রবিচন্দ্রন অশ্বিন যদি বিজয় হাজারে কোয়ার্টার ফাইনালে তামিলনাড়ুর চমক হন, তা হলে তাঁর জবাবি ব্রহ্মাস্ত্রও বার করে ফেলল বাংলা।
তিনি মহম্মদ শামি।
যাঁকে শনিবার সিএবি-তে দল নির্বাচনী বৈঠক চলার ফাঁকেই ডেকে নেওয়া হল, যাঁর নাম ওই বৈঠকেই রেজিস্টার করা হল, এবং শেষ পর্যন্ত ইডেন থেকে বেরনোর সময় শামি বলে দিলেন, “এখানে আছি যখন, খেলব না কেন?”
আগামী মঙ্গলবার ইডেনে বিজয় হাজারে ট্রফির (রঞ্জি একদিনের টুর্নামেন্ট) কোয়ার্টার ফাইনালে পুরনো কোচ ডব্লিউ ভি রামনের তামিলনাড়ুর মুখোমুখি হচ্ছে বাংলা। গত রঞ্জিতে যাদের হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলা, রামনের ডিজাইন করা ‘খোঁয়াড়ে’ উল্টে রামনের টিমকেই বধ করে। তফাতের মধ্যে এ বার কোয়ার্টারে ওঠার যুদ্ধ নয়, বিজয় হাজারের সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই। এবং সেই যুদ্ধে শামিকে পেয়ে যাওয়া বিশাল একটা অ্যাডভান্টেজ বলে মনে করছে বাংলা শিবির।
এ দিনের বৈঠকে নির্বাচকরা ছাড়া অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল ও কোচ অশোক মলহোত্রও ছিলেন। সেখানেই ঠিক হয় যে, তামিলনাড়ু যদি অশ্বিন-দীনেশ কার্তিকদের নিয়ে আসতে পারে, তা হলে শামিকে খেলাতেও কোনও অসুবিধে নেই। সিএবিতে সন্ধের দিকে এমনিতেই আসার কথা ছিল শামির, কিন্তু তাঁকে আগেভাগে ডেকে পাঠিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে ফেলা হয়। পরে শামি বলছিলেন, “বাংলার হয়ে খেলাটা সব সময় গর্বের ব্যাপার। আর ম্যাচ খেলার পাশাপাশি প্র্যাকটিসটাও হয়ে যাবে। আমি আসায় বাংলার অ্যাডভান্টেজ হল কি না বলতে পারব না। তবে এখানে আছি যখন, খেলতে কোনও অসুবিধে নেই।”
আর তামিলনাড়ু? ডব্লিউ ভি রামন যে টিম নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে আসছেন, তাতে কে নেই? সদ্য এশিয়া কাপ ফেরত দীনেশ কার্তিক এবং অশ্বিন তো বটেই, অভিনব মুকুন্দ, মুরলী বিজয়, বদ্রিনাথ, বাবা অপরাজিত, লক্ষ্মীপতি বালাজি-- এঁদেরও থাকার কথা। যাঁরা শহরে ঢুকছেন আজ, রবিবার। সঙ্গে আছেন রামন, যিনি লক্ষ্মীদেরই পূর্বতন কোচ। ইডেনকেও ভাল রকম চেনেন। যা নিয়ে শামি শুনিয়ে রাখলেন, “রামন রামনের মতো স্ট্র্যাটেজি বানাবেন। আমরা আমাদের মতো খেলব। আমাদেরও নিজস্ব স্ট্র্যাটেজি আছে। ওদের ব্যাটিং লাইন আপ খুব শক্তিশালী। কম রানে যদি তামিলনাড়ুকে অল আউট করে দেওয়া যায়, অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।” যদিও বাংলার হয়ে বিজয় হাজারে-তে একটা ম্যাচই খেলতে পারবেন শামি। কারণ, ১৪ মার্চ তাঁকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ রওনা হতে হচ্ছে। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে, তাঁর কাঁধে ও পায়ে সামান্য চোটজনিত সমস্যাও আছে।
তবে শুধু শামি নন, তামিলনাড়ু ম্যাচ নিয়ে গোটা বাংলা শিবিরেই চাপা যুদ্ধং দেহি মেজাজ। রঞ্জিতে চেন্নাইয়ের ‘খোঁয়াড়ে’ রামনের টিমকে হারানোর পর বাংলা শিবির থেকে সে সবের ‘উপযুক্ত পাল্টা’-ও দেওয়া হয়েছিল। এ বার চেন্নাইয়ের বদলে ইডেন। তামিলনাড়ুর ঘরের মাঠের বদলে বাংলার ঘরের মাঠ। পিচ কী হবে? ইডেনের পিচ কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় সোজাসুজি বলে দিলেন, “খোঁয়াড় হবে না। বাংলা ও ভাবে ক্রিকেট খেলে না। ভাল ওয়ান ডে পিচ হবে। কিন্তু এটাও দেখা হবে যাতে বাংলার পেসাররা সুবিধে পায়। আর প্র্যাকটিসের যা সুযোগ সুবিধে বাকিরা পায়, তামিলনাড়ু সেটা পাবে। কিন্তু রামন যদি আশা করে বাংলার কোচ ছিল বলে আমার থেকে বাড়তি সুবিধে পাবে, তা হলে কিন্তু ভুল করবে।” জাতীয় দলের এক নম্বর স্পিনরাকে নিয়েও বিশেষ টেনশন নেই বাংলা শিবিরে। অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল যেমন পরিষ্কার বলে দিলেন, “রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিয়ে ভাবব কেন? আমি ভাবব আমার টিমের ভাল খেলা নিয়ে। দেখব, কী ভাবে ম্যাচটা জিতে সেমিফাইনালে ওঠা যায়। বাকি কোন টিম কাকে খেলাল, সে সব নিয়ে মাথাব্যথা নেই।”