পাঠান-পরাক্রম। রবিবার। ছবি বিসিসিআই
সময় সন্ধ্যা ৭.৫৬। টুইটারে ভেসে উঠল বাদশাহ খানের বার্তা। ‘আমার কেকেআরের ছেলেরা আমার মায়ের শহরে...চলো আমার লালেরা, জিতে ফেরো।” তার পরেই আক্ষেপ, “ওখানে থাকতে পারলে ভাল হত। কিন্তু মুম্বইয়ে শুটিং শেষ করতে হবে যে।’’
মাঠে না থাকলে কী হবে, এই একটা টুইটারেই স্পষ্ট, শরীরটা মন্নতে থাকলেও তাঁর মন কিন্তু পুরোপুরি ভাবেই নিজামের শহরে, তাঁর মায়ের জন্মভূমিতে।
বছর চারেক আগে ২০১০-এর ২০ অগস্ট নিজের সম্পর্কে শাহরুখ টুইটারে লিখেছিলেন, “আমি অর্ধেক হায়দরাবাদি (মা), অর্ধেক পাঠান (বাবা), কিছুটা কাশ্মীরি (দিদা)। জন্ম দিল্লিতে, থাকি মুম্বইয়ে, পঞ্জাবি বউ আর কলকাতার টিম। এক্কেবারে ইন্ডিয়ান।” সেই তাঁর মায়ের শহরে এসে এ বার দলের মালিককে ফের উপহার দিলেন টিম গম্ভীর। এই নিয়ে টানা চারটে জয়। এই ম্যাচটা হয়তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্লে অফের আরও কাছে চলে এল কেকেআর। তাই হয়তো এসআরকে লিখলেন, “মা থাকলে কেকেআরের ছেলেদের নিয়ে গর্বিত হত।”
উপ্পলের স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকলে শাহরুখ এ দিন হয়তো দেখতে পেতেন সেই ব্যানারটা। ড্রেসিংরুমের ডানদিকের ভেসে ওঠা সেই ব্যানারে কমলা রঙে ইংরেজি অক্ষরে লেখা ‘চেসামু, কোটলারদামু, গেলাজদামু’। তার নীচে ছোট কালো অক্ষরে লেখা ‘ডু ইট সানরাইজার্স’। এর মানে কী? এক তেলুগুভাষীর কাছে জানতে চাইলে তিনি যা বললেন, তা জানলে শাহরুখ নির্ঘাৎ বড় তৃপ্তি পেতেন। কারণ, ওটা ‘করব, লড়ব, জিতব রে’-র তেলুগু তর্জমা। প্রিয় দলকে শেষ পর্যন্ত নাইটদের এই ‘অ্যানথেম’-ই ধার করার অনুরোধ খোদ সানরাইজার্স সমর্থকদের!
উপ্পলে ব্যাটসম্যানদের বাইশ গজের স্বর্গে যে ভাবে ফুল ফুটিয়ে তুললেন টিম গম্ভীরের বোলাররা, তার পর ইডেনে মঙ্গলবার তাঁদের কী রূপ দেখবেন এটা ভেবে চিন্তায় পড়তে পারেন ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের ব্যাটসম্যানরাও। চার দিন আগেই যারা মিচেল জনসনদের পিটিয়ে দু’শোর উপর রান তুলেছিলেন, সেই সানরাইজার্স ব্যাটসম্যানরা রবিবার রাতে মর্কেল, উমেশ (৩-২৬), নারিন (১-২১), চাওলা (১-২৪), সাকিবদের (২-২২) সামনে রীতিমতো কাঁপছিলেন যেন। নাইট বোলারদের দাপটে ১৪৮ রানেই গুটিয়ে যাওয়ার পর আর বাঁচার রাস্তা খুঁজে পাবেন কী করে?
তাও গম্ভীর ব্যাট বল না ছুঁইয়েই আম্পায়ার নাইজেল লং-এর ‘বদান্যতায়’ কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে গেলেন। ক্রিজে পৌঁছেও হাত থেকে ব্যাট পড়ে যাওয়ায় রান আউট হয়ে ফিরতে হল রবিন উথাপ্পাকে। কিন্তু তাঁরা না পারলেও দলের বাকিরা কাজ শেষ করার পক্ষে যথেষ্ট। “এই যে দলের সবাই মিলে কাজটা করতে পারছি, এটাই তো ভাল ব্যাাপার”, ম্যাচ শেষে বললেন নাইট অধিনায়ক।
ম্যাচ শেষে অপরাজিত ইউসুফ পাঠান ব্যাটটা ডাগ আউটের দিকে তাক করে কী যেন দেখালেন। তারপরই বিপক্ষের সদস্য ছোট ভাই ইরফানকে জড়িয়ে ধরে কত না আদর। সাংবাদিক বৈঠকে এসে বললেন, “একবারও মনে হয়নি হেরে যেতে পারি। এই উইকেটটা আমার চেনা। এখানে আমারা দলীপ ট্রফির জোনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তবে আমাদের বোলাররা কী বল করল! দুই ওপেনার দুর্ভাগ্যবশত আউট হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমরা তো ছিলাম দলকে জেতানোর জন্য।” তাঁর ২৮ বলে ৩৯ ও দুশখাতের ১৫ বলে ২৫ যেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তেমনই মণীশ পান্ডের ৩২ বলে ৩৫-ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জেতার পর মণীশ বললেন, “টিমের প্রচুর সাপোর্ট পেয়েছি। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।” ম্যাচের সেরা তিন শিকারের মালিক উমেশ যাদব বলছিলেন, “নিজেকে ছন্দে ফেরানোর জন্য অনেক খেটেছি। আজ পুরো বেসিকটা আঁকড়ে ধরে ছিলাম। উইকেট থেকেও সাহায্য পেয়েছি। যেমন বাউন্স, সুইংও হচ্ছিল। বল করে খুব মজা পেলাম।” ম্যাচের শেষে প্রেসবক্স থেকে ডাগ আউটের সামনের জায়গাটা দেখে মনে হচ্ছিল কিছু বেগুনি পোকা কিলবিল করছে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন গম্ভীররা। ড্রেসিংরুমের এমন পরিবেশ নিয়েই সোমবার রাতে ঘরে ফিরছে নাইট বাহিনী।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা সানরাইজার্সের কুড়ি ওভারের শেষে রানটা গিয়ে দাঁড়াল ১৪২-৮-এ। মর্কেল বনাম স্টেইন যুদ্ধ, পাঠান-ভাইদের গৃহযুদ্ধ এবং দুই দিল্লিওয়ালা ধবন বনাম গম্ভীরের সংঘাত তখনই ঢলে পড়তে শুরু করেছে বেগুনি ব্রিগেডের দিকে, তখন হাজারো ওয়াটের গমগমে সাউন্ড সিস্টেমে ডিজে-র ‘উই ওয়ান্ট সিক্সার, উই ওয়ান্ট সিক্সার’ চিৎকারেও তেমন ভাবে সাড়া দিচ্ছিলেন না হতাশ সানরাইজার্স সমর্থকরা।
নেতৃত্ব থেকে অব্যহতি পেয়ে চাপমুক্ত শিখর ধবন ১৪ বলে ১৯ রান করে ফিরে এসে টিভি সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, “এই উইকেটে ১৮০-২০০ না করলে জেতা কঠিন।” সেটাই হল শেষ পর্যন্ত।
যে উইকেটে বল সোজা ব্যাটে আসছে, সেই উইকেটে তিন স্পিনার কেন? টসের পর এই নিয়ে প্রচুর গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। গম্ভীর উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চাইছিলেন না।
এ বার ইডেনে ঘরের মাঠে পরপর তিনটে খেলা। ক্যাপ্টেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন যেন। বললেন, “এ বার ঘরে ফেরা। ওখানে তো আরওই ভাল খেলব।”
ইডেন সে দিকেই তাকিয়ে। শাহরুখ বাদশাহ খানও।
শাহরুখ যখন ‘পাগল’
• ইয়েস, ইয়েস, ইয়েসসসস! জিতলে অনেক উদার হওয়া যায়। টেনডো, ইউসুফ, আমার রবিন এবং গোতি। আমি আম্পায়ারের নামই করতে চাই না...ওই কৃপাবশত।
• আমার মা তোমাদের নিয়ে দারুণ গর্বিত হত কেকেআরের ছেলেরা...লাভ ইউ। তোমাদের সবাইকে চুমু খেতে চাই...কলকাতায় এসেই যা করব। মণীশ, তুমি একটা চ্যাম্পিয়ন।
• উমেশ তুমি সবচেয়ে মিষ্টি। ম্যান অব দ্য ম্যাচের যোগ্যতম ক্রিকেটার। আমি আর আমার মেয়ে তো খুশিতে পাগল হয়ে গিয়েছি।
(ম্যাচ শেষে টুইটারে)
চ্যালেঞ্জার এ বার বেঙ্গালুরু
• কেকেআর ১১ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট
• ম্যাচ বাকি চেন্নাই সুপার কিংস (২০ মে), রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (২২ মে) এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (২৪ মে)।
• প্লে অফের রাস্তা তিন ম্যাচে তিনটেই জিতলে প্লে অফে। চেন্নাইয়ের কাছে হারলে আরসিবি ম্যাচ জিততে হবে। দুটো ম্যাচ হারলে নির্ভর করতে হবে অন্য টিমের রেজাল্টের উপর।
• সুবিধে কেকেআর বাকি তিন ম্যাচ খেলবে ইডেনে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরসিবি-র সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে পয়েন্ট ১০।
• অসুবিধে শেষ পর্বে খেলতে হবে সিএসকে এবং আরসিবি-কে। তার উপর আরসিবি-ও প্লে অফের বড় দাবিদার।
• আরসিবি-র ম্যাচ বাকি হায়দরাবাদ, কেকেআর, চেন্নাই।