লাল কার্ডে ফুঁসছে গোয়া

জিকোর ঘুম কাড়ছে কৃত্রিম ঘাস

শহরের উত্তাল সমর্থন আর ভরা গ্যালারির মাদকতা যুবভারতীকে এমন এক ভুবনে নিয়ে চলে যায়, যেখানে স্কোর নিছকই একটা সংখ্যা। বুধসন্ধ্যার এ রকমই ঝলমলে পরিবেশে এফসি গোয়ার ব্রাজিলিয়ান কোচ জিকোর মন ভার! আইএসএল লিগ টেবলে ‘ফার্স্ট বয়’ না হতে পারার আফসোস?

Advertisement

প্রীতম সাহা ও তানিয়া রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১২
Share:

জিকোর উষ্মা। বুধবারের যুবভারতী। ইনসেটে সেই বিতর্কিত রেফারি। —নিজস্ব চিত্র

শহরের উত্তাল সমর্থন আর ভরা গ্যালারির মাদকতা যুবভারতীকে এমন এক ভুবনে নিয়ে চলে যায়, যেখানে স্কোর নিছকই একটা সংখ্যা। বুধসন্ধ্যার এ রকমই ঝলমলে পরিবেশে এফসি গোয়ার ব্রাজিলিয়ান কোচ জিকোর মন ভার!

Advertisement

আইএসএল লিগ টেবলে ‘ফার্স্ট বয়’ না হতে পারার আফসোস?

উঁহু, না। ব্রাজিলিয়ান কোচের মতে, এক নম্বর দলের বিচার ফাইনালে হয়। সেমিফাইনালে নয়।

Advertisement

নিশ্চিত জেতা ম্যাচেও আটলেটিকো দে কলকাতাকে না হারাতে পারার শোক?

না, সেটাও নয়। জিকোর মতে, প্রথম দলের ছ’জন ফুটবলার না খেললেও, তাঁর টিম এ দিন যে ফুটবল খেলেছে, তাতে হতাশার কোনও জায়গা নেই।

তা হলে গোয়ার হাসিখুশি-চনমনে কোচের মুখ গোমড়া কেন? জিকো অসন্তুষ্ট তাঁর দলের নিয়মিত পর্তুগিজ স্টপার ব্রুনো পিনহেইরোকে ‘অন্যায় ভাবে’ লাল কার্ড দেখানোয়। এমনকী এই ঘটনায় তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ যে, সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সোজাসাপ্টা একহাত নিলেন রেফারিকে। তাঁর কথায়, “পেনাল্টি ছিল কি না, সেটা আমি সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারিনি। তবে লাল কার্ড দেখানো কোনও ভাবেই উচিত ছিল না। ওটা লাল কার্ড তো দূরের কথা, হলুদ কার্ডও হয় না।”

সেমিফাইনালের আগে রক্ষণের অন্যতম ভরসা ব্রুনোকে না পাওয়ার ধাক্কা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। বিরক্ত জিকোকে তো এ-ও বলতে শোনা গেল, “ফিকরু দু-দু’বার ইচ্ছাকৃত ভাবে হাত দিয়ে বল নামাল। কিন্তু সেটা চোখে পড়ল না রেফারির। খুব দুর্ভাগ্যজনক।” কোচের সঙ্গে একমত গোয়ার ফুটবলাররাও। রবার্ট পিরেস বলছিলেন, “পেনাল্টি দেওয়া নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। সেটা সবাই দেখেছে। কিন্তু লাল কার্ড দেখানো একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত। সেমিফাইনালে ব্রুনোকে না পাওয়া আমাদের কাছে বড় ধাক্কা।”

আর যাঁকে কেন্দ্র করে এত বিতর্ক সেই ব্রুনো নিজে কী বলছেন? “গ্রুপ লিগের সব ক’টা ম্যাচ খেললাম। কিন্তু খারাপ লাগছে, রেফারির একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য প্রথম সেমিফাইনাল খেলতে পারব না। আমার সঙ্গে ফিকরুর কোনও টাচই লাগেনি।”

পেনাল্টি দেওয়া নিয়ে গোয়ার ফুটবলারদের বিরক্তি যে অস্বভাবিক কিছু নয়, সেটা কলকাতার ফুটবলারদের বডি-ল্যাঙ্গোয়েজেই পরিষ্কার। নাতো যেমন হাসতে হাসতে বলে গেলেন, “পেনাল্টি ছিল কি না, তা নিয়ে আমরা ভাবতে যাব কেন? আমরা গোল পেয়েছি। সেমিফাইনালে খেলব। এটাই গুরুত্বপূর্ণ।” মিক্সড জোনে তাঁর পাশ দিয়ে তখন বেরোচ্ছিলেন আটলেটিকোর স্ট্রাইকার আর্নাল। তিনি তো স্বীকারই করে নিলেন, “হয়তো ওটা পেনাল্টি ছিল না।”

তবে একা ব্রুনো নন, সেমিফাইনাল খেলতে নামার চার দিন আগে এফসি গোয়ার সবচেয়ে বড় চিন্তা যুবভারতীর কৃত্রিম ঘাসের মাঠ। এবং জিকো রবিবারের প্রথম সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে হাবাসের দলের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন মাঠকে। বুধবার তিনি বলছিলেন, “এই মাঠে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা যায় না। আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম, যদি রবিবারের ম্যাচটা অন্য কোথাও খেলা হত।” যুবভারতীর মাঠ নিয়ে সমালোচনায় মুখর সব টিমই। এমনকী, খোদ হোম টিমের কোচ হাবাসও চরম বিরক্ত। কিন্তু এখন যে যুবভারতী ছাড়া আর কোনও গতি নেই! আর তাই পিরেসও হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন, “এই মাঠে খেলা খুব সমস্যা। এখানে প্রথম লেগে আমরা যা-ই খেলি না কেন, গোয়ায় আমাদের মাঠে দেখে নেব।”

এফসি গোয়ার কোচ থেকে ফুটবলার, সবাই যেন ফুঁসছেন! লাল কার্ড দেখানোর ক্ষোভে। প্রথম সেমিফাইনালে ব্রুনোকে না পাওয়ার চরম হতাশায়।

রবিবারের প্রথম সেমিফাইনালে রাগ-অসন্তোষের এই লাভাস্রোত আটলেটিকোকে কতটা সমস্যায় ফেলতে পারে, সেটাই এখন দেখার!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement