাতে হবে করোনা টেস্ট। ভারত ও জার্মানির মধ্যে শুরু হয়েছে এয়ার-বাবল। ফ্রাঙ্কফুর্টের সঙ্গে দিল্লি, মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুর যোগাযোগ এখন অনেকটাই সহজ।

গত সাড়ে আট মাস ধরে করোনার সঙ্গে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। মাস্ক পরা এবং বারবার হাত ধোয়ায় এখন আগের চেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ। মাঝের কিছু দিন অফিসে যাতায়াত করলেও এখন আবার ওয়র্ক ফ্রম হোম চলছে। মাঝে মাঝে চলে যাই বাড়ির কাছের সুন্দর গুন্থার্সবুর্গ পার্কে। সেখানে বসা, হাঁটাচলা, দৌড়নো সব কিছুই নিয়ম মেনে দূরত্ব বজায় রেখে করা যায়। ফার্স্ট ওয়েভের সময়ে মাঝে মাঝে রাস্তায় দেখতাম পুলিশের গাড়ি, তবে নিয়ম না ভাঙলে তা নিয়ে চিন্তার কিছু ছিল না। পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়নি কখনও। এ সবের মাঝেই এল দুর্গা পুজো। অন্য বছর ফ্রাঙ্কফুর্ট-সহ জার্মানি তথা ইউরোপের বিভিন্ন শহরে এক বা একাধিক পুজো হলেও এ বছর ছিল সবটাই অনলাইন।

করোনার প্রথম প্রবাহে ভয় পেয়েছিলাম। তার পর ইউরোপের অবস্থার উন্নতি হলেও, নিজের দেশের কথা ভাবলে খারাপ লাগত। সেকেন্ড ওয়েভের দাপট থাকলেও ‘নিউ নর্মাল’-এ অভ্যস্ত আমি এখনও আশাবাদী। মনে হয়, বিশ্বব্যাপী মহামারির মধ্যে যতটা ভাল থাকা সম্ভব, ততটাই তো আছি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement