কার্তিক ৯২
তামিলনাড়ু ২০৮-৫
গোটা দিনে খেলা হল মোটে ছেষট্টি ওভার। যুদ্ধ শুরুই হল নির্ধারিত লাঞ্চটাইমকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে। বাংলা তুলল পাঁচটা, দিল শ’দুয়েক। আবারও চটপট চারটে তুলে গিলতে হল সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ। শ্রেয়স গোপাল, শ্রেয়স আইয়ারদের বদলে এ বার কোনও দীনেশ কার্তিক বিপজ্জনক গাড্ডা থেকে টিমকে তুলে নিয়ে গেলেন। বাংলা আবার ম্যাচে ফিরলও। ফিরল ওই কার্তিককে ফিরিয়ে, ফিরল প্রথম দিনের অন্তিম লগ্নে।
সাধারণ দৃষ্টিতে রঞ্জি ট্রফির একটা মধ্যবিত্ত দিন। যেখানে রোমহর্ষক উত্তেজনার ছিটেফোঁটা থাকার কথা নয়। শুধু বাইশ গজের দু’টিমের যুদ্ধ ধরলে খুব একটা নেইও। কার্তিকের ইনিংসটাকে বাদ দিলে গোটা দিন ঢিকির-ঢিকির করে গেল ডব্লিউ ভি রামনের তামিলনাড়ু। ঝুঁকিতে গেল না। অশোক দিন্দার স্লেজিংয়ের উত্তরে কিছু বলল না। শুষ্কং-কাষ্ঠং নিরামিষ প্রথম দিন। যেখানে এটাও নিশ্চিত ভাবে বলা গেল না, কে এগিয়ে।
কিন্তু টিমটার নাম যে আবার বাংলা। বিতর্কদগ্ধ হতে আর লাগবে কতক্ষণ?
এত দিন সমালোচনা-বিতর্ক হচ্ছিল ইডেনের পিচ নিয়ে। বাংলার দল নির্বাচন নিয়ে। আজ হল টস জিতে কেন ব্যাট নয়, তা নিয়ে। এবং তাকে ঘিরে বিকেল সাড়ে চারটে থেকে ইডেনে যা চলল, অনায়াসে একটা বিতর্ক-সিরিজ ছাপানো যায় অধুনা বঙ্গ ক্রিকেট নিয়ে।
ক্লাবহাউস গেটে ইডেন কিউরেটরকে যখন সাংবাদিকরা ঘিরে ধরল, তখনও বোঝা যায়নি বিস্ফোরণটা এ ভাবে আসছে। পিচ মোটেও দিনভর গ্রিন টপের মতো ব্যবহার করেনি, আর দু’একটা প্রশ্নের পরই প্রবীরবাবু বলতে শুরু করলেন, “কে বলল এটা গ্রিন টপ? সবুজ উইকেট মানেই পেসারদের স্বর্গ হবে নাকি? শুনুন, বিশ্বে কোথাও বোলারের কথা ভেবে পিচ হয় না। এখানেও হয়নি। এটা ভাল ব্যাটিং উইকেট। যেখানে টস জিতে বাংলার ব্যাট করা উচিত ছিল!”
লক্ষ্মীরতন শুক্ল যা করেননি। আর তার পর প্রবীরবাবু যে অভিযোগটা তুললেন, আরও মারাত্মক। বাংলা টিমের কেউ নাকি পিচের চরিত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে একটা কথাও বলেনি!
দিন্দা ৩-৬৮
বঙ্গ অধিনায়ক প্রবীরবাবুর মন্তব্য, টস জিতে কেন ব্যাটিং নয় এ সব প্রসঙ্গে নীরব থেকে গেলেন। লক্ষ্মী যা বলার, বলবেন ম্যাচের পর। কিন্তু টিমের সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ বলতে শুরু করেছে। বলছে, এই উইকেটে টস জিতে ব্যাট না করাটা ভুল হয়েছে। বলা হচ্ছে, ভিজে আউটফিল্ডের জন্য দেড় ঘণ্টা দেরিতে ম্যাচ শুরু হল। পেসাররা ইডেন পিচ থেকে সুবিধে পান সকালের দিকে। সেটা যখন হল না, তখন টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া যেত। যুক্তি খুব ভুল নয়। গত দু’টো ম্যাচেই ‘সবুজ পিচ’ নিয়ে বাংলা উর্ধ্ববাহু হয়ে প্রথমে বল করেছে এবং শেষে ডুবেছে। তা ছাড়া উইকেটে বাউন্স ভাল, বল ভাল যাচ্ছে। স্ট্রোকপ্লেয়ারদের অসুবিধে হওয়ার কথা ছিল না। তামিলনাড়ু ওপেনার অভিনব মুকুন্দ তো ‘ডিসেন্ট উইকেট টু ব্যাট’ বলে মৃদু খোঁচাও দিয়ে গেলেন। কিন্তু বাংলা কোচ অশোক মলহোত্রকে প্রশ্নটা করাতে যা এল, সেটা যত না বঙ্গ কোচের হতাশাকে ধরে, তার চেয়েও বেশি বোধহয় বোঝায় টিমটার অবস্থা।
“সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। আমার টিম যখন বল করে, তখন উইকেটে কিছু থাকে না। আর যখন ব্যাট করে, উইকেটে সব থাকে!”
শোনা গেল, সোমবার গোটা দিন ধরে বারবার বাংলা ম্যানেজারকে ফোন করেছেন সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া। স্কোর জেনে কখনও নাকি উত্ফুল্ল হয়েছেন, কখনও স্তিমিত। টিমটা আজও তো তামিলনাড়ুকে ৯১-৪ করে দিয়েছিল। যেমন কর্নাটককে করেছিল ৬৯-৫। কর্নাটককে টেনেছিল শ্রেয়স গোপালের সেঞ্চুরি। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ডিকে’ আজ তামিলনাড়ুর হয়ে করে গেলেন ৯২। বাংলা আবার প্রতিপক্ষকে আইসিসিইউতে পাঠিয়েও বেঁচে ওঠার বিষল্যকরণী দিয়ে গেল। পরিস্থিতি যা, তাতে যদি তামিলনাড়ুকে তিনশোর কমে রাখা যায়, প্রথম ইনিংসের লিড তবু সম্ভব। কিন্তু সাড়ে তিনশো পেরোলে কঠিন নয়, প্রচণ্ড কঠিন। সাম্প্রতিকে বাংলা তো আবার এমন পরিস্থিতি থেকে বিপক্ষকে চারশো দিয়েছে। গত দু’টো ম্যাচের সঙ্গে এই ম্যাচের শুধু তফাত, এটা থেকে নাকি তিন পয়েন্ট যে কোনও উপায়ে চাই। না পেলে?
না পেলে বাংলাই বলছে, সব শেষ।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস