প্র্যাকটিস ম্যাচে শেষ বলে জয়ের জন্য দরকারি ওভার বাউন্ডারি মারতে গিয়ে অমিত মিশ্র বোল্ড হয়ে যাওয়ায় ৫ রানে হারল ভারত।
শ্রীলঙ্কার পর ভারত আর একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ পাবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে। সেখানে নিশ্চয়ই রোহিতের বদলে রাহানে ওপেন করবে। অ্যারনের বদলে মোহিত শর্মার পেস পরখ করা হবে। বিরাটকে চারে পাঠানো হবে। ধোনি সুযোগ পেলে ব্যাট করবে। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে শুনলাম, ডান হাতের আঙুলে সামান্য ব্যথা থাকায় ও নাকি নামেনি। কিন্তু ছ’মাস পর ভারতের একটা টি-টোয়েন্টি ডাগ-আউটে বসে অধিনায়ক নিশ্চয়ই সাহস পেয়েছে যুবরাজের ব্যাটিংয়ে। অ্যারন কিংবা মিশ্রের বোলিংয়ে। টিমের দুই প্রধান স্পিনার অশ্বিন-জাডেজার টেল-অর্ডারে ব্যাটিং দেখে।
সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের পারফরম্যান্স ভাল নয়। এ বছর সব ফর্ম্যাট মিলিয়ে বারোটা ম্যাচ খেলে ভারত জিতেছে শুধু আফগানিস্তান আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুটো ওয়ান ডে। আর একটা টাই হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। সোমবারের প্র্যাকটিস ম্যাচের প্রেক্ষিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের সম্ভাবনা নিয়ে যদি আলোচনা করি, তিনটে মূল বিষয় পাওয়া যাচ্ছে।
শক্তি স্বভাবতই সেটা আমাদের দলের ব্যাটিং। আমি এখনও বলব রোহিতের বদলের রাহানেকে আসল টুর্নামেন্টে ওপেন করানো উচিত। সে ক্ষেত্রে মিডল অর্ডারে রোহিত-যুবরাজের মধ্যে এক জন সুযোগ পাবে। পাক। তবে এ দিনের পারফরম্যান্স দেখলে যুবরাজ এগিয়ে। মোটামুটি টাচে আছে বলেই তো টিভি-তে ব্যাটিং দেখে মনে হল। কয়েকটা টিপিক্যাল যুবরাজোচিত শট খেলেছে। রায়নার ব্যাটিংও ভাল লাগল। আমার মতে রায়না টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে রায়নাকে তিনে নামায় ধোনি। এ দিন ভারতের হয়েও নামাল। আশা করব, আসল টুর্নামেন্টে এটাই রায়নার ব্যাটিং অর্ডার হবে। সেক্ষেত্রে ধবন-রাহানে ওপেনিং জুটি হলে তিন থেকে আটে থাকা উচিত রায়না, বিরাট, যুবরাজ, ধোনি, জাডেজা, অশ্বিনের। ধোনির যেটা বিরাট প্লাস তা হল, ওর দলের দু’জন প্রধান স্পিনার ব্যাটিংটাও ভাল করতে পারে। এ দিনও জাজেডা (১২) আর অশ্বিন (১২ বলে ১৯) সেটা প্রমাণ করেছে। তা সত্ত্বেও ২০ ওভারে ১৫৪ উঠল না কেন? মালিঙ্গার শেষ ওভারে তিনটে উইকেট চলে না-গেলে আর তারও আগে ধোনি ব্যাট করতে নামলে মনে হয় রানটা উঠে যেত।
দুর্বলতা অবশ্যই বোলিং। সঙ্গকারাদের বিরুদ্ধে বরুণ অ্যারন গড়ে ১৪০-১৪১ কিলোমিটারে বল করেছে। দ্রুততম ছিল ঘণ্টায় ১৪৫। কিন্তু পরের ম্যাচেই ও কী করবে কেউ জানে না। ধারাবাহিকতার অভাব ওর প্রধান সমস্যা। অমিত মিশ্রের লেগ স্পিন দেখে এ দিন ওকেই স্পিনারদের মধ্যে মনে হচ্ছিল, যে কিনা উইকেট পেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল, আসল টুর্নামেন্টে ও কি এগারোয় থাকবে? ভারত তিনটে স্পিনার নিয়ে উপমহাদেশের পিচেও টি-টোয়েন্টিতে নামবে কি না সেটা বড় প্রশ্ন। যে-হেতু যুবরাজ, রায়না এমনকী রোহিতও প্রয়োজনে স্পিন বলটা করতে পারে। ক’টা স্পিনার দরকার? তবে বোলিং দুর্বলতা ঢাকতে ভারতের উচিত পাঁচ বোলারে খেলা। সেটা তিন পেসার+দুই স্পিনার হলেও হোক।
আতঙ্ক সেটা প্রায় পুরোটাই মানসিক। মাইন্ড সেট-টা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মেগা উদ্বোধনী ম্যাচে নামার আগেই সামলে নেওয়া দরকার ধোনির ভারতের। দলটা এ বছর মাত্র দু’টো ম্যাচ জিতেছে। কোচের চাকরি নিয়ে দেশের ক্রিকেটমহলে প্রশ্নের পাহাড়। বোর্ড যতই বলুক ডানকান ফ্লেচারের পাশে আছে, এশিয়া কাপের পর উপমহাদেশের পিচে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যর্থ হলে কোচের জবাবদিহি চাইবেনই কর্তারা। ফলে কোচ মানসিক চাপে থাকবেন। কোচ হল দলে বাবার মতো। বাবা-ই যদি নড়বড়ে থাকে, ছেলেরা সাহসী হবে কোথ্বেকে? তার উপর ২০০৭-এ প্রথম বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের তিনটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত শেষ চারে যেতে পারেনি। ধোনিদের তাই সবার আগে সাহসী হয়ে উঠতে হবে। যেটা আমাদের অধিনায়কের সীমিত ওভারের ম্যাচে নিজস্ব ট্রেডমার্ক। সেটাই যা ভরসা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ১৫৩-৬ (জয়বর্ধনে ৩০, অশ্বিন ৩-২২)
ভারত ২০ ওভারে ১৪৮ (রায়না ৪১, যুবরাজ ৩৩, মালিঙ্গা ৪-৩০)।
এই ম্যাচের ইতিবাচক দিকটা হল বরুণ অ্যারন। ও ভাল বল করেছে। স্পিনাররাও ভাল। সবারই খেলার সুযোগ আছে। আমার ডান হাতে অল্প ব্যথা আছে। ঝুঁকি নেওয়ার কোনও মানে হয় না। তা ছাড়া চেয়েছিলাম অন্য ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং করার সুযোগ পাক।
—মহেন্দ্র সিংহ ধোনি