বিদেশ সফরে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারতকে পরের পর ওয়ান ডে সিরিজ হারতে দেখে অনেকেই দেখছি শঙ্কিত। বেশ কয়েক জনকে বলতে শুনলাম যে, আর এক বছর পর ধোনির ভারত বিশ্বকাপে কী করবে? দক্ষিণ আফ্রিকার পর নিউজিল্যান্ডেও ওয়ান ডে সিরিজ হার আটকানো গেল না। পরের বছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে, এ সব মাঠেই ম্যাচ পড়বে, ভারত তখন করবে কী?
আশঙ্কাটা অমূলক নয়। টিম ইন্ডিয়ার বোলিং রোগ নতুন নয়। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হ্যামিল্টনে চতুর্থ ওয়ান ডে হারের পর অন্য একটা আশঙ্কা হচ্ছে আমার। বোলিং তো বটেই, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিমের ব্যাটিংটাও ঠিক আছে তো?
ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেনকে কিন্তু হ্যামিল্টন ম্যাচে দেখে মনে হল ধন্ধে আছে। বুঝে পাচ্ছে না, ওর টিমের শক্তি কোনটা? বোলিং নয়। কিন্তু ব্যাটিংকেও যে শক্তি বলবে, সেটা নিয়েও মনে হল ধন্ধে পড়েছে। বুঝে উঠতে পারছে না।
আসলে ওপেনিং নিয়ে গণ্ডগোলটা বাঁধছে। রোজ যদি আপনি আবিষ্কার করেন, আপনার টিম নেমেই ৪০-২ হয়ে যাচ্ছে, তা হলে সেখান থেকে রোজ পাল্টা দেওয়াটা রীতিমতো কঠিন কাজ। একে তো, ভারতের বোলিং ভাল নয়। টস জিতে সাহস করে ব্যাটিং নেওয়া যাচ্ছে না। ঠিকই তো নেই, কোন স্কোরটা ধোনির পেসারদের জন্য যথেষ্ট! অগত্যা, পরে ব্যাটিং। তার উপর ক্যাপ্টেনকে ধরেই নিতে হচ্ছে যে, তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো টার্গেট থাকবে। ওই অবস্থায় যদি দেখা যায় প্রায় প্রত্যেকটা ম্যাচে পঞ্চাশ রানের মধ্যে দু’জন ওপেনার প্যাভিলিয়লে ফিরে যাচ্ছে, তা হলে খুব মুশকিল। একটা টিমের শক্তি যদি তার ব্যাটিং হয়, তা হলে টপ অর্ডার দুর্দান্ত হবে। ব্যাটিং অর্ডারে ওয়ান, টু এবং থ্রি ব্যাটসম্যানকে নড়াতে কালঘাম ছুটবে বোলারের। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। মঙ্গলবারই দেখুন। ২২ রানের মধ্যে কোহলি আর রাহানে আউট হয়ে গেল। আর হ্যামিল্টনে ধোনির টিমের ব্যাটিং অর্ডার দেখে একটাই ব্যাপার মনে হচ্ছে কাকে ওপেন করতে পাঠাবে তা নিয়ে ও চূড়ান্ত সংশয়ে। ঈশ্বর জানেন, কেন এ দিন হঠাৎ করে বিরাট কোহলিকে ওপেন করতে পাঠিয়ে দেওয়া হল। যে কি না রেগুলার নাম্বার থ্রি। টিমের এক নম্বর ব্যাটসম্যান! আরে, ধবনদের উপর ভরসা না থাকলে তুমি অজিঙ্ক রাহানেকে পাঠাও। ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ওপেন করে। বিরাট কোহলিকে কেন? আর লাভটাও বা কী হল? বিরাট ২ করে আউট। রাহানে তিন নম্বরে নেমে করল ৩। তবু বিরাট না পারলেও একটা ধোনি থাকছে। একটা রবীন্দ্র জাডেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন থাকছে। যারা কি না ভারতীয় ব্যাটিংটা আট নম্বর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তো বলব, মঙ্গলবার ধোনি যে পাঁচ নম্বরে উঠে এল, জাডেজা-অশ্বিনদের ব্যাটিংয়ে ওর ভরসা আছে বলে। আর রানও করল ওরা! ধোনি ৭৯ ন:আ:, জাডেজা ৬২ ন:আ:। কিন্তু বোধগম্য হয় না যে টিমের মিডল এবং লোয়ার অর্ডার এ রকম, তাদের টপ অর্ডার কেন এ রকম হবে?
তবু যা করছে, ব্যাটিং করছে। কিন্তু বোলিং? বিদেশ সফরে স্পিনারদের নিয়ে এত কথা হল। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, ওরা খুব খারাপ করেনি। অশ্বিন-জাডেজা মিলে কুড়ি ওভার বল করে উইকেট একটা-দু’টো পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু রানটা আশি কী নব্বই রাখছে। কিন্তু বাকি তিরিশ ওভারে পেসাররা দু’শো দিয়ে চলে যাচ্ছে! এ দিন কী করল ভুবনেশ্বরকুমাররা? টিমের স্ট্রাইক বোলার যখন ভুবি বা শামি তখন ওদের তো ব্রেক থ্রু দিতেই হবে। সেটা হচ্ছে না। ধোনি এ দিন একটা সময় বুঝেই পেল না কাকে দিয়ে বল করালে রান আটকানো যাবে! যে পেসারই এল, আট ওভারে ষাট দিয়ে চলে গেল! আর ডেথ বোলিং শুধু নয়। পেসারদের মধ্যে শৃঙ্খলারও যথেষ্ট অভাব। ভুবিদের বুঝতে হবে ক্রিকেট এখন অনেক পাল্টে গিয়েছে। ওভারে ছ’টার মধ্যে ছ’টা বলই ভাল করতে হয়। ব্যাটসম্যান খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করবে না, ভাল বলেই মারবে। চারটে বল ভাল রাখলাম, আর বাকি দু’টোয় বাউন্ডারি সমেত সাত রান গলিয়ে দিলাম লাভ কী?
এর সমাধান?
বোলিং নিয়ে আগেই বলেছি। শৃঙ্খলা ফেরানো, ডেথ ওভার বোলিং এগুলো কোনও টোটকায় ঠিক হবে না। বোলারদের নিজেদের খাটতে হবে, বুঝতে হবে। ব্যাটিংয়ে একটা জিনিস করতে পারে ধোনি। বিদেশে চেতেশ্বর পূজারার মতো টেকিনিক্যালি দক্ষ ব্যাটসম্যান দিয়ে ওয়ান ডে-তে ওপেন করানো। যেখানে পূজারাকে বলে দেওয়া হোক, তোমার কাছে কেউ পনেরো ওভারে ১২০ চাইছে না। ৭৫-১ চাইছে। সেটা যদি হয়, তা হলে পরে বিরাট, ধোনি, জাডেজা থাকবে। রান এমনিই তিনশো প্লাস উঠবে। রোহিতকেও পরে পাঠানো যায়। এ দিন রান পেলেও মনে হয়, পরেই ও ভাল করবে।
যা দাঁড়াচ্ছে, বিশ্বকাপের টিম সেট হয়ে গিয়েছে বলে যে আওয়াজটা উঠছিল, সেটা যে কতটা ভুল দেখিয়ে গেল বিদেশে ভারতের পরপর ন’টা ওয়ান ডে। যেটা আর পাঁচ জনের মতো বোধহয় ধোনি নিজেও এখন বুঝতে পারছে।