বাজেট কম, ক্ষতি কি? ছবি- সংগৃহীত
সব পরিবারের আর্থিক অবস্থা সমান হয় না। তাই ছোট থেকে মা-বাবার হাত ধরে দিঘা আর পুরী ছাড়া তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। কিন্তু নিজে চাকরি পাওয়ার পর থেকেই ঠিক করেছেন, সংসারের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব সামলেও কাঁধে ঝোলা নিয়ে ভারত-ভ্রমণে বেরোবেন। কলকাতায় এখনও ১০ টাকায় ডিমভাত পাওয়া গেলেও, বহু রাজ্যে থাকা-খাওয়া কিন্তু বেশ খরচসাপেক্ষ। তাই বেদুইন হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও বাধ সাধছে সেই পকেট। এ দিকে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, নিজের জন্য এত টাকা খরচ করতেও ভাল লাগে না। তাই বলে ঘুরতে যাওয়া আটকাবে নাকি?
কম খরচে দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘোরার সুলুকসন্ধান রইল এখানে। হাতে ৫০০০ টাকা থাকলেও দিব্যি বেরিয়ে পড়া যায়। ইচ্ছাটাই আসল। তা হলেই ভাবনাচিন্তা করে চলা যাবে।
১) হৃষিকেশ
হাওড়া থেকে ট্রেনে দিল্লি পৌঁছে, সেখান থেকে বেসরকারি বাসে করে হৃষিকেশ পৌঁছনো যায় সহজেই। যাতায়াতের ন্যূনতম খরচটুকু বাদ দিলে থাকে থাকা ও খাওয়ার খরচা। হৃষিকেশে খুঁজলে এমন অনেক আশ্রম পাওয়া যায়, যেখানে থাকা এবং খাওয়ার খরচ অত্যন্ত কম। মাথাপিছু ২০০ টাকা প্রতি দিন খরচ হয়, এমন আশ্রমও আছে। দিন পাঁচেক থাকতে হলে খরচ হবে ১০০০ টাকা মতো। কলকাতা থেকে দিল্লির টিকিট ঠিক সময়ে কাটলে ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। দিল্লি থেকে ঋষিকেশ যাওয়ার বাসের টিকিট মিলবে ৫০০ টাকার মধ্যে। ফলে হাত খরচ থাকবে আরও ৩০০০ টাকা মতো। তা দিয়ে ঋষিকেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবেন নিজের ইচ্ছা মতো।
২) বারাণসী
ভারতের সংস্কৃতির অন্যতম একটি পীঠস্থান হল বেনারস। যেহেতু বেনারস অনেক পুরনো শহরগুলির মধ্যে একটি, তাই এখানে বাঙালিদের বেশ ভালই যাতায়াত আছে। তাই বাঙালি খাবার পেতেও অসুবিধা হবে না। আর যদি ফেলুদার স্মৃতিধন্য ক্যালক্যাটা লজের খোঁজ পেয়ে যান, তা হলে তো কথাই নেই। বেনারসেও থাকার জন্য বিভিন্ন আশ্রম আছে। থাকা-খাওয়ার খরচ দিনে মাথাপিছু ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। দিন চারেক থাকতে পারবেন ১২০০ টাকায়। আর কলকাতা ট্রেনের টিকিট ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
বেনারসের ঘাট থেকে গঙ্গারতি। ছবি- সংগৃহীত
৩) মুসৌরি
শুনলে হয়তো অনেকেই হাসবেন, কিন্তু যাওয়া-আসা, থাকা এবং খাওয়া খরচ বাবদ পকেটে যদি হাজার পাঁচেক টাকা থাকে, তা হলে মুসৌরি পর্যন্ত ঘুরে আসা যায়। মুসৌরিতে থাকার জন্য কম খরচের অনেক হোটেল আছে। সবচেয়ে বড় কথা কাছেপিঠে ঘুরতে গেলে আলাদা করে গাড়ি ভাড়া করার প্রয়োজন পড়ে না। পায়ে হেঁটেই অনেকটা ঘুরে নেওয়া যায়।
কলকাতা থেকে দিল্লির টিকিট ঠিক সময়ে কাটলে ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। সেখান থেকে বাসে মুসৌরি পৌঁছতে খরচ পড়বে ৬০০ টাকার মতো। দুদিন হোটেলে থাকলে থাকা খাওয়া মিলিয়ে খরচ আরও ৩০০০ টাকা। বাকি যা থাকল তাতে কলকাতা ফেরা যাবে অনায়াসে।
৪) গোয়া
গোয়াতে যাওয়ার নাম শুনলেই লোকে খরচের ভয়ে আঁতকে ওঠেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না, গোয়াতে থাকার জন্য সরকারি অনেক ছাত্রাবাস আছে, যেখানে কম খরচায় দু’-তিন দিন অনায়াসেই কাটানো যায়। হাওড়া থেকে গোয়া যেতে ট্রেন ভাড়া কমপক্ষে ৮০০টাকা। সেখানে পৌঁছে থাকার জন্য ভাল মানের ছাত্রাবাস মোটামুটি ১০০০ টাকা প্রতি দিন। গোয়াতে খাবার জিনিসের দাম অনেক বেশি, তাই বেশিদিন থাকা হয়তো যাবে না। তবে গোয়ায় ঘুরতে গেলে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। মনের আনন্দে সারা দিন ঘুরে বেড়িয়ে কাটিয়ে দেওয়াই যায়।
মুসৌরি পাহাড়ের ঢালে রয়েছে অজস্র থাকার জায়গা। ছবি- সংগৃহীত
৫) মানালি
মানালির মতো জায়গা কম টাকায় ঘুরতে গেলে একটু আগে থেকে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। কারণ, মানালি এমন একটি জায়গা যেখানে সারা বছর পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তাই চাহিদা বুঝে সব কিছুরই দাম বাড়া-কমা করে। দিল্লি থেকে বাসে করে ঘোরা এবং সরকারি ছাত্রাবাসে থাকতে পারলে খরচ অনেকটা বাঁচাতে পারবেন। হাওড়া থেকে চন্ডীগড় হয়ে বাসে মানালি পৌঁছতে, ট্রেন এবং বাস ভাড়া মিলিয়ে খরচ প্রায় ১৫০০ টাকার মতো। খুঁজলে মানালিতেও বিভিন্ন দামের মধ্যে ছাত্রাবাস পেয়ে যাবেন। সেখানে দুদিন থাকার খরচ ২০০০ টাকা। ফেরার খরচ বাদ দিলে খাওয়ার খরচ এবং আশেপাশে ঘুরে দেখার জন্য ১০০০ টাকা যথেষ্ট।