সপ্তম আইপিএল-এর ফাইনালে সেঞ্চুরি করছে পাপালি। শিলিগুড়ির শক্তিগড়ে খেলা দেখছেন ঋদ্ধিমানের আত্মীয়রা। ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
আটানব্বই রান থেকে ছক্কা মেরে শতকের ঘরে পৌঁছাতেই এতক্ষণ ধরে রাখা উচ্ছ্বাস আর বাঁধ মানল না। শিলিগুড়িতে ঋদ্ধিমানের পাড়া শক্তিগড়ের রাস্তায় নেমে পড়লেন উৎসাহীরা। কিশোর, যুবকদের সংখ্যাই বেশি। আছেন বয়স্ক, প্রৌঢ়রাও। ছোট থেকে পাড়ার এক চিলতে মাঠে ব্যাট হাতে খেলে বেড়ানো ছেলেটাই ফাইনালে পঞ্জাবের রান মেশিনের কাজ করল। যাঁর কাঁধে ভর দিয়েই পঞ্জাব পৌঁছল বড় স্কোরে। ঘরের ছেলে ঋদ্ধিমানের নামের পাশে ততক্ষণে জ্বলজ্বল করছে ৫৫ বলে ১১৫ নটআউট। তা নিয়ে পাড়ার ছেলে, যুবরা উৎফুল্ল তো হবেই। উচ্ছ্বসিত পাড়ার ক্লাব শৈলেন্দ্র স্মৃতি ক্লাব ও পাঠাগারের কর্মকর্তারাও।
ঋদ্ধির খেলা থাকলেই টিভির সামনে বসে থাকছে শক্তিগড়ে ঋদ্ধিমানের জ্যাঠাদের পরিবার। এ দিন ঋদ্ধিমান তথা তাঁদের প্রিয় পাপালির খেলা দেখে তাঁর খুড়তুতো দাদা কৌশম্বী, কাকা, জ্যাঠা সকলেই উচ্ছ্বসিত। সাড়ে চার বছরের ভাইপো সেও চাইছিল কাকা ঋদ্ধিমানের সেঞ্চুরিটা হোক। সকলেই প্রার্থনা করছেন। আর অল্প সময়ের মধ্যেই সেঞ্চুরি হতেই হইহই করে উঠলেন সকলেই। তবে এ বার পঞ্জাবকে জেতাতে পারলে তবেই সেঞ্চুরির মর্যাদা যথাযথ থাকে। না হলে গুরুত্ব অনেকটাই যে কমে যাবে। কথা বলতে বলতেই কাকা সুশান্তবাবুর মোবাইলে কলকাতা থেকে ফোন করলেন ঋদ্ধিমানের বাবা প্রশান্তবাবু। গলায় ধরা পড়ছিল উচ্ছ্বাসটা। বাড়ির সকলেই আত্মহারা। সুশান্তবাবু শুধু বলছিলেন, “দারুণ খেলেছে। আসাধারণ।”
কলকাতা নাইট রাইডার্স নয়, পাপালির পক্ষ নিয়ে পঞ্জাবের দিকেি সমর্থন ঝুঁকে পড়েছে অনেকেরই। পরিষ্কার যুক্তি, ঘরের ছেলে যেই দলে সেই দলকেই সমর্থন করব। এর আগেও ঋদ্ধিমান যে দলে খেলেছেন, সেই দলকে সমর্থন করেছেন পরিবারের লোকেরা। কাকা সুশান্তবাবু বলেন, “ঋদ্ধির প্রতিভা বা ক্রিকেট দক্ষতা নিয়ে আমাদের কোনও দিনই সন্দেহ ছিল না। কিন্তু সুযোগ না পেলে অনেক বড় প্রতিভা নষ্ট হয়ে যায়। আমাদেরও তেমনই আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এবারে পঞ্জাব দল গঠনের সময় একজনই উইকেট রক্ষক রাখায় জানতাম এবার সুযোগ পাবেই। আর সুযোগ পেলে ঋদ্ধি কী করতে পারে তা তো প্রমাণিত।” এত কিছু তত্ত্ব কথায় যেতে চান না দাদা কৌশম্বী বা জেঠিমা দীপা দেবী। আদরের ‘পাপালি’-র দাপুটে ব্যাটিং তাদের মুগ্ধ করেছে। পিসিমা সান্ত্বনাদেবী বলেন, “বাড়ির সকলেরই খেলাধূলায় ঝোঁক। ঋদ্ধির বাবা প্রশান্ত নিজে গোলরক্ষক ছিলেন। ভাল খেলতেন। আমরা সবসময়ই পাশে ছিলাম।” গোটা বাড়ির সকলেই খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত একচুলও নড়লেন না।
পাড়ার শৈলেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগারে ভিড় করে খেলা দেখছে পাড়া ছেলেরা। দলের সমর্থনের ব্যপারে দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কিংস ইলেভেন পঞ্জাব, কেউ কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু দলের ব্যপারে মতভেদ থাকলেও পাড়ার ছেলেকে সমর্থনের ব্যপারে অবশ্য সবাই একমত। এক একটি বল ঋদ্ধির ব্যাট থেকে আছড়ে পড়েছে, আর উচ্ছ্বাস আছড়ে পড়েছে ক্লাবে, পাড়ায় আনাচে কানাচে। রাজু সাহা, সৌরভ সরকাররা সকলেই জানাচ্ছেন, তাঁরা এতটা ভাল খেলা ঋদ্ধির কাছ থেকে আশা করিনি। তন্ময় বসাক বলেন, “আমরা কেউই আশা করিনি পাপালিদা এই খেলাটা খেলবে। এবার অবশ্য ভালই খেলেছিল গোটা টুর্নামেন্টে। ত ফাইনালে ভাল খেলার ব্যপারটাই আলাদা। তার উপর সেঞ্চুরি করায় সোনায় সোহাগা।