অ্যালবাম থেকে: বাবার সঙ্গে ফিল
সিডনি থেকে ঘণ্টা তিনেকের দূরত্বে ছিমছাম, শান্ত শহরতলির বাড়িটার চারপাশে জীবন চলছে নিজের ছন্দে। বাড়িটার ভেতরে অবশ্য অন্য ছবি। এখানে জীবন যেন থমকে গিয়েছে। সাজানো গোছানো ড্রয়িংরুম। একটা ক্যাবিনেটে পরপর রাখা ট্রফি, পদক, নানান পুরস্কার।
ট্রফির মালিক, বাড়ির ছোট ছেলে ফিল। যাঁর অস্তিত্ব এখন রক্তমাংসের নয়, ছবির ছোট্ট ফ্রেমে সীমাবদ্ধ! আর যাঁকে চিরবিদায় জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রেমকেও নিজেদের জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছে তাঁর পরিবার।
ফিলিপ জোয়েল হিউজের বাড়ি থেকে ক্রিকেট চিরতরে বিতাড়িত!
ছেলে যখন বেঁচে ছিলেন, ক্রিকেট মাঠে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ফিলিপ হিউজের মা-বাবা-দাদা-বোনের। ২৫ নভেম্বর সিডনির সেই ম্যাচেও মাঠে ছিলেন হিউজের মা, বোন। কিন্তু টিম ইন্ডিয়ার ম্যানেজার বিশ্বরূপ দে এ দিন সিনিয়র হিউজকে সোমবারের ম্যাচে মাঠে যাওয়ার আমন্ত্রণ করে শুনে এলেন, বাইশ গজের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই রাখতে চান না তাঁরা। মাঠে যাওয়া তো দূরের কথা, হিউজদের টিভিতেও ক্রিকেট নিষিদ্ধ। দেখলেন, পুত্রশোকের অতলস্পর্শী গহ্বরে এখনও হোঁচট খেতে খেতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রেগ হিউজ। আবিষ্কার করলেন ভাইকে ক্রিকেটের সঙ্গে প্রথম আলাপ করিয়ে দেওয়া জেসন হিউজ, যিনি নিজেও ক্রিকেটটা খেলতেন, এখন আর মাঠমুখো হন না।
ফিল হিউজের স্মৃতিতে সিএবির যে কনডোলেন্স বুকে সই করেছিলেন হাজার-হাজার ক্রিকেটপ্রেমী, হিউজ পরিবারের কাছে সেটা পৌঁছে দিতেই রবিবার ম্যাক্সভিল গিয়েছিলেন সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ। যে অভিযানে তাঁর ‘গাইড’ ছিলেন মাইকেল ক্লার্ক, ফিল হিউজ, মিচেল স্টার্কদের কোচ নিল ডি’কস্টা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, চূনী গোস্বামী, লক্ষ্মীরতন শুক্ল সিএবি কনডোলেন্স বুকে সই করছেন, সেই ছবিও গ্রেগ হিউজের হাতে তুলে দেওয়া হল। “আমি যে ইডেনের একজন প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছিলাম, সেটাই ওঁকে সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে গিয়েছে,” সিডনি থেকে রবিবার রাতে ফোনে বলছিলেন বিশ্বরূপ।
ম্যাক্সভিলের ওই চার দেওয়ালের মধ্যে যখন মৃত্যুকে ভোলানোর নীরব লড়াই চলছে, সিডনিতে ভারতীয় দল তখন জীবনে ফেরার সরব যুদ্ধে ডুবে। যে যুদ্ধে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের সঞ্জীবনী মন্ত্র জোগাচ্ছেন টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী। রবিবার সিডনির প্র্যাকটিস সেশনে নাকি টিমকে দীর্ঘ পেপ-টক দিলেন শাস্ত্রী। বিশেষ করে দুই আহত সৈন্য রবীন্দ্র জাডেজা এবং ইশান্ত শর্মাকে। দু’জনকেই নাকি তিনি বলে দিয়েছেন, রবিবার অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে নিজেদের প্রমাণ করে দেখাও। বিশ্বকাপ টিমে থাকতে হলে এই ম্যাচেই পারফর্ম করে দেখাও।
পরে ঘনিষ্ঠমহলে শাস্ত্রী নাকি ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন, ইশান্ত-জাডেজার ফিটনেস নিয়ে দীর্ঘদিনব্যাপী টালবাহানায় বেশ বিরক্তই। মাসখানেক ধরে তাঁদের যে রিহ্যাব চলছে, তার কোনও প্রতিফলন নাকি তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। রবিবারই দু’জনকে দেখে নিতে চান শাস্ত্রী। তিনি নাকি বলেছেন, রবিবারও না হলে আর কবে দেখা হবে দু’জনকে? কাপ-যুদ্ধের বাকি আর দিন কুড়ি। এখনও যদি ইশান্ত বা জাডেজাকে নিয়ে নিশ্চিত না হতে পারেন, তা হলে টিম সেট করতে পারবেন না। রবিবার পুরো ফিট না থাকা অবস্থায় খেলে যে ইশান্ত-জাডেজার নতুন চোটের ঝুঁকি আছে, সেটা মাথায় রেখেই তাঁদের নামাতে চান শাস্ত্রী। শোনা যাচ্ছে, এই দু’জন বিশ্বকাপে থাকবেন কি থাকবেন না, সেটা রবিবারই নিশ্চিত করে ফেলতে চান শাস্ত্রী। তবে রোহিত শর্মা নিয়ে নাকি অনেকটাই নরম টিম ম্যানেজমেন্ট। তাঁর চোট নতুন, তাই তাঁকে আরও সময় দেওয়া হবে।
যা খবর, তাতে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ওপেন করছেন শিখর ধবন-অজিঙ্ক রাহানে। তিনে অম্বাতি রায়ডু, চারে বিরাট কোহলি। পাঁচ-ছয়-সাতে সুরেশ রায়না, ধোনি এবং স্টুয়ার্ট বিনি। আট নম্বরে জাডেজা, নয়ে অক্ষর পটেল। বাকি দুইয়ে থাকবেন তিন পেসারের মধ্যে দু’জন। যার মধ্যে ইশান্তের সঙ্গে মহম্মদ শামির থাকার সম্ভাবনা বেশি। বাদ পড়তে পারেন উমেশ যাদব। যা শোনা যাচ্ছে, তাতে বিশ্বকাপের প্রথম এগারোয় দুই স্পিনার খেলানোর কথা ভাবছে টিম ইন্ডিয়া। অস্ট্রেলিয়ার বড় মাঠে স্পিনারকে শট মারা সহজ হবে না, সেটা মাথায় রেখে। তা ছাড়া সব পিচেই পরপর ম্যাচ আছে। ত্রিদেশীয় সিরিজের পর ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ হবে। অস্ট্রেলীয় গ্রীষ্মের রোদেও পিচ ভাঙবে বলে মনে করছে টিমের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। তৃতীয় সিমার হিসেবে এগিয়ে স্টুয়ার্ট বিনি। ভুবনেশ্বর কুমারের ফিটনেসের যা অবস্থা, তাতে বিশ্বকাপের প্ল্যানে তিনি ক্রমশ জমি হারাচ্ছেন।