আইপিএলের সপ্তম সংস্করণে এখনও পর্যন্ত একটাই ম্যাচ সুপার ওভারে গড়িয়েছে। যেখানে প্রবলতম চাপের মুখে মাথাটা বরফ ঠান্ডা রেখে শেষ বলে দু’রান নিয়ে নাইটদের মুঠো থেকে রাজস্থান রয়্যালসের জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। আবু ধাবির সেই ম্যাচের নায়ক স্টিভ স্মিথ অবশ্য নিজেকে নায়ক ভাবতে নারাজ। বরং বলছেন, “চাপের মুহূর্তে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ থেকেই তো আমরা ক্রিকেটটা খেলি। এই মুহূর্তগুলোয় নিজের সম্পর্কে আর নিজের খেলা সম্পর্কে নতুন কিছু শেখা যায়।”
আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালস অলরাউন্ডার স্মিথের চার নম্বর দল। আগে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে খেলেছেন। আইপিএল থেকে বাতিল হয়ে যাওয়ার আগে খেলেছেন কোচি টাস্কার্স এবং পুণে ওয়ারিয়র্সের হয়েও। তবে অস্ট্রেলীয় তরুণ তুর্কি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত রাহুল দ্রাবিড়দের ক্রিকেট-দর্শনে।
মুগ্ধ স্মিথ বলছিলেন, “রাহুল দ্রাবিড়ের মতো এক জন পাশে থাকলে ফোকাসটাই অন্য রকম হয়ে যায়। রাহুল আর প্যাডি আপটনের উপস্থিতি আমাদের গোটা দলে একটা অসাধারণ আত্মবিশ্বাস আর একাগ্রতা এনে দিয়েছে।” গত মরসুমে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে দলের কয়েক জন ক্রিকেটারের নাম জড়ানো সত্ত্বেও রাজস্থানের ক্রিকেট সংস্কৃতি দারুণ মনে ধরেছে স্মিথের। বলছিলেন, “সবচেয়ে ভাল ব্যাপর হল এই ফ্র্যাঞ্চাইজি একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চায়। জেতা বা হারার উপর জোর নয়, বরং কী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেলে লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারব, জোর দেওয়া হয় তাতে। আমরা জানি, প্রাথমিক ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক করতে পারলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিতে মাঠ ছাড়া যাবে।”
“সবচেয়ে ভাল ব্যাপর হল এই ফ্র্যাঞ্চাইজি একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চায়। জেতা বা হারার উপর জোর নয়,
বরং কী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেলে লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারব, জোর দেওয়া হয় তাতে। আমরা জানি,
প্রাথমিক ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক করতে পারলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিতে মাঠ ছাড়া যাবে।” —স্টিভ স্মিথ।
ব্যাট হাতে দলকে জিতিয়েছেন। কিন্তু ইদানীং বোলিংটা তেমন হচ্ছে না। সে কথা উঠতেই বললেন, “আমি কিন্তু আদতে ব্যাটসম্যান যে অল্পস্বল্প বোলিংটা পারত। তবে প্রথমের দিকে বোলিংয়ের জন্যই সুযোগগুলো এসেছিল। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ব্যাটিংয়েই জোর দিচ্ছি। বোলিংটা আপাতত ব্যাক-ফুটে রাখা আছে।”
তবে ব্যাটে বা বলে নয়, স্মিথ বিশ্বসেরা হতে চান ফিল্ডিংয়ে!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অসাধারণ কিছু ক্যাচ নেওয়ার সুবাদে ফিল্ডার হিসাবে বেশ নামডাক স্মিথের। আইপিএলের চলতি মরসুমেই চেন্নাই বনাম রাজস্থান ম্যাচে পিছনের দিকে অনেকটা দৌড়ে চোখ ধাঁধানো ক্যাচে ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে ফিরিয়ে চর্চায় আছেন। অস্ট্রেলীয় জানাচ্ছেন, যে কোনও ফিল্ডিং পজিশনেই অসাধারণ হয়ে ওঠা তাঁর লক্ষ্য। স্মিথের কথায়, “টি-টোয়েন্টি বা এক দিনের ম্যাচে শুরুর দিকে আমাকে তিরিশ গজ বৃত্তে রেখে পরের দিকে বাউন্ডারিতে পাঠানো হয়। ফলে ক্যাচিংয়ের সঙ্গে দৌড়নো, ডাইভ দেওয়া নিয়ে খাটতে হয়।” টেস্ট ক্রিকেটে আবার স্লিপেই বেশি দাঁড়ান। বলছিলেন, “স্লিপ ফিল্ডিংয়ে একেবারে অন্য ধরনের প্রস্তুতি লাগে।” যখন যে ফরম্যাটে খেলেন, সেটার জন্য তৈরি থাকেন। স্মিথের কথায়, “মেনে নিচ্ছি, ভাল ফিল্ডার হিসাবে আমার গর্ব রয়েছে। আমি বিশ্বের সেরা ফিল্ডার হয়ে উঠতে চাই।”
ওয়াটসনের হ্যাটট্রিকেও হার রাজস্থানের
নিজস্ব প্রতিবেদন
ক্রিকেটের সবচেয়ে দীর্ঘায়িত বোলিং হ্যাটট্রিকটা কি আইপিএল-সাতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে ৩২ রানে হারা ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক শেন ওয়াটসন করলেন? বিপক্ষের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে উইকেট পেলেও অদ্ভুত ভাবে তার বারো ওভার পরে ফের বল করতে এসে পরপর দু’বলে আরও দু’উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করেন ওয়াটসন (৩-১৩)। ৩.৬ ওভারে শিকার শিখর ধবন। ১৬.১ ও ১৬.২ ওভারে শিকার যথাক্রমে মোয়েজেস এনরিকে ও কর্ণ শর্মা। কিন্তু প্রশ্ন থাকছে, যে বোলার ওভারের শেষ বলে উইকেট পায়, সে কোন যুক্তিতে মাঝে এতগুলো ওভার আক্রমণ থেকে সরে থাকে? তা-ও নিজে দলের অধিনায়ক হয়েও!
রাজস্থান-সানরাইজার্স ম্যাচের টস। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
ম্যাচে ওয়াটসনের দলের বোলিং-ব্যাটিং পারফরম্যান্সেরও যেন ততটাই ব্যবধান! হায়দরাবাদকে ২০ ওভারে ১৩৪-৯ স্কোরে (সর্বোচ্চ রান অধিনায়ক ধবনের ২০ বলে ৩৩) বেঁধে রেখেও রাজস্থান এক বল বাকি থাকতে মাত্র ১০২ রানে খতম। পরের দিকে শিশির ভেজা মোতেরার উইকেটে ডেল স্টেইনের (২-৩১) গতির থেকেও ভয়ঙ্কর দেখাল ভুবনেশ্বর কুমারের (৪-১৪) সুইংকে। হ্যাটট্রিককারী ওয়াটসন (১১) ব্যাট হাতে তাঁর দলের মতোই ব্যর্থ। যদিও ৮ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে রাজস্থান এখনও লিগ টেবিলে তিনে।