কলকাতা থেকে দু’দিনে ভ্রমণের ৩ জায়গা। ছবি: সংগৃহীত।
ছুটির অভাবে কি বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারছেন না? পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো দু’দিন পর পর ছুটি পেলে, বেড়ানোর জন্য হয় মাথায় আসে দিঘা, মন্দারমণি, নয়তো বকখালি।
তবে সঠিক ভাবে পরিকল্পনা করলে দু’দিনের ছুটিতে কলকাতা থেকে দিব্যি ঘুরে নেওয়া যায় জঙ্গল, পাহাড়, ঝর্না। কলকাতার আশপাশে বহু জেলাতেই রয়েছে দর্শনীয় নানা স্থান। আর কয়েক ঘণ্টায় পৌঁছনো যায় পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও। ঝটপট জেনে নিন, দু’দিনে কোথায় কোথায় ঘুরে আসতে পারেন।
দুয়ারসিনি, পুরুলিয়া
শালের জঙ্গল ঘেরা দুয়ারসিনির রূপ অপূর্ব। ছবি: সংগৃহীত।
ছোট ছোট পাহাড়ের মাঝে রয়েছে শাল-পিয়াল-শিমুলের বন। জঙ্গল-পাহাড়-নদীর সৌন্দর্য পেতে ভোরবেলা ট্রেনে চেপে বসলেই হল। পুরুলিয়ার দুয়ারসিনি রূপের ডালি সাজিয়ে অপেক্ষা করছে। দুয়ারসিনিতে জঙ্গলের মধ্যে ছোট ছোট কটেজে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতাই আলাদা। বর্ষায় দুয়ারসিনি ঘন সবুজ। কাছ দিয়েই বয়ে গিয়েছে সাতগুড়ুং নদী। গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিতে পারেন টটকো জলাধার। আরও একদিন সময় পেলে আমলাশোল, ময়ূরঝর্না ঘুরে নিতে পারেন। চাইলে চলে যেতে পারেন ঘাটশিলাতেও। এখানে রয়েছে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ‘গৌরীকুঞ্জ’। বিভূতিভূষণের বহু লেখায় উঠে এসেছে এই অঞ্চলের জঙ্গলের বর্ণনা, প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা। ঘুরে নিতে পারেন গালুডি, বুরুডি জলাধার, ধারাগিরি জলপ্রপাত। আর যাতে হাতে শুধুই দু’দিন ছুটি থাকে, তা হলে বরং পায়ে হেঁটেই আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
কী ভাবে যাবেন
সড়কপথে যেতে চাইলে, কলকাতা থেকে বান্দোয়ান বাস যায়। বান্দোয়ান থেকে ছোট গাড়ি বা ট্রেকারে দুয়ারসিনি।
ট্রেনে করে যেতে চাইলে প্রথমে ঘাটশিলা যাওয়াই সুবিধা। নামতে পারেন গালুডি স্টেশনেও। সেখান থেকে দুয়ারসিনি কাছে। ভোরেই হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে চলে যেতে পারেন ঘাটশিলা বা গালুডি। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে দুয়ারসিনি।
থাকার জায়গা
রাজ্য সরকারের বনোন্নয়ন নিগমের কটেজ রয়েছে। অনলাইনে বুক করতে হয় ঘর।
নিমপীঠ ও কৈখালি
কলকাতা থেকে কয়েক ঘণ্টায় পৌঁছনো যায় সুন্দরবনের কাছে কৈখালিতে। ছবি: সংগৃহীত।
কলকাতা থেকে নদী, ম্যানগ্রোভের জঙ্গল যাওয়াও বিশেষ ঝক্কির নয়। ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবনের কাছে কৈখালি থেকে। কৈখালি যাবার আগেই পথের পাশে পড়বে নিমপীঠের রামকৃষ্ণ আশ্রম। আশ্রমে ঘুরে মধ্যাহ্নভোজও সেরে নিতে পারেন। তার পর অটো ভাড়া করে চলে যেতে পারেন কৈখালি। যদি পূর্ণিমার রাতে যাওয়া যায়, মাতলা নদীর রূপ অনির্বচনীয়। চারপাশে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। কৈখালি থেকে নৌকো করে ঘুরে নেওয়া যায় ঝড়খালির ব্যাঘ্র পুনবার্সন কেন্দ্র।
কী ভাবে যাবেন
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেন ধরে চলে আসুন জয়নগর। সেখান থেকে নিমপীঠ বা সরাসরি কৈখালি যাবার অটো ভাড়া করে নিতে পারেন। গাড়ি বা বাইকে সহজেই যাওয়া যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৈখালিতে।
থাকার জায়গা
কৈখালিতে মাতলার পাশেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুব আবাস রয়েছে থাকার জন্য।
ভাটিন্ডা জলপ্রপাত, ধানবাদ
ধানবাদের ভাটিন্ডা জলপ্রপাত। ছবি: সংগৃহীত।
বর্ষাতেই রূপ খোলে প্রকৃতির। বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদী, ঝর্না প্রাণ ফিরে পায়। লোকচক্ষুর আড়ালে এমনই এক সুন্দর জলপ্রপাত রয়েছে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে। ভাটিন্ডা। ধাপে ধাপে নেমে আসা জলস্রোত জঙ্গলঘেরা প্রকৃতির নির্জনতায় আপন মনে বয়ে চলেছে। বৃষ্টিতে ভাটিন্ডা হয়ে ওঠে প্রাণোচ্ছ্বল। প্রবল জলস্রোত পাথরে ধাক্কা খেয়ে সশব্দে আছড়ে পড়ে। এখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় তোপচাঁচি ও উস্রিও।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে ভোরের ট্রেন ধরে ধানবাদ। সেখান থেকে অটো বা গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে নেওয়া যায় ভাটিন্ডা। যদি ভাটিন্ডার পাশাপাশি তোপচাঁচি ও উস্রি দেখার পরিকল্পনা থাকে, তা হলে গাড়ি ভাড়া করাই ভাল। তবে একসঙ্গে তিন জায়গা ঘোরা গেলেও, হাতে সময় কম পড়তে পারে। তার চেয়ে যে কোনও একটি বা দু’টি জায়গাও ঘুরে নিতে পারেন।
থাকার জায়গা
ধানবাদে থাকার জন্য বিভিন্ন দামের ও মানের হোটেল আছে। ঘোরার বাজেট কম হলে রেলের রিটায়ারিং রুমেও একটা রাত কাটিয়ে দিতে পারেন।