অগ্নিকন্যা। সোনা তুলে জ্যোৎন্সা-দীপিকা।
সর্দার ছাড়াই ‘সর্দারি’ ভারতের।
ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতে তখনও মিনিট পাঁচেক বাকি। ভারতের রক্ষণে দাঁত ফোটাতে আগ্রাসী হামলায় ১১টা ‘ব্ল্যাক স্টিক’। গোলপোস্ট ছেড়ে উঠে এসেছেন গোলকিপারও। তার কিছুক্ষণ আগেই বিপক্ষের কড়া ট্যাকলে আঘাত পেয়েছেন ভারতীয় গোলরক্ষক শ্রীজেশ। তবু রূপেন্দ্র পাল সিংহদের জয় থামাতে পারল না নিউজিল্যান্ড। ০-২ পিছিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত কিউয়িদের ৩-২ হারিয়ে কমনওয়েলথ গেমসের ফাইনালে উঠল ভারত।
তবে এ দিন হকি দলের ফাইনালে ওঠার চেয়েও খুশির খবর এল স্কোয়াশের হাত ধরে। মেয়েদের ডাবলসে দীপিকা পাল্লিকল আর জোৎস্না চিনাপ্পা ইতিহাস গড়লেন কমনওয়েলথ গেমস স্কোয়াশে ভারতের প্রথম সোনা জিতে। ইংরেজ প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রায় দাঁড়াতেই দেননি দীপিকারা। জেতেন ১১-৬, ১১-৮। ক্রিকেটার দীনেশ কার্তিকের বাগদত্তা দীপিকা বিশ্বের সেরা দশে আসা প্রথম ভারতীয় মহিলা স্কোয়াশ তারকাও। হবু স্ত্রী-র সাফল্যের দিনে তাঁর সঙ্গেই ছিলেন দীনেশ। টুইটারে দীপিকা লেখেন, “এমন দিনে প্রিয় মানুষকে পাশে পেয়ে খুব ভাল লাগছে।” উত্তরে দীনেশও টুইট করেন, “দীপিকার জন্য আমি গর্বিত।”
ভারতকে এ দিন সোনা এনে দেওয়ার সুযোগ ছিল বক্সারদেরও। ভাই-বোন সরিতা দেবী আর লইশরাম দেবেন্দ্র সিংহ। কিন্তু দু’জনই ফাইনালে হেরে যান। ৭৫ কেজি বিভাগের ফাইনালে ফেভারিট হিসেবে নেমে ইংরেজ প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে ব্যর্থ ভারতের তারকা বক্সার বিজেন্দ্র সিংহও (০-৩)। তার আগে ৬৯ কেজি বিভাগের ফাইনালেও হারেন মনদীপ জাংরা। ফলে বক্সিং থেকে এ দিন চারটি রুপো এল ভারতের খাতায়।
ব্যাডমিন্টনেও দিনটা মন্দ যায়নি ভারতের। পারুপাল্লি কাশ্যপ সিঙ্গলসে আর ডাবলসে জ্বালা গাট্টা আর অশ্বিনী পোনাপ্পা ফাইনালে উঠে পদক নিশ্চিত করলেন। সিঙ্গলস ফাইনালে উঠতে না পারলেও ব্রোঞ্জ পান পিভি সিন্ধু। তবে এ দিনের বড় চমক অপেক্ষা করছিল হকিতে। ক্যাপ্টেন সর্দার সিংহ সাসপেন্ড থাকায় কিউয়ি চ্যালেঞ্জ সামলানো আরও কঠিন হবে রমনদীপদের তার আভাস ছিলই। কিন্তু রূপেন্দ্র, রমনদীপ আর আকাশদীপ সিংহ গ্লাসগো থেকে অন্ততপক্ষে হকিতে ভারতের রুপো জয় নিশ্চিত করে নেন।
উচ্ছ্বাস। ফাইনালের টিকিট পেয়ে। গ্লাসগোয় শনিবার।
শুরুতে অবশ্য দাপট ছিল কিউয়িদেরই। দু’মিনিটেই সাইমন চাইল্ড নিখুঁত ক্রস পাস থেকে বল জালে জড়িয়ে এগিয়ে দেন নিউজিল্যান্ডকে। যার মধ্যে একটা পেনাল্টি কর্নার থেকে। কিন্তু শ্রীজেশ তৎপর থাকায় ব্যবধান আর বাড়েনি। তবে ১৮ মিনিটের মাথায় নিক হেগ রিবাউন্ড শট থেকে স্কোর ২-০ করে দেন।
ব্ল্যাক স্টিকের ঝড় সামলে ভারত ম্যাচে ফেরে পেনাল্টি কর্নার থেকেই। ২৭ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র পেনাল্টি কর্নার পেয়েও যদিও গোল আসেনি। ভিআর রঘুনাথের শট এক কিউয়ি প্লেয়ারের বুকে লাগে। রেফারি পেনাল্টি স্ট্রোক দিলে ভারতের হয়ে ব্যবধান কমান অস্থায়ী ক্যাপ্টেন রূপেন্দ্র।
দ্বিতীয়ার্ধে ভারতীয় দলকে অনেক বেশি গুছোনো আর প্রতিআক্রমণে ধারালো লাগছিল। প্রতিআক্রমণ থেকেই মনপ্রীতের পাসে স্টিক ছুঁইয়ে সমতা ফেরান রমনদীপ সিংহ। তার পাঁচ মিনিট পরেই আকাশদীপের রিভার্স ফ্লিক থেকে গোল দলকে এগিয়ে দেয়।
ফাইনালে ভারতের সামনে অস্ট্রেলিয়া। যারা এ দিন অপর সেমিফাইনালে ৪-১ হারায় ইংল্যান্ডকে। দিল্লি কমনওয়েলথ গেমস ফাইনালেও অস্ট্রেলিয়ার মুখেই পড়তে হয়েছিল ভারতকে। সে বার শেষ পর্যন্ত আট গোল খেয়ে (০-৮) রুপোতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল সর্দারদের। এ বার গ্রুপ পর্যায়েও ২-৪ হারতে হয়েছিল অজিদের কাছে। তা ছাড়া ইতিহাস বলছে, কমনওয়েলথ গেমস হকিতে অস্ট্রেলিয়া সোনা ছাড়া কিছু জেতেনি।
পাওয়ারলিফটিংয়ে এ দিন ব্রোঞ্জ জিতেছেন সাকিনা খাতুন। ব্যাডমিন্টনে ছেলেদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ পেলেন গুরুসাই দত্ত। ব্রোঞ্জ পেয়েছেন ট্রিপল জাম্পার অরপিন্দর সিংহও। তবে টেবল টেনিসের তারকা শরথ কমল এ দিন সেমিফাইনালের পর ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে হারেন।
ছবি: পিটিআই
কমনওয়েলথে মুখোমুখি রেকর্ড
• ১৯৯৮ ভারত ২ অস্ট্রেলিয়া ৫ (গ্রুপ)
• ২০১০ ভারত ২ অস্ট্রেলিয়া ৫ (গ্রুপ)
• ভারত ০ অস্ট্রেলিয়া ৮ (ফাইনাল)
• ২০১৪ ভারত ২ অস্ট্রেলিয়া ৪ (গ্রুপ)