সিএসকে ক্যাপ্টেন বলে এত ঈর্ষা, এত কথা, এত ঢিল-পাটকেল

শনিবার রাতে এমনই দাবি করলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ম্যানেজার কাম মুখপাত্র। তিনি অরুণ পাণ্ডে সবে আধ ঘণ্টা হল জাতীয় চ্যানেলে স্টিং অপারেশনের শিকার হয়ে উঠেছেন। তখনও ঘোর কাটেনি তাঁর। তারই মধ্যে দিল্লি থেকে ফোনে গৌতম ভট্টাচার্য-কে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন।শনিবার রাতে এমনই দাবি করলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ম্যানেজার কাম মুখপাত্র। তিনি অরুণ পাণ্ডে সবে আধ ঘণ্টা হল জাতীয় চ্যানেলে স্টিং অপারেশনের শিকার হয়ে উঠেছেন। তখনও ঘোর কাটেনি তাঁর। তারই মধ্যে দিল্লি থেকে ফোনে গৌতম ভট্টাচার্য-কে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৪ ০৩:২১
Share:

অরুণের সঙ্গে মাহি

প্রশ্ন: সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ ওঠার পরেও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যেমন অপ্রভাবিত থেকে টিমকে সেমিফাইনালে নিয়ে গেলেন, সেটা দেখে আপনার কেমন মনে হল?
অরুণ: এমএস-এর পক্ষেই এটা সম্ভব। এমনিতেই ১.৩ বিলিয়ন মানুষের অধিনায়কত্ব করার চাপ নেওয়াটা সাংঘাতিক। তার মধ্যে এটা আর একটা চাপ। এমএস তার মধ্যেও কেমন অক্ষত! ওকে যত দেখি, আমার আশ্চর্য লাগে। ওর মধ্যে নীলকণ্ঠ হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। যে কোনও বিষ হজম করে ফেলতে পারে।

প্র: ঘণ্টাখানেক আগে জাতীয় চ্যানেলে আপনি স্টিং অপারেশনের শিকার হয়েছেন। আর তাতে নানা কথা বলেছেন বিন্দু দারা সিংহ আর মইয়াপ্পন প্রসঙ্গে।
অরুণ: বিকেল থেকে তার প্রোমো দেখে আমার তো প্রচণ্ড নার্ভাস লাগছিল। মনে হচ্ছিল আবার কোথায় না কোথায় ফাঁসাবে। টেলিকাস্ট হওয়ার পর দেখলাম স্টিং অপারেশনও যেটা সত্যি, সেটার নড়চড় করতে পারেনি।

প্র: সত্যিটা কী?
অরুণ: সত্যিটা হল, এমএস কারও কাছ থেকে জীবনে কখনও এক টাকাও নেয়নি। আর ও এ রকমই। কারও দয়াভিক্ষার ওপর ওর ক্রিকেট চলে না। ওর জীবন চলে না। যে দিন মনে করবে ক্রিকেট ছাড়বে, আপনিই নিঃশব্দে চলে যাবে। কোনও নির্বাচকের পিছনে গিয়ে ঠেলবে না, আমাকে একটু দেখুন। বা কোনও প্রাক্তন প্লেয়ারকে বলবে না, আমার হয়ে লিখুন।

প্র: কিন্তু এমন তো অনেক কাহিনি আছে যেখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবেশ থেকে উঠতে উঠতে সুপার অ্যাচিভারও হঠাৎ করে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।
অরুণ: এমএস-এর কাহিনি মোটেও তা নয়। কোনও দিন হবেও না। আমি ওকে দেখছি প্রায় সতেরো বছর। প্রথম দিনে যেমন ছিল, আজও তাই আছে। হয়তো এখন দামি গাড়ি চড়ে, দামি পোশাক পরে। কিন্তু মনোভাবটা বদলায়নি। আমি বরঞ্চ ওর এজেন্ট হয়েও দোকানে গিয়ে দুম করে একটা কুড়ি হাজার টাকার জিনিস কিনে ফেলতে পারি। এমএস সেখানে প্রথমেই খোঁজ করবে কোনও ডিসকাউন্ট অফার আছে কি না? নিজের শেকড় থেকে আজও ও সরে যায়নি।

প্র: মুদগল রিপোর্টে পরিষ্কার আছে, ধোনি মিথ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মইয়াপ্পনকে বর্ণনা করেছেন ক্রিকেট উৎসাহী হিসেবে। টিম মালিকের পরিচয় দেননি।
অরুণ: এই জায়গাটায় আপনারা ভুল করছেন। মুদগল আলাদা করে ধোনির কথা বলেননি। ওই জায়গাটা উনি ‘সামারি’ করে অনেকের নাম একসঙ্গে দিয়ে দিয়েছেন। যাঁরা মইয়াপ্পনকে ক্রিকেট উৎসাহী বলে বর্ণনা করেছেন। ধোনির নামটাও তার মধ্যে গ্যাছে। কিন্তু সত্যি কথা হল এটাই যে, মইয়াপ্পনের প্রকৃত আইডেন্টিটি ওর কাছে জানতেই চাওয়া হয়নি। ওকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, দল নির্বাচনে মইয়াপ্পনের কী ভূমিকা থাকত? এমএস তখন জোর দিয়ে বলেছিল, কোনও ভূমিকা থাকত না। টিম করতাম আমি। মইয়াপ্পনের সঙ্গে কোনও দিন কোনও আলোচনা হয়নি। আলোচনা একমাত্র হয়েছে আমার কোচের সঙ্গে।

প্র: চার দিকে ধোনিকে নিয়ে এই যে বিভ্রান্তি, তা নিয়ে ওর স্পনসরদের কী প্রতিক্রিয়া?
অরুণ: ওর সব স্পনসরই যা মনোভাব দেখাচ্ছে, তা এক কথায় ভীষণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং। প্রায় প্রত্যেকেই আমাকে ফোন করে বলেছেন, আমরা সঙ্গে আছি। বলেছে এমএসডি একজন আইকন, আর ও আইকনই থাকবে।

প্র: ধোনি? ধোনি একান্তে কী বলছেন?
অরুণ: বলছে, আমার মনে কোনও ডয়ভর নেই। কারণ আমি কোনও কিছু করিনি। সত্যিই যদি কিছু করতাম, তা হলে এত বুক ফুলিয়ে খেলতে পারতাম না। আমি যেটা শুনে ভাবছিলাম, মাহি সত্যিই হ্যাটস অফ টু ইউ। এমন চাপের মধ্যেও কী নির্বিকার ভাবেই না তুমি টিমটাকে সেমিফাইনালের দিকে নিয়ে গিয়েছ!

প্র: একটা কথা পরিষ্কার করে বলুন। বিন্দু দারা সিংহকে ধোনি কী ভাবে চিনলেন? ভারত অধিনায়ক হিসেবে ওঁর কি আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল না?
অরুণ: ও ভীষণ সতর্ক। আর অসম্ভব সচেতন। অ্যাডের কাজ বা নানা কারণে ওকে বছরে আশি থেকে নব্বই দিন মুম্বইয়ে কাটাতে হয়। কত রকম যে আমন্ত্রণ আসে। ভরপুর সোশ্যাল লাইফে যোগ দিতে বলে। কিন্তু ও কোথাও যায় না। কাউকে চট করে মিট করে না। নিজের ‘জোন’-এর মধ্যে থাকে। এত সচেতন বলেই না!

প্র: তা হলে বিন্দু দারা সিংহকে চিনলেন কী করে?
অরুণ: ম্যাচে আলাপ হয়েছে। তা-ও প্রথমে বিন্দু গিয়ে সাক্ষীর সঙ্গে আলাপ করে। আর মইয়াপ্পন টিমে যতই প্রভাবশালী হোক, ধোনি ওর সঙ্গেও একা রুমে কখনও দেখা করেনি।

প্র: এই যে চার দিক থেকে বেশ কিছু দিন ধরে ধোনির চূড়ান্ত সমালোচনা চলছে। এটার কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
অরুণ: এর উত্তরটা কি না দিলেই নয়?

প্র: কেন, উত্তর দেওয়ার কী সমস্যা?
অরুণ: সমস্যা এটাই যে, তা হলে একটা অপ্রীতিকর কথা বলতে হয়। যে সিএসকে বা বোর্ডের খুব পাওয়ারফুল লোকের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যিখানে ও পড়ে গ্যাছে। অনেক বছর আগে যেমন ডালমিয়ার জন্য সৌরভ কোনও দোষ না করেও সমস্যায় পড়েছিল। আর খানিকটা কারণ অবশ্য ঈর্ষা। চেন্নাই সুপার কিংসে যে ও নেতৃত্ব দেয় আর সেটা যে ব্র্যান্ড হিসেবে এত সফল, এত শক্তিশালী, সেটাও সবার রাগের কারণ। নইলে বিন্দুকে ও কোনও দিন পাত্তা দেয়নি। মইয়াপ্পনকে ও কখনও বাড়তি খাতির করেনি।

প্র: আজকের গুজব হচ্ছে, প্রচণ্ড চাপে ধোনি সিএসকে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিতে চাইছেন। ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও তিনি থাকতে অনিচ্ছুক।
অরুণ: এ রকম কোনও খবর আমার জানা নেই। এমএস কিন্তু কাপুরুষ নয় যে পালিয়ে যাবে। ও যে দিন যাবে, নিজের টার্মসে যাবে। কারও চাপে পড়ে যাবে না।

প্র: আপনার সম্পর্কেও নানান অভিযোগ।
অরুণ: আমার সম্পর্কে? (অবাক) আমি কী করলাম?

প্র: শোনা যায় ভারতীয় দলে আপনি অশান্তি তৈরি করছেন। প্লেয়ারকে চাপ দিচ্ছেন যে আপনাদের কোম্পানি রীতি স্পোর্টসে সই না করলে সে ইন্ডিয়া খেলবে না।
অরুণ: কী বলছেন কী? এর চেয়ে আজগুবি কিছু হয়?

প্র: টিম থেকে বাদ পড়া কোনও সিনিয়র ক্রিকেটার কিন্তু একান্তে এই অভিযোগ এনেছেন যে, আপনি শাসানি দিয়েছেন আমার কোম্পানি জয়েন করলে না তো, ইন্ডিয়া কেরিয়ার শেষ করে দেব। তার পর সে আর ভারতের হয়ে খেলছে না।
অরুণ: হোয়াট ননসেন্স! আপনি যা বললেন, ঠিক তার উল্টো। আমি বরঞ্চ তরুণ প্লেয়ারদের বলি, আর যা-ই করো রীতি স্পোর্টসে জয়েন কোরো না। দাগ লেগে যাবে। লোকে বলবে ক্যাপ্টেনের টিমে ছিলে বলে চান্স পেয়েছ। তা ছাড়া আমি এ সব কাজ সত্যিই করলে এমএস কবেই আমাকে আবর্জনার বাক্সে ফেলে দিত।

প্র: আপনি প্লেয়ার টানার জন্য চাপ দেন না? বিশ্বাস করতে বলছেন?
অরুণ: ভাই, একটা ছোট প্রশ্ন করব। ‘দিওয়ার’ দেখেছেন?

প্র: হ্যাঁ।
অরুণ: ‘দিওয়ার’-এর একটা ডায়লগ মনে পড়ে? ‘মেরে পাস মা হ্যায়’? আমিও সে ভাবে বলি, আর কিছু চাই না। ধনসম্পত্তি, প্লেয়ার, কিচ্ছু চাই না। মেরে পাস মাহি হ্যায়! মাহি হল ভারতীয় ক্রিকেটের শতকরা ৯৫ শতাংশ। ও সঙ্গে থাকলে আর কিছু দরকার আছে?

প্র: শ্রীনি ওকে প্রচণ্ড পক্ষপাতিত্ব করেন এটা স্বীকার করেন?
অরুণ: ওর পক্ষপাতিত্ব করেন বলে আমি মনে করি না। বরঞ্চ আমি বলব, লোকে সিএসকে নিয়ে ঈর্ষাকাতর বলে এ সব কথা রটায়। সবাই এই যে বলে মিস্টার শ্রীনিবাসন ওকে ব্যাক করেন। আমার বিনীত প্রশ্ন, ডালমিয়া বা শরদ পওয়ার বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকলে কি করতেন না?

Advertisement

আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন। ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেনের কাছে আপনি কী চান?

প্র: পারফরম্যান্স।
অরুণ: পারফরম্যান্স আর কী চান? লোকটা আপনাকে দুটো ওয়ার্ল্ড কাপ দিয়েছে। একটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়েছে। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে টিম এক নম্বর হওয়ার সময় এই লোকটাই চার্জে ছিল। আর কী চাই? মহেন্দ্র সিংহ ধোনির লিডারশিপ স্কিল নিয়ে কোনও প্রশ্নের অবকাশ আছে? যেখানে ভারতের সেরা কর্পোরেটরা এসে বলে আমরা ওর নেতৃত্বের গোপন দিকগুলো জানতে চাই, সেখানে তাকে কারও ব্যাক করার প্রয়োজন আছে কি? আমার তো মনে হয় তার কোনও পক্ষপাতিত্বের প্রয়োজনই নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement