উত্তেজিত লক্ষ্মী। বৃহস্পতিবার ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
প্রথমে কোনও মন্তব্যে যেতে চাইছিলেন না। সাম্প্রতিকে বঙ্গ ক্রিকেটের সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন শেষে অনেক চাপাচাপির পর মুখ খুললেন বাংলা অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল।
প্রশ্ন: বাংলা এখন চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট। বাকি আরও চারটে, দুটো সরাসরি জিতলে নকআউট এখনও সম্ভব। তবু আপনার সংসারে এখনই অশান্তির এত আগুন কেন?
লক্ষ্মী: কারও মন্তব্য বা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কিছু বলার লোক আমি নই। আমি একজন সেনসিবল লোক। তাই কে কী বলছে না বলছে, সে সবে না ঢুকে বলব আমার ড্রেসিংরুম আগে যা ছিল, এখনও তাই আছে।
প্র: কী ভাবে একই আছে? টিমের দু’জন সিনিয়র আজ মিডিয়ায় নানা অসূয়া দেখিয়েছেন। সিএবি নাকি ঠিকঠাক পিচ দিচ্ছে না। টিমটার নাকি কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। তা হলে?
লক্ষ্মী: বাড়ির মধ্যে কী হচ্ছে সেটা আমি দেখব। বাড়ির বাইরে কী হচ্ছে, সেটা নয়। সকাল সাতটা থেকে পাঁচটা মাঠে কী হল, তা নিয়ে উত্তর দেব। বাকিটা নিয়ে নয়। নিজেরটা বলি। যত দিন ক্রিকেট খেলব, ক্যাপ্টেন থাকি বা না থাকি, চেষ্টা করব ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ভাল রাখার।
প্র: ইডেনের পিচ নিয়ে তো প্রচুর অভিযোগ। যে পিচে যে ম্যাচ হওয়া উচিত, সেটা নাকি হচ্ছে না।
লক্ষ্মী: পিচ দিয়ে সবটা হয় না। এটা ঠিক যে, স্ট্র্যাটেজি তৈরির সময় পিচ নিয়েও ভাবতে হয়। কিন্তু পুরো খেলাটা পিচের উপর দাঁড়িয়ে থাকে না। পারফরম্যান্সটাই আসল। পিচকে দোষ দেব না। বরং অধিনায়ক হিসেবে মেনে নেব যে আমার টিম যতটা ভাল খেলার কথা, সেটা হচ্ছে না। কিন্তু আমরা ফিরবই।
প্র: অশোক দিন্দা আজ প্রকাশ্যে বলেছেন, তামিলনাড়ু ম্যাচটা হওয়া উচিত ছিল কর্নাটক ম্যাচের পিচে।
লক্ষ্মী: অশোক দিন্দা টিমের এক নম্বর বোলার। হৃদয় দিয়ে ক্রিকেটটা খেলে। পিচ নিয়ে প্রশ্নে বলি, অধিনায়ক হিসেবে পিচ নিয়ে মন্তব্য আমি করতে পারি না। পিচ নিয়ে কথা আর বলতেও চাই না।
প্র: আপনার টিমের দুই সদস্য জম্মু-কাশ্মীর ম্যাচে টার্নার চেয়েছেন। আবার কোচ বলেছেন টার্নারে লাভ নেই কারণ হাতে স্পিনার নেই। কাশ্মীর ম্যাচে উইকেটটা কী হবে?
লক্ষ্মী: টিমের স্ট্র্যাটেজি আমি বাইরে বলি না। কোনও কিছু নিয়েই বাইরে কথা বলাতে বিশ্বাস করি না। আর কে কী বলছে, আমি শুনিনি।
প্র: আরও একটা অভিযোগ, সিএবি আর ক্রিকেটারদের লক্ষ্য নাকি মিলছে না। এটা ঠিক? সিএবির সঙ্গে কি যোগাযোগের সমস্যা হচ্ছে?
লক্ষ্মী: লক্ষ্য সেট হয় মাঠে। মাঠের বাইরে নয়। সিএবির সঙ্গে কমিউনিকেশন গ্যাপ হচ্ছে বলে আমি অন্তত মনে করি না। সিএবির থেকে যা-যা সাহায্য পাওয়া সম্ভব, গত কুড়ি বছর ধরে সব আমি পাচ্ছি। আমরা একসঙ্গে লক্ষ্য তৈরি করেছি, একসঙ্গে ক্রিকেট খেলছি। আশা করি এ সব জিনিস ক্রিকেটের মধ্যে আসবে না। ভাল সময়-খারাপ সময় সব জায়গাতেই আসে। আমরা এখন খারাপ সময়টার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বাস করি, ভাল দিয়ে সেটাকে ঢেকে দেওয়া যাবে।
প্র: টিম কম্পোজিশন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অশোক মলহোত্র বলছেন, বাংলা ব্যাট করলে পিচে সব থাকে। বল করলে কিছু থাকে না। তার মানে টিমে তো সমস্যা আছে।
লক্ষ্মী: খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেলে অনেক কিছু হয়। বাবাও তো ছেলেকে মারে-ধরে, বকে। অশোক পাজি টিমের ফাদার ফিগার। যে ভাবে উনি টিমের জন্য খাটেন, ভাবা যায় না। পাজি যদি কথাটা বলে থাকেন, বেশ করেছেন। টিমের ভালর জন্য বলেছেন। আমি তো বলব পাজির ওই কথাটা আমাদের তাতিয়ে দেবে।
প্র: প্রেস কনফারেন্সে আজ প্রাক্তনদের একহাত নিলেন। বললেন, বাইরে থেকে তাঁদের মনে হতে পারে বাংলা আর পারবে না। কিন্তু আপনার টিমের তা মনে হচ্ছে না। কী বলতে চেয়েছেন?
লক্ষ্মী: বলতে চেয়েছি, যাঁরা এগুলো বলছেন তাঁরা আমাদের নিয়ে চিন্তিত বলেই বলছেন। ওঁদের বলব, আপানারা চিন্তাটা কম করুন। আমরা কামব্যাক করব। কী ভাবে, সেটা আমাদের উপরই ছাড়ুন। যখন খারাপ খেলছি, তখন কথা শুনতে আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আপনাদের অত চিন্তা করতে হবে না।
প্র: মরসুমের মাঝেই বাংলার যা অবস্থা, তাতে কত দূর এগনো সম্ভব?
লক্ষ্মী: এলআরএস এবং টিম বেঙ্গলের কাছে বাংলাই সব। অনেক দূর যাব আমরা। কে কী বলল, তা নিয়ে আমার ড্রেসিংরুমের পরিবেশ বিচার হবে না। এটা একটা পরিবার। যেখানে অশান্তি লাগবে। মিটেও যাবে। যে মিটমাটটা আজ পর্যন্ত কেউ আটকাতে পারেনি। মিডিয়া যত অশান্তির কথাই বলুক, উই আর টুগেদার।