হাল ছেড়ো না বন্ধু। ফিরে আসার যুদ্ধ শুরু কাসিয়াসের। রিওয় মঙ্গলবার।
দু’হাজার তেরোর ৩০ জুন। মারাকানার মাঠে তিকিতাকার সাম্রাজ্য প্রথম ধ্বংস হওয়ার দিন।
ব্রাজিলের হাতে কনফেডারেশনস্ কাপ ফাইনালে দেল বস্কির দলের সেই ০-৩ ধ্বংস হওয়ার পর কেটে গিয়েছে প্রায় এক বছর। কিন্তু যেন পরিস্থিতি পাল্টায়নি। স্পেনের তিকিতাকার কার্যকারিতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল মারকানা স্টেডিয়ামে, বুধবার সেই মাঠেই বিশ্বকাপে অপেক্ষাকৃত নরম প্রতিদ্বন্দ্বী চিলির বিরুদ্ধে ইনিয়েস্তা-পিকেদের নামার আগেও তার জবাব মেলেনি। বরং তিকিতাকার অস্তিত্ব বজায় রাখার লড়াই আরও কঠিন। মঞ্চ আরও বড়। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ১-৫ হারকে বিপর্যয়ের থেকে কম ধরা হচ্ছে না। অতিরিক্ত আত্মতুষ্টির থেকে প্রবীণ ফুটবলারদের ভুলত্রুটি কারণ হিসাবে বেরিয়ে এসেছে সব কিছু। এখন প্রশ্ন একটাই, মারাকানার সেই ‘অপয়া’ মাটিতে কি চিলির বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে টিকে থাকার ‘অক্সিজেন’ পাবে স্পেন? নাকি ২০০২ ও ২০১০ বিশ্বকাপের মতোই গ্রুপ থেকে বিদায় নিতে হবে আগের বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের?
ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে স্পেন শিবিরে সতর্কতার আবহাওয়া। ছাঁটা হতে পারে দলের জনাকয়েক মহাতারকাকে। শোনা যাচ্ছে, পিকে, জাবি আলোন্সোদের মতো ফুটবলারদের উপরে তীব্র চটেছেন কোচ দেল বস্কি। দলের ছক নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়েছেন কয়েক জন ফুটবলারের সঙ্গে। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেল বস্কি আগাম বার্তা দিয়েছেন, দলের সার্থে তারকা ফুটবলারদের চিলি ম্যাচ থেকে ছাঁটতে চলেছেন তিনি। জল্পনা অনুযায়ী প্রথম দলে আসতে পারেন জাভি মার্তিনেজ, সেস ফাব্রেগাস ও পেদ্রো। এমনকী অধিনায়ক কাসিয়াসকে বসিয়ে গোলকিপারের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে দি জিয়াকে। দেল বস্কি বলেছেন, “আমি দল পাল্টাতে চলেছি। কয়েক জন নতুন ফুটবলারকে নিতে পারি। তবে কোনও ফুটবলারকে বসানো মানে তার বিরুদ্ধে আঙুল তোলা নয়। সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে চাই।”
রিওতে দেল বস্কি।
হারের পরে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় দিয়েগো কোস্তাকে। বলা হয়, স্পেনের তিকিতাকার সঙ্গে কোস্তার খেলার স্টাইল খাপ খায় না। ফরোয়ার্ডে বৈচিত্র আনার জন্যই কোস্তাকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্প্যানিশ কোচ। “জানি কোস্তা কোনও পাসিং টিমের জন্য সঠিক ফরোয়ার্ড না। কিন্তু ওর ওয়ার্ক রেট, গোলের চোখ সাহায্য করবে দলকে। ও হয়তো এখনও গোল করেনি কিন্তু বিপক্ষকে সমস্যায় ফেলেছে অনেক বার,” স্পেনের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ডে পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন দেল বস্কি।
জোর জল্পনা, ২০১২ ইউরো জয়ের ফর্মুলা আবার চিলির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চলেছেন দেল বস্কি। অর্থাৎ ফরোয়ার্ডে ‘ফলস নাইন’ (ইনসাইড ফরোয়ার্ড, যিনি প্রথাগত স্ট্রাইকার পজিশনে না খেলে উঠে নেমে মাঝমাঠকেও সাহায্য করেন) রেখেই শাপমুক্তির লক্ষ্যে আবার নামবে স্পেন। ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সদ্য চেলসিতে সই করা ফাব্রেগাস বলে দিচ্ছেন, “আমি তৈরি যে কোনও চ্যালেঞ্জ নিতে। যদি কোচ মনে করেন আমাকে প্রথম দলে রাখবেন তা হলে কোনও অসুবিধা নেই।” নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে হারের রেশ কাটিয়েই চিলি ম্যাচে প্রবেশ করতে হবে, সেই কথা জানিয়েই ফাব্রেগাস যোগ করেন, “ভয় বলে কোনও শব্দ নেই দলে। নতুন যুদ্ধের জন্য তৈরি আমরা। কিন্তু সতর্ক আছি, চিলির বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচের মতোই পরিস্থিতি দাঁড়াচ্ছে।”
পুরো স্পেন যখন চাইছে তিকিতাকা থেকে বেরিয়ে আসুক স্পেন, দলের অন্যতম প্লেমেকার খুয়ান মাতা বলছেন কোনও মতেই পদ্ধতি বদলানো উচিত না। “আমাদের ভরসা রাখা উচিত নিজেদের পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে অনেক ট্রফি পেয়েছি। অনেক দলকে হারিয়েছি। তা হলে পাল্টাব কেন।”
স্পেন শিবিরে যখন তিকিতাকা নিয়ে ধন্ধ রয়েই যাচ্ছে, চিলির মেজাজ আত্মবিশ্বাসী। অস্ট্রেলিয়াকে ৩-১ হারিয়ে সাঞ্চেজ ও ভিদাল জুটি তৈরি স্পেনের কফিনে শেষ পেরেক পুঁততে। প্রথম ম্যাচ জিতলেও, স্পেনের বিরুদ্ধে আরও উন্নতি করতে হবে দলকে, সেই কথাই মনে করছেন কোচ জোর্জ সামপাওলি। বলেছেন, “মনে রাখতে হবে, আমাদের পরের দুটো প্রতিপক্ষ স্পেন আর নেদারল্যান্ডস। যারা একটু সুযোগ পেলেই আঘাত করতে পারে প্রতিপক্ষকে।”
ছবি: উৎপল সরকার