বালোতেলির দিনে গ্যালারিতে বান্ধবী।
কোনটা আসল মারিও?
শনিবার গভীর রাতে মানাউসের মাঠের ভেতর থাকা অপ্রত্যাশিত ঠান্ডা মাথার মারিও বালোতেলি? না, হেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইতালিকে জয় এনে দেওয়ার পর মাঠের বাইরের ‘ম্যাড মারিও’ই আসল?
যিনি কিনা বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ জিতে উঠেই ফিফার স্বর্ণ-কাপের উপর নিজের ছবি লাগিয়ে পোস্ট করে দিয়েছেন তাঁর সরকারি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে! মারিও বালোতেলি বলেই বোধহয় এমন দুঃসাহস, আত্মবিশ্বাস দেখাতে পারেন! পাগলামি করতে পারেন!
জয়ের গোলটা অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই নিজের বাগদত্তাকে উৎসর্গ করেছেন মারিও। ব্রাজিলে কাপযুদ্ধে আসার আগেই যে প্রেমের যুদ্ধে তিনি জিতে নিয়েছিলেন বেলজিয়ান সুন্দরীর হৃদয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ফ্যানি নেগিশার সম্মতি
বিশ্বকাপে বসালেন
নিজের মুখ। ফেসবুকে।
আদায় করেছিলেন বালোতেলি। সেই ফ্যানিকে শনিবার মানাউসের এরিনা আমাজনিয়া-র গ্যালারিতে দেখা গিয়েছে। হবু স্বামী বালোতেলির নম্বর (৯) লেখা ইতালির জার্সি গায়ে আজুরিদের ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন। ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ বালোতেলি সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে দেন, “আমার গোলটা ইতালির পাশাপাশি ফ্যানির জন্যও করা। গোলটা আমার হবু বউকে উৎসর্গ করছি। যে আজ এখানে ছিল।” তার পর একটু ভেবে আবার বলেন, “আর দেশে আমার যে সব বন্ধুরা আছে তাদেরও অবশ্য গোলটা উৎসর্গ করছি।”
এসি মিলানের তেইশ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড নেইমারের মতোই বিশ্বকাপ অভিষেকে গোল করে দেশকে জেতালেন। “এটাই আমার প্রথম বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ড ম্যাচটাই আমার প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ। সব মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা হল,” বলেছেন বালোতেলি। ব্রাজিলে পা রেখেই জানিয়েছিলেন, ফুটবলমহলে তাঁর ‘পাগলা মারিও’-র ভাবমূর্তি পাল্টে ‘কাপ জয়ী মারিও’-র তকমা পেতে চান। সামান্য ছুতোয় মাথা গরম করতে সিদ্ধহস্ত বালোতেলিকে তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচে অদ্ভুত শান্ত দেখিয়েছে। রেফারির সঙ্গে তর্ক কেন, এক বারও কথা বলতেই দেখা যায়নি। না কোনও ইংরেজ ফুটবলারের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেছেন বা উত্তেজিত ভঙ্গি প্রকাশ করেছেন বদমেজাজি তারকা।
তবে ইতালিকে জিতিয়ে উঠেই দলের অন্য গোলকারী ক্লদিও মারচিসিওকে পাশে নিয়ে প্রথমে ইন্সটাগ্রামে ‘সেলফি’ পোস্ট করে দেন বালোতেলি। ইতালীয় ভাষায় টুইট করেন, ‘ফর্জা আজুরি! কন্টিনুইমো কসি!’ অর্থাৎ, ‘কাম অন ইতালি! এ ভাবেই খেলে চলো।’ তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেসবুকে তাঁর সেই বিশ্বকাপের গায়ে নিজের ছবি লাগিয়ে অভূতপূর্ব পোস্ট! তবে সাংবাদিকদের সামনে আবার শান্ত এবং বাস্তববাদী বালোতেলির আবির্ভাব ঘটে। বলে দেন, “আমরা কাউকে ভয় যেমন পাই না, তেমনই এই টুর্নামেন্টে কত দূর যাব এখনই ভাবছি না। আপাতত শুধু পরের কোস্টা রিকা ম্যাচ (২০ জুন) জেতাই আমাদের লক্ষ্য।”
তবে আমাজনের কাছাকাছি অবস্থিত মাঠের গরম নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই বালোতেলির মেজাজ খানিকটা যেন উত্তপ্ত দেখা গিয়েছে। “ভয়ঙ্কর আবহাওয়া। আমি তো এক-এক সময় প্রচণ্ড তাপমাত্রার চোটে চোখে ভুলভাল দেখছিলাম! তবে আসল ব্যাপার হল ম্যাচ জেতা। সেটা প্রতিকূল আবহাওয়াতেও আমরা পেরেছি।” অত্যাধিক গরমের প্রসঙ্গে ইতালি অধিনায়ক আন্দ্রে পির্লো (গোলকিপার বুফোঁ চোটে না খেলায়) বলেন, “একটা অসমসাহসী ইতালি দলের নেতৃত্ব দিতে পেরে আমি গর্বিত।” আজুরিদের কোচ সিজার প্রান্দেলি ৩২ ডিগ্রি না ছাড়ালে (এই ম্যাচের সময় তাপমাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রি সেললিয়াস) ম্যাচে ফিফার বিশেষ ‘ওয়াটার ব্রেক’ না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে একহাত নিয়েছেন। এমনকী প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের তিন ফুটবলারের (স্টারিজ-স্টার্লিং-ক্যাহিল) ম্যাচ চলাকলীন পায়ের পেশিতে টান ধরার পিছনেও প্রচণ্ড গরমে শরীরে জলাভাবের কারণ বলে উল্লেখ করে সহানুভূতিও জানিয়েছেন। বালোতেলির খেলাতেও অভিজ্ঞ ইতালি কোচ আনন্দে ভাসতে নারাজ। “আমি মনে করি মারিওর আরও ভাল করার ক্ষমতা আছে। ম্যাচের আগে সাংবাদিক সম্মেলনেও ওকে পাশে নিয়ে কথাটা বলেছিলাম। কারণ মারিওর মধ্যে অবিশ্বাস্য পরিমাণ প্রতিভা আছে।”
ছবি: রয়টার্স