দুই ‘ম’-এর মহাসঙ্কট

শ্রীনি-ধোনি জুটিটা ভাঙতে হবে

নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারতকে এ ভাবে হারতে দেখে যতটা না খারাপ লাগছে, তার চেয়ে রাগ হচ্ছে বেশি। বিদেশের মাঠে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যে ‘খুব খারাপ’ ভারতীয় ক্যাপ্টেনদের এক জন, তা নিয়ে বোধহয় রবিবারের পর আর সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০০:৩২
Share:

নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারতকে এ ভাবে হারতে দেখে যতটা না খারাপ লাগছে, তার চেয়ে রাগ হচ্ছে বেশি। বিদেশের মাঠে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যে ‘খুব খারাপ’ ভারতীয় ক্যাপ্টেনদের এক জন, তা নিয়ে বোধহয় রবিবারের পর আর সন্দেহ থাকা উচিত নয়। বিশ্বকাপ জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর বাদ দিলে ইংল্যান্ড থেকে আজ পর্যন্ত মোট এগারোটা টেস্টের দশটাতেই হারল ভারত! ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা তো বটেই এখন বিশ্বের আট নম্বর টিম নিউজিল্যান্ডও আমাদের অনায়াসে হারিয়ে দিচ্ছে! ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টিতে ক্যাপ্টেন্সি করা এক জিনিস। আর টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি আর এক ব্যাপার। এখানে সেশন ধরে ধরে স্ট্র্যাটেজি করতে হয়। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি ধোনিকে ওয়ান ডে-তে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত অবশ্যই রেখে দেওয়া উচিত। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওর কোনও রিপ্লেসমেন্ট নেই। কিন্তু টেস্টে ওকে এখনই সরানো হোক।

Advertisement

নিকৃষ্ট সব অধিনায়কত্বের উদাহরণ। ভারত আজ কত রানে হারল? চল্লিশ তো? এ বার নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসটা মনে করে দেখুন। ওরা ৮০-৯। কে বল করতে আসল? না, রোহিত শর্মা! যেখানে পেসারদের ও রকম ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। শেষ উইকেটে পঁচিশ রান যোগ হল নিউজিল্যান্ডের। আর ভারত হারল চল্লিশ রানে। রোহিত বেশি রান দেয়নি। বেশি বলও করেনি। কিন্তু ওকে ওই সময় দেখে নিউজিল্যান্ডের টেল এন্ডাররা কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসটা পেয়েছিল। যাতে ওই পঁচিশ রান।

রবিবার নিউজিল্যান্ডের কাছেও হারতে দেখে বলাবলি চলছে যে ভারতীয় দলের সমস্যাটা আসলে কী? কেন বাইরে টানা এ ভাবে হেরে চলেছে? আমি কয়েকটা কারণ দেখতে পাচ্ছি।

Advertisement

এক) ওপেনিং সমস্যা: সত্যি বলতে ইন্ডিয়া টিমে যে দু’জন ওপেন করতে নামছে তাদের মধ্যে মুরলী বিজয়কে নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বিদেশের মাঠে ওর ভাল কিছু করা খুব মুশকিল। শিখর এ দিন ভাল খেলল। সেঞ্চুরি করল। কিন্তু ও আবার এই ফর্মটা টেনে নিয়ে যেতে পারবে কি না, বড় প্রশ্ন। আমার তো মনে হয়, এখনই গৌতম গম্ভীরকে ফেরানো উচিত টিমে। বিদেশে কী ভাবে খেলতে হয় গম্ভীর জানে।

দুই) টেস্টেও ওয়ান ডে ক্রিকেটের প্রভাব: আমার মতে, এটা সবচেয়ে বড় রোগ ইন্ডিয়া টিমে। চেতেশ্বর পূজারা, রাহানের মতো দু’এক জন বাদে এখানে সবাই স্ট্রোক প্লেয়ার। টেস্ট যে আধুনিক ক্রিকেট নয়, এখানে যে নেমেই চালানো যায় না, সেটা কেউ বুঝবে না। বিরাটকে বাদ রাখছি। কিন্তু রোহিত, শিখর সবার একই রোগ। দেখলে মনে হবে, উপমহাদেশের উইকেটে ব্যাট করতে নামছে। কে ওদের বোঝাবে যে ভারতে ভাল ব্যাটিং করা এক জিনিস, আর বাইরে আর এক। ভারতে বল সোজা আসে, অনায়াসে খেলে দেওয়া যায়। বাইরে বল মুভ করে। সেখানে ওই একই ভাবে চোখ বুজে চালাতে গেলে খোঁচাটা সোজা কিপারের হাতে যাবে। দোষ দিয়েও লাভ নেই। গোটা বছরই তো গুচ্ছের ওয়ান ডে, টি টোয়েন্টি খেলতে হচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটের অ্যাডজাস্টমেন্ট হবেও বা কী করে?

তিন) ‘প্রেডিক্টেবল’ ধোনি: এখন বাইরে খেলতে গেলেই দেখছি ধোনি টস জিতে ফিল্ডিং নিচ্ছে। বিপক্ষ টিম টসে যাওয়ার আগেই জেনে যাচ্ছে ধোনি কী করতে পারে! তা হলে চমকটা আর কী রইল? কীসের তুমি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিমের অধিনায়ক? আমার মনে হয়, নানা রকম দায়িত্বে ধোনির চিন্তাভাবনা সব গুলিয়ে যাচ্ছে। ও তিনটে ফর্ম্যাটে ক্যাপ্টেন। উইকেটকিপার। টেস্টে আবার সাত নম্বরে আসতে হবে। মনে হয় ও এতগুলো দায়িত্ব আর সামলাতে পারছে না। আর ধোনি কেন, ফ্লেচারের অবস্থাও চোখে দেখা যাচ্ছে না। মাসের পর মাস মোটা টাকা নিচ্ছে, কিন্তু কোনও অবদান নেই। ধোনির সমস্যা হলে তুমি ঠিক করো স্ট্র্যাটেজি। সেটা নেই। শর্ট বলে রায়না আগেও সমস্যায় পড়ত, এখনও পড়ে। বিদেশি কোচ রেখে লাভটা তা হলে কী যদি বিদেশে জেতার মন্ত্রটাই না পাওয়া যায়?

চার) ভাল স্পিনারের অভাব: ইডেন পার্ক টেস্টে দেখলাম অশ্বিনকে বাইরে রেখে টিম নামাল ভারত। অশ্বিন ভাল বল করুক, খারাপ বল করুক। টিমের এক নম্বর স্পিনার। তাকে বসিয়ে টিম নামছে মানে কোনও ভরসাই নেই স্পিনে। আর রবীন্দ্র জাডেজা যে রান আটকানোর বলটা করে, সেটা দিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতা যায় না। হরভজন সিংহ এখনও তো শেষ হয়ে যায়নি। দেখা যায় না কি? পেস বোলিং নিয়ে বলব, শামি ভাল করছে। জাহির শেষের দিকে, তবু যা করছে ভালই। কিন্তু ইশান্তকে নিয়ে এ বার সিদ্ধান্তে আসতে হবে। অকল্যান্ড টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইশান্ত ছ’ উইকেট নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের পাঁচশো তোলা তাতে আটকায়নি। আর এক টেস্টে ওর ন’টা উইকেট পাওয়া দেখে বিশেষ লম্ফঝম্ফেরও কোনও দরকার নেই। কারণ আবার কবে নেবে, কেউ জানে না!

পাঁচ) অধিনায়কের স্বজনপোষণ: এই ব্যাপারটা এখনই ধোনিকে বন্ধ করতে বলা হোক। বলা হোক, তুমি দিনের পর দিন নিজের ইচ্ছেমতো ইশান্ত শর্মা, রোহিত শর্মাদের খেলিয়ে যেতে পারো না। বলা হোক, শুধু তোমার পছন্দ নয় বলে একটা মনোজ তিওয়ারি বসে থাকতে পারে না। এতে তুমি টিমের যেমন ক্ষতি করছ, তেমন ভারতীয় ক্রিকেটেরও ক্ষতি করছ।

বললাম বটে, কিন্তু ধোনিকে কিছু বলবেও বা কে? বোর্ড প্রেসিডেন্ট, আইসিসি-র আসন্ন মুখ্য কর্তার তো ধোনি কাছের লোক! ভারত বিদেশে আরও দশটা হারলেও ধোনি যেমন আছে তেমনই থাকবে। সত্যি বলতে শ্রীনি-ধোনি পার্টনারশিপটা না ভাঙলে ভারতীয় ক্রিকেটের কিছু হওয়া মুশকিল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement