নেইমারহীন ব্রাজিলের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে নামার আগেই মাইন্ড গেম শুরু করে দিল জার্মানরা। নেতৃত্বে লুকাস পোডলস্কি। বলছেন, “ব্রাজিলের বিরুদ্ধে তো আর প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে নামছি না। তাই সুন্দর খেলাকে কুৎসিত করতে জার্মানরা তৈরি।”
এখানেই শেষ নয়। পোডলস্কির কথায়, “কেউ মনে রাখে না গোলের আগে তার দল সুন্দর স্কিলের কী নমুনা রেখেছিল। সবাই যা মনে রাখে তা হল, আপনি গোলটা করতে পারলেন কি না আর খেলা শেষে আপনি ম্যাচটা জিতে স্টেডিয়াম ছাড়তে পারলেন কি না।”
পোলিশ বংশোদ্ভুত জার্মান স্ট্রাইকার আরও বলেন, “বিশ্বকাপে কে হারতে চায়? কাপ জেতার জন্য আমরা সবাই ফোকাসড। বিশ্বসেরা হতে গেলে আর মাত্র দু’টো ম্যাচ জিততে হবে। তার জন্য মাঠে জান লড়িয়ে দেবে সতীর্থরা।”
জোয়াকিম লো-র জার্মানি যে বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত রয়েছে এ দিন সে কথাও মনে করিয়ে দিয়ে পোডলস্কি বলেন, “মনে রাখবেন, ‘গ্রুপ অব ডেথ’ থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত টুর্নামেন্টে জার্মানরা এখনও পর্যন্ত কিন্তু হারেনি। পাঁচটা ম্যাচের মধ্য চারটে জয় একটা ড্র। টিমের অবস্থা ঠিক কী পর্যায়ে তা নিশ্চয়ই এই তথ্য বলে দিচ্ছে।”
মঙ্গলবার বেলো হরিজন্তের স্টেডিয়ামে জার্মানি মুখোমুখি হবে নেইমারবিহীন ব্রাজিলের। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে পোডলস্কি আরও বলেন, “ঘরের মাঠে খেলবে ব্রাজিল। সুতরাং দেশের ফুটবল জনতার সীমাহীন প্রত্যাশার ফলে চাপে থাকবে ওরাই। আমরা নই।”
নেইমার না থাকায় ব্রাজিলের জনতা আবেগপ্রবণ হয়ে অন্য দিনের চেয়ে আরও বেশি চিৎকার করবে কি না সে প্রশ্নেও ইতিবাচক ফ্যাক্টর দেখছেন এই জার্মান ফরোয়ার্ড। বলছেন, “আর্সেনালের হয়ে টটেনহ্যাম বা লিভারপুলের বিরুদ্ধে ৪৫ হাজার দর্শকের সামনে খেলতে অসুবিধা হয় না। জন সমর্থন বিপক্ষে থাকলেও কী ভাবে ম্যাচ বের করতে হবে তা আমাদের অজানা নয়।” সঙ্গে আরও বলেন, “ব্রাজিলের ৮০ হাজার দর্শক যদি সে দিন স্টেডিয়ামে আমাদের বিরুদ্ধে চিৎকার করে যায়, তা হলে আমাদের কোনও অসুবিধা তো হবেই না। বরং এতে আমাদের সুবিধাই হবে।”
শেষ তিন বিশ্বকাপে খেতাবের কাছাকাছি গিয়েও বিরস বদনে ফিরতে হয়েছে জার্মানদের। ২০০২-এ ফাইনালে উঠে অলিভার কানের দল হেরেছিল এই স্কোলারির ব্রাজিলের কাছেই। শেষ দুই বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকেই কাপের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে জার্মানদের।
ঠিক সেভাবেই শেষ দুই ইউরো কাপেও জার্মানরা ফিরেছে খেতাব স্পর্শ না করে। ২০০৮-এ রানার্স এবং ২০১২ তে সেমিফাইনালেই ছিটকে গিয়েছিল পোডলস্কির দল।
এ বার ব্রাজিলের কোচ সেই স্কোলারিই। যার দলের কাছে বারো বছর আগে ফাইনালে হারতে হয়েছিল। তা হলে কি জার্মানদের সামনে এ বার বদলার সুযোগ?
জবাবে পোডলস্কি বলছেন, “এ বার অবশ্যই আমাদের কাপ নিয়ে জার্মানিতে ফেরার পালা। শেষ দু’বার সেমিফাইনালেই আমাদের দৌড় শেষ হয়ে গেলেও এ বার আমরা সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তৈরি।” সঙ্গে এটাও বলে দেন, “মেসি বা নেইমারের মতো একক দক্ষতায় ম্যাচ জেতানোর লোক থাকলেও রিও থেকে কাপটা আমরাই নিয়ে যেতে পারব বলে বিশ্বাস রাখছি।”
পোডলস্কির সঙ্গেই সুরে মিলিয়েছেন জার্মান আক্রমণ ভাগের আর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য টমাস মুলার। তাঁর মতে চার বছর আগের চেয়ে এই জার্মান দল আরও বেশি শক্তিশালী এবং ফোকাসড। বর্তমান জার্মান গোলমেশিনের কথায়, “চার বছর আগে সেমিফাইনালে আমরা অনেক অহেতুক ঝুকি নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু অতীত আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। সেই ভুল এ বার আর হবে না।”
এ বারের বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই চার গোল করা হয়ে গিয়েছে গত বারের বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলদাতা মুলারের। তিনিও বলছেন, “মারাকানায় ফাইনাল খেলে জার্মানিতে ট্রফি নিয়ে নামার আনন্দ কী রকম তা দলের সবাই জানে। সে কথা মাথায় রেখেই সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ঝাপাচ্ছি আমার।”