নিজামের শহরে কেকেআরের থিম, ‘ইট কা জবাব পত্থর’

এক দশক পর ফের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুকুট চন্দ্রবাবু নাইডুর মাথায়। দেশ জুড়ে তীব্র মোদী লহরের চেয়েও যে এই ঘটনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজামের শহরের মানুষের কাছে, তা কান পাতলে বুঝতে কষ্ট হয় না। এর মধ্যে ব্যর্থতার রাত কাটিয়ে সানরাইজার্স শিবিরে সূর্যোদয় হলে তা হায়দরাবাদের কাছে হবে বোনাস। কিন্তু একেবারেই তা হতে দেওয়ার মুডে নেই কলকাতার নাইটরা।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৪ ০৩:০৪
Share:

অনুশীলনে ‘ফুটবলার’ গম্ভীর। শনিবার। ছবি পিটিআই

এক দশক পর ফের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুকুট চন্দ্রবাবু নাইডুর মাথায়। দেশ জুড়ে তীব্র মোদী লহরের চেয়েও যে এই ঘটনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজামের শহরের মানুষের কাছে, তা কান পাতলে বুঝতে কষ্ট হয় না। এর মধ্যে ব্যর্থতার রাত কাটিয়ে সানরাইজার্স শিবিরে সূর্যোদয় হলে তা হায়দরাবাদের কাছে হবে বোনাস। কিন্তু একেবারেই তা হতে দেওয়ার মুডে নেই কলকাতার নাইটরা। রবিবাসরীয় রাতে শিখর ধবনদের সাফল্যে শহরে বিরিয়ানি উৎসব যে হতে দেবেন না, আগের দিন মাঠে এসে বিপক্ষের কাণ্ডকারখানা দেখে তা-র শপথ প্রায় নিয়ে নিলেন গম্ভীররা।

Advertisement

মঞ্চ, রাজীব গাঁধী ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম, উপ্পল। নাটক শুরুর সময়, শনিবার বিকেল। সদ্য গা ঘামাতে নেমেছেন গৌতম গম্ভীররা। ফুটবল শেষ করে দল বেঁধে দৌড় শুরু করলেন মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কিন্তু দৌড়বেন কী, প্রায় সবার ঘাড় বাঁ দিকে ঘুরে। সে দিকে অস্থায়ী নেট টাঙিয়ে রীতিমতো যুদ্ধং দেহি মেজাজে ডারেন স্যামি ও শিখর ধবন। নেট বোলারদের বল পেয়ে রীতিমতো বোমাবাজি শুরু করলেন সানরাইজার্সের ক্যাপ্টেন ও ক্যারিবিয়ান তারকা অলরাউন্ডার।

বাউন্ডারির ধারে দাঁড়িয়ে যাঁরা প্র্যাকটিস দেখছিলেন, তাঁরাও হাওয়া। মাঠের ধারে দলের কয়েকজন সাপোর্ট স্টাফকে নিয়ে আড্ডায় মেতেছিলেন নাইটদের বোলিং কোচ ওয়াসিম আক্রম। শিখরদের এই ব্যাটিং বিস্ফোরণে যেন বিপদের গন্ধ পেয়ে তিনি চেঁচাতে শুরু করলেন, “আরে ইয়ে লোগ ক্যায়া কর রহা হ্যায়। পাগল হো গয়ে ক্যায়া?” ঘন্টা খানেক পর তাঁর দলের ব্যাটসম্যানরাও যে একই পাগলামি শুরু করবেন, তা কি আর ভেবেছিলেন আক্রম? সন্ধ্যায় শুরু হল মণীশ পান্ডে, উথাপ্পাদের তাণ্ডব। রবিবার রাতে হায়দরাবাদের অদূরে এই উপ্পল স্টেডিয়ামে যে ব্যাটিং ঝড় উঠতে চলেছে, এ কি তারই ট্রেলার?

Advertisement

একটু আগেই নাইট কোচ ট্রেভর বেইলিস সাংবাদিকদের সামনে এসে বলে গিয়েছেন, “উইকেট দেখিনি, তবে এই মাঠে শেষ কয়েকটা ম্যাচ দেখেছি। যে ভাবে বল ব্যাটে আসছে, তাতে তো দেখছি কাল ওদের ব্যাটসম্যানরা আগে ব্যাট পেলে পিটিয়ে বলের চামড়া গুটিয়ে দিতে পারে। অবশ্য আমাদেরও তেমন বোলার আছে। উপরন্তু ব্যাটসম্যানও ভরপুর। কাল ওদের ব্যাটিং আর আমাদের বোলিংয়ের লড়াই।”

বেইলিস মুখে এমন কথা বললে কী হবে, নেট প্র্যাকটিসে নাইট ব্যাটসম্যানদের দাপট দেখে মনে হল কাল ‘ইট কা জবাব পত্থর’-এ দিতে চান গম্ভীররা। টানা আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নেটে ব্যাট করে গেলেন নাইট অধিনায়ক। সাকিব আল হাসানকে নেটে ব্যাট করতে দেখে মনে হচ্ছিল, কোচ তাঁকে বলে দিয়েছেন, ‘প্রাণ ভরে ব্যাট করো আজ’। রবিন উথাপ্পাকে নিয়ে আলাদা করে পড়লেন বেইলিস। তাঁকে প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে সমানে নকিং করিয়ে গেলেন। মণীশ পাণ্ডে, সূর্যকুমার যাদবদেরও চোয়াল শক্ত। বাংলার বীরপ্রতাপ সিংহর বলে কনুইয়ে চোটও পেলেন সূর্য। নেটে ব্যাটসম্যানদের ঠিকমতো শট খেলাতে না পারার ‘অপরাধে’ ব্যাটিং কোচ ডব্লিউ ভি রামনের ধমকও খেতে হল পীযূষ চাওলাকে।

যে উইকেটে রবিবার ম্যাচ হবে, তার পাশের উইকেটে নেট টাঙিয়ে মনবিন্দর সিংহ বিসলাকে নিয়ে চলে এলেন মর্নি মর্কেল। বিসলাকে সমানে বল করে গেলেন তিনি। অন্যদিকে যেন অনেকটা ব্রাত্য করে রাখা হল ইউসুফ পাঠানকে। শুরুর দিকেই নেট ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল তাঁকে। কিছুক্ষণ ড্রেসিংরুমে কাটিয়ে প্যাড-আপ করে ব্যাট হাতে হেলমেট মাথায় দিয়ে মাঠে নেমে দাঁড়ালেন সেখানে, যেখানে ব্যাট করছিলেন বিসলা। সেখানেও যেন আজ তাঁর ঠাঁই নেই। মণীশ, সূর্যরা ওখানে নেট বোলারদের বলে চার-ছক্কা হাঁকানো প্র্যাকটিস করলেও ইউসুফকে বেশিরভাগ সময়ই নন স্ট্রাইকারের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। মাঝে মাঝে গিয়ে ব্যাটিং করে আসছিলেন। কিন্তু কেউ এলে জায়গা ছেড়ে দিতে হচ্ছিল তাঁকে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে রবিবারের ম্যাচের নীল নকশায় তাঁর নাম নাও থাকতে পারে।

সানরাইজার্সের কোচ টম মুডির ক্রিকেট বুদ্ধি নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ক্রিকেট দুনিয়ার। নাইটদের ব্যাটিং শক্তিকে থামানোর পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। যার ইঙ্গিত পাওয়া গেল প্র্যাকটিসের ফাঁকে। যখন বললেন, “রোজই যে ডেল স্টেইন ফ্লপ করবে, এমন কথা ভাবছেন কেন? যে জাতের ক্রিকেটার ও, তাতে আসল সময়ে জ্বলে উঠলে অবাক হব না।” মুডির কথাগুলো বেশ ইঙ্গিতপূণ। সুনীল নারিনকে কী করে ঠেকাবেন, এই প্রশ্নে কিন্তু তিনিও চুপ। তাঁর কাছেও সে রহস্য বোধহয় অধরা রয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement