বর্ষায় ঘুরে নিতে পারেন অল্প চেনা এই জলাধারগুলি। ছবি: সংগৃহীত।
গরমের দাবদাহ শেষে একটু স্বস্তি আনে বর্ষা। আর ছোট্ট ছুটির ব্যবস্থা করতে পারলেই যাঁদের মন বাইরে বের হওয়ার জন্য আকুল হয়, সারা বছরই তাঁদের অনেকের খোঁজ থাকে চেনা ছকের বাইরে নতুন কোথাও ঘুরে দেখার।
বর্ষায় ভ্রমণ মানে আরও সবুজ হয়ে ওঠা চারপাশ, ঝর্না, জলাধার। কারণ, বর্ষাতেই এর রূপ খোলতাই হয়। মাইথন, পাঞ্চেত, ম্যাসাঞ্জোর, বড়ন্তি এই জলাধারগুলি এখন বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। এর বাইরেও কিন্তু সুন্দর ও স্বল্পচেনা কয়েকটি জলাধার ঘুরে এলে মোটেও হতাশ হবে না পর্যটক মন।
দুর্গাডি বা দুর্গাডিহি-
পুরুলিয়ার পর্যটন মানচিত্রে নতুন করে জায়গা করে নিয়েছে মানবাজার ২ নম্বর ব্লকের ধাদকিডি গ্রামের এই পর্যটন কেন্দ্র। সবুজ পাহাড়ের কোলে বিশাল জলাধার। মাঝে মধ্যে ছোটখাটো দ্বীপ। কোলাহল বর্জিত দুর্গাডিহি জলাধারের আশপাশে দিনভর শোনা যায় পাখির ডাক। পাশেই রয়েছে ইকো-রিসর্ট। যেখান থেকে পুরো জলাধারের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ২ দিনেই ঘুরে নেওয়া যায় এই জায়গা।
দুর্গাডি বা দুর্গাডিহি জলাধার, পুরুলিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কীভাবে যাবেন-ট্রেনে বাঁকুড়া বা পুরুলিয়া। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে দুর্গাডিহি।
গাংদুয়া -
বাঁকুড়ার পর্যটনে স্বল্প পরিচিত গাংদুয়া জলাধারটিও ইদানীং ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একসময় স্থানীয় এলাকায় কৃষির জন্য জলের চাহিদা মেটাতে এটি নির্মিত হয়েছিল। শালী নদীর উপর এটি তৈরি হয়েছে। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে বিশাল এই জলাধারের রূপ ক্রমশই পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। ভরা বর্ষায় গেলে লকগেট থেকে জল ছাড়ার দৃশ্যও দেখার সৌভাঙ্গীও হতে পারে। যা বর্ষায় জলাধার ভ্রমণের অন্যতম কারণ। থাকার জন্য রয়েছে একটি অতিথি নিবাস। আগে থেকে বুকিং করে আসাই ভাল। এখান থেকে বাঁকুড়ার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রও ঘুরে নেওয়া যায়।
গাংদুয়া জলাধার, বাঁকুড়া ছবি: সংগৃহীত
কীভাবে যাবেন- কলকাতা থেকে দূরত্ব ২১০ কিলোমিটারের মতো। ট্রেনে বাঁকুড়া এসে সেখান থেকে গাড়ি নিয়েও এই জলাধার ঘুরে নেওয়া যায়। বাঁকুড়া থেকে দূরত্ব মোটামুটি ২১ কিলোমিটার।
খাঁদারানি-
নামটা অদ্ভুত হলেও এই জলাধারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন না, এমন মানুষ কমই আছেন। তিনটি পাহাড় ঘেরা এই জলাধার পড়ন্ত বিকেলে হয়ে ওঠে আরও মোহময়ী। আশপাশে রয়েছে শাল-মহুয়ার জঙ্গল। পাশ দিয়ে গিয়েছে কংক্রিটের সেতু। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ গাছ, তার মধ্যেই জলাধার।
খাঁদারানি, বেলপাহাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
কীভাবে যাবেন- বেলপাহাড়ি থেকে জলাধারের দূরত্ব মোটামুটি ১১ কিলোমিটার। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে গাড়িতে বেলপাহাড়ি ৩৭ কিলোমিটার। ঝাড়গ্রাম গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি নিয়েও ঘুরে দেখা যায় জলাধারটি।
পালনা-
পালনা জলাধার, ঝাড়খণ্ড। —নিজস্ব চিত্র।
পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে রয়েছে এই জলাধার। টাটা নগর থেকে বা চান্ডিল স্টেশনে নেমে বহু মানুষই যান চান্ডিল জলাধারে। সেটা আয়তনে বিশাল, ছোটখাটো সমুদ্র বললেও ভুল হয় না। কিন্তু পালনা তুলনায় কম জনপ্রিয় হলেও এর রূপে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। সুবর্ণরেখার উপর গড়ে উঠেছে এই জলাধার। কেউ বলেন পালনা নদীর উপর এটি তৈরি। পাহাড়ঘেরা এই জলাধার এঁকে-বেঁকে গিয়েছে। পাশেই রয়েছে নজর মিনার। যেখান থেকে জলাধার ও চারপাশের সৌন্দর্য অতুলনীয় মনে হয়। সেরাইকেলার চান্ডিল শহরে এটি অবস্থিত।
কীভাবে যাবেন-জামশেদপুর থেকে ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রাঁচি যাওয়ার পথে এই জলাধার। জাতীয় সড়ক থেকে ২ কিলোমিটার ভিতরে যেতে হয়।
ছোটাবাঁকি-
নামের সঙ্গে জলাধারের মিল আছে। আকারে এটি বেশ ছোট। তবে ঘন সবুজ পাহাড়ের কোলে ঘন নীল জলের এই জলাধারের সৌন্দর্য অপরিসীম। পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত এই জলাধার। স্থানীয় লোকজন শীতকালে এখানে পিকনিকে আসেন। আসলে বেশিরভাগ পর্যটকের চোখের আড়ালেই রয়ে গিয়েছে ছোটাবাঁকি।
ছোটাবাঁকি, ঝাড়খণ্ড —নিজস্ব চিত্র।
কীভাবে যাবেন-টাটানগর বা জামশেদপুর থেকে গাড়ি করে ঘুরে নিতে পারেন। টাটনগর থেকে এর দূরত্ব ২২ কিলোমিটার