Garumara Forest

বনবাসের অস্থায়ী ঠিকানা

গরুমারার নেওড়া জঙ্গল ক্যাম্পের নিঝুমতা আর অক্সিজেন ভরপুর প্রকৃতির কোলে মাস্কহীন দিনযাপন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে গাড়িতে লাটাগুড়ি। ততক্ষণে ঠিক করে ফেলেছি গরুমারা জাতীয় উদ্যানে থাকব।

Advertisement

অমিতাভ  ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৫
Share:

আচমকা: পথের ধারে এমন সৌন্দর্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে

দীর্ঘ আট মাসের দম বন্ধ করা অবস্থার পরে নিউ নর্মালে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। এ বার বাইরে যেতেই হবে। ঠিক করলাম, থাকব অক্সিজেনে ভরপুর সবুজ ও বন্যপ্রাণের মাঝে। সেই অর্থে কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই চেপে পড়লাম ট্রেনে।

Advertisement

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে গাড়িতে লাটাগুড়ি। ততক্ষণে ঠিক করে ফেলেছি গরুমারা জাতীয় উদ্যানে থাকব। যোগাযোগ করলাম নেওড়া মোড়ের কাছে ফরেস্ট অফিসে। ঘরও পেয়ে গেলাম। আমাদের থাকার জায়গা হল গরুমারা অরণ্যের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভিতরে। তখন বিকেল, জঙ্গলে আবার তাড়াতাড়ি সন্ধে নামে। ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে বাঁ দিক নিল গাড়ি। সামনেই নেওড়া জঙ্গল ক্যাম্প। এগিয়ে চলতে লাগলাম। মেঠো পথে ঘাসের মধ্য দিয়ে শুধু চাকা যাওয়ার দাগ। ইতিউতি তাকাচ্ছিলাম, যদি কারও দেখা মেলে। হঠাৎ ব্রেক কষল গাড়ি, সামনে পথ আগলে এক ময়ূর। পেখমের ছটায় গোটা জায়গাটা ঝলমল করে উঠল! ক্যামেরা বার করতে না করতেই সে ধাঁ।

অবশেষে পৌঁছলাম নেওড়া পর্যটক আবাসে। অরণ্য প্রকৃতির মাঝে এমন মনোরম থাকার জায়গা দেখে সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে গেলাম। চারদিকে রকমারি সবুজ। পাখিদের বাসায় ফেরার কলতানের মধ্য দিয়ে জঙ্গলে সন্ধে নেমে গেল। প্রথম দিকে খুব একটা ঠান্ডা ছিল না, যত রাত বাড়তে লাগল শীতের কামড় ততই তীব্র হতে লাগল। আমরা অরণ্যের নীরবতা অনুভব করতে লাগলাম। মাঝে মাঝে সেই নীরবতা ভেঙে নিজেকে জানান দেওয়ার হুঙ্কারও অবশ্য কানে আসছিল। আবাসেই ছিল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। রাত ন’টার মধ্যেই ডিনার সেরে নিলাম।

Advertisement

সুদূর: নেওড়া জঙ্গল ক্যাম্পের পথে

ঘুম ভাঙল পাখিদের ডাকে। বাইরে এসে দেখি, সকালের কুয়াশায় ঢাকা অরণ্য। বন দফতরের নির্দেশিত পথে বেরিয়ে পড়লাম। সবুজের সমাহারের মাঝে শুধু চলার পথটুকু রয়েছে। একটু দূরেই নদী। জানলাম কাল রাতেই নাকি একদল হাতি নদীর উপর দিয়ে চলে গিয়েছে ও পারে। যাহ, আমাদের আর হাতি দেখা হল না! নদীর ধারের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে এলাম ওয়াচ টাওয়ারে। সেখান থেকে দেখা মিলল রং বেরঙের চেনা-অচেনা অসংখ্য পাখির। এখানে নাকি ১৯৩ রকমের পাখি ও ৪২ প্রজাতির প্রাণী আছে। হঠাৎ দূরের ঝোপটা নড়ে উঠল, চুপ করে দেখে গেলাম মা ও শাবক হাতির কার্যকলাপ।

দুপুরের খাবার সেরে এ বার আমাদের পথ অন্য দিকে। ময়ূরের ডাক সারাদিন শুনতে পেলেও ময়ূর ও ময়ূরীর দেখা মিলল দুপুরবেলা। তার পর বিকেলে যখন আর কিছু দেখা যাবে না ভেবে নিয়েছি, তখনই দেখা দিল এক ঝাঁক হর্নবিল। এর পরেই সারা জঙ্গল যেন কালো আবরণে নিজেকে ঢেকে ফেলল। আমরাও ফিরে এলাম নিজের বিছানায়। কাল যাব ঝান্ডি। দীর্ঘদিন পরে মাস্কহীন, অক্সিজেনে ভরপুর দু’টি দিন প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে দিলাম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement