প্রশ্নের মুখে রাজু।
বাংলা ক্রিকেটে গোটা বছর ধরে ঘটে চলা নানা সমস্যার মধ্যে আরও একটা সংযোজন হল। আবার নতুন করে বিতর্কে জড়ালেন বাংলার নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান রাজু মুখোপাধ্যায়।
এর আগে সিএবিতে প্রকাশিত রাজুর বই নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। যিনি নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান হয়েও বাংলার দু’বার রঞ্জি জয়ে পরিষ্কার সন্দেহের ছায়া দেখেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, জয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।
এমনিতে রাজু জাতীয় স্তরে ক্রিকেট বোর্ডের প্রশাসনিক মহলে যথেষ্ট দক্ষ পেশাদার হিসেবে পরিচিত। ম্যাচ রেফারি হিসেবে গত ক’বছরে তিনি প্রশংসনীয় কাজও করেছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এ বার একক দায়িত্বে তাঁকে নির্বাচক প্রধান করার পর মনে হয়েছিল বহু বছর পর ময়দানে যুক্ত হয়ে রাজু নতুন হাওয়া আনতে পারবেন।
কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ সম্পূর্ণ বিপরীত মোড়ে। বাংলা টিমের সিনিয়রদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল, এমন অভিযোগ ইডেনের সরবত বিক্রেতাও তুলবে না। আর তাঁকে ঘিরে নবতম বিতর্ক হল, সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার সম্পর্কে তীব্র গালাগাল শুনে তাতে হাততালি দেওয়া আর ‘ওয়েল ডান’ বলা।
ঘটনা গত বুধবারের। দক্ষিণ কলকাতা সংসদ ক্লাবে বিশ্বকাপ নিয়ে আড্ডায় এক ক্রিকেট সাংবাদিক হঠাৎ বলে ওঠেন, শ্রীনিবাসন দুর্নীতিগ্রস্ত। আর এই চুরি তিনি শিখেছেন জগমোহন ডালমিয়ার কাছে। অভিযোগ হল, যা শুনে রাজু হাততালি দেন আর বলে ওঠেন ‘ওয়েল ডান’।
আনন্দবাজারকে রাজু অবশ্য বললেন, অভিযোগ সত্যি নয়। “যা বলা হচ্ছে, তা মোটেই নয়। আমি হাততালি দিইনি। আর অনুষ্ঠান শেষে ওই সাংবাদিককে ওয়েল ডান বলেছি মাত্র। যেমন সবাই বলে।” প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে অবশ্য রাজুর বক্তব্য মিলছে না।
সিএবি-র একাংশের অভিযোগ, এটা শুনে কী ভাবে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ‘ওয়েল ডান’ বলতে পারলেন? বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিএবি-র প্রাক্তন যুগ্ম সচিব চিত্রক মিত্রর উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া, “আমি বিস্মিত নই। উনি কারও ভাল সহ্য করতে পারেন না। ওই সাংবাদিকের কথা যদি নির্বাচক কমিটি প্রধানের ঠিক মনে হয়, তা হলে উনি এখনও সিএবির পদে আছেন কেন? এখুনি পদত্যাগ করুন না! বাংলা ক্রিকেটারদের সাফল্য উনি কখনও সহ্য করতে পারেননি। সে অরুণলালই হোক বা সম্বরণ।”
প্রাক্তন বোর্ড যুগ্ম সচিব এবং সিএবি ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্তর মন্তব্য সমান কড়া। বললেন, “ওঁকে এ সব কথায় সমর্থন করতে হলে সিএবির সংস্পর্শ থেকে বেরিয়ে করতে হবে। গাছেরও খাব আবার তলারও কুড়োব, চলবে না!” সিএবি কোষাধ্যক্ষ তথা ভারতীয় টিমের সঙ্গে বর্তমানে থাকা ম্যানেজার বিশ্বরূপ দে-ও আক্রমণাত্মক। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোনে বললেন, “সিএবি এখন মঙ্গলাহাট হয়ে গিয়েছে। যে যা পারছে, করছে। এর পর প্লেয়ারদের শৃঙ্খলা রাখার কথা বলা যাবে তো? লজ্জাজনক ঘটনা বললেও কম বলা হয়।” সিএবি যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় স্তম্ভিত। “এটা ঘটে থাকলে চরম নিন্দনীয়। ডালমিয়ার মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এমন মন্তব্য কী করে সমর্থন পেতে পারে?” আর সিএবি-র প্রাক্তন সহ-সচিব দেবব্রত দাসের সটান হুমকি, “ওঁকে আর সিএবিতে ঢুকতেই দেব না!”
সিএবির অনেকের বক্তব্য হল, একজন সাংবাদিক এটা যদি বা বলে থাকেন, তা হলে নির্বাচক কমিটির প্রধান হয়ে রাজু কেন সেটা প্রতিবাদ করলেন না? তিনি তো ওয়াকআউট করতে পারতেন। বুধবারের অনুষ্ঠানে প্রাক্তন টেনিস তারকা ডেভিসকাপার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন। তিনি বললেন, “ওই সময় আমি বেরিয়ে গিয়েছিলাম। পরে শুনলাম খুব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।” আর দক্ষিণ কলকাতা সংসদের সচিব হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের যুক্তি, “ক্লাব যদি বিয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়, আর সেখানে যদি মারামারি হয়, দোষটা কি ক্লাবের? তবে ভবিষ্যতে ক্লাবে ক্রিকেটাড্ডা বসাতে হলে অনেক ভেবেচিন্তে করতে হবে।” ডিকেএস সিএবি অনুমোদিত ক্লাব বলে এই বিতর্কে তাদের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। ডিকেএস কর্তারা ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরাও অবাক হয়ে যান।
জগমোহন ডালমিয়া তাঁর কাছেও ব্যাপারটা পৌঁছেছে। তিনি দু’দিনের জন্য চেন্নাই যাচ্ছেন। চেন্নাই থেকে ফিরে খতিয়ে দেখবেন। খবর পৌঁছেছে ইনদওরে থাকা বাংলা টিমের ড্রেসিংরুমেও। শোনা গেল, সিএবি-র তরফে যুগ্ম সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রশাসনিক পর্যায়ে ব্যাপারটা জানানো হয়েছে।